🔥 কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০১৮ – ছাত্র রাজনীতির এক নবযুগের সূচনা
২০১৮ সাল। একটা বছর, যেটা বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে এক মোড় পরিবর্তনের সময় হয়ে দাঁড়ায়। আমরা যারা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজে কিংবা নতুন নতুন রাজনীতিতে চোখ রাখছি—তাদের চোখে যেন আগুন জ্বলে উঠেছিল। আর সেই আগুনের কেন্দ্রে ছিল “কোটা সংস্কার আন্দোলন”।
🎓 কী ছিল এই আন্দোলনের মূল দাবি?
বাংলাদেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিসিএসসহ সব নিয়োগ পরীক্ষায় শতকরা ৫৬ ভাগ কোটা ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটাই ছিল সবচেয়ে বড় – ৩০ শতাংশ। কিন্তু প্রশ্ন ছিল, এই কোটা ব্যবস্থায় যোগ্যদের জায়গা কোথায়?
বিশেষ করে যারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো করেও চাকরি পাচ্ছে না, তাদের ক্ষোভ ছিল প্রবল।আরো স্পষ্ট করে বললে শুধু তাদের নয়,তাদের বন্ধু বান্ধব, আত্নীয়-স্বজন,পাড়া প্রতিবেশী এবং তাদের পরিবারের ক্ষোভের সমষ্টি।
এই অবস্থায়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক প্ল্যাটফর্মে আসে—গঠন করে “কোটা সংস্কার আন্দোলন”।
📢 ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ’-এর উত্থান
এই আন্দোলনের ফেস হয়ে ওঠেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নুরুল হক নূর, রাশেদ খান, ফারুক হাসানসহ আরও অনেকে।
তাদের নেতৃত্বেই গড়ে ওঠে “ছাত্র অধিকার পরিষদ”—যেটা পরবর্তী সময়ে শুধু কোটা নয়, বহু অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
নূরের সেই বিখ্যাত স্লোগান আজও কানে বাজে:
"কোটা নয়, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ চাই!"
🧨 ৮ এপ্রিল ২০১৮ – ছাত্র আন্দোলনের বিস্ফোরণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে রাতভর আন্দোলন। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তখন উত্তাল।
পুলিশ, ছাত্রলীগের হামলা, এমনকি ছাত্রদের উপর রাতের অন্ধকারে নির্যাতন—সবই দেখা যায়।
কিন্তু এই দমন-পীড়ন আন্দোলন থামাতে পারেনি।
📅 ১১ জুলাই ২০১৮ – প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ঘোষণা দিলেন—"কোটা থাকবে না"।
সেই ঘোষণায় অনেক শিক্ষার্থী উল্লাস করলেও, পরে দেখা যায় পুরো ব্যবস্থাকে বাতিল না করে বরং কোটা ব্যবস্থা ‘স্থগিত’ রাখা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা একেবারে বাদ দেওয়া হয়নি।
ফলে আন্দোলন একপ্রকার অসম্পূর্ণ থেকেই যায়।
🧠 রাজনৈতিক প্রভাব
কোটা আন্দোলন ছাত্র রাজনীতিকে নতুন গতি দেয়।
স্বাধীনভাবে কথা বলা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো—এই চেতনা আবার ছাত্রদের মাঝে ফিরে আসে।
এই আন্দোলনের মাধ্যমেই ডাকসু নির্বাচনে নূরুল হক নূর ভিপি নির্বাচিত হন।
দীর্ঘদিন পর ছাত্রলীগ ছাড়া কেউ এই পদে জয়লাভ করে।
এ যেন ছাত্র সমাজের বিক্ষোভেরই প্রতিফলন।
🔥 নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ২০১৮ – ছাত্রজনতার আরেকটি ঐতিহাসিক জাগরণ
২০১৮ সাল। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ। ঢাকার বিমানবন্দর রোডে দুই শিক্ষার্থী (দিয়া ও রাজিব) একটি চলন্ত বাসের চাপায় নিহত হন।
এই ঘটনা ছিল একটি ট্রিগার, যা পুরো দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
যে বয়সে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববে, বইয়ের পাতায় চোখ রাখবে, ঠিক তখনই তারা হাতে তুলে নেয় প্ল্যাকার্ড আর ট্রাফিক কন।
✊ রাস্তা দখল করে রাজপথে ছাত্ররা
মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ছড়িয়ে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবিগুলো ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক ও মানবিক:
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা
অযোগ্য চালকদের লাইসেন্স বাতিল
বাস চালকদের প্রতিযোগিতা নিরুৎসাহিত করা
দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা
🚧 আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য
এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল এর নেতৃত্বহীনতা।
এখানে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না, কোনো কেন্দ্রীয় কমিটি ছিল না—ছিল শুধু ক্ষুব্ধ, আশাহত, সচেতন এক ঝাঁক কিশোর-কিশোরী।
তারা নিজেরাই রাস্তা বন্ধ করে, যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা করত, ট্রাফিক আইন বুঝত এবং পালনে বাধ্য করত।
একদিকে তারা প্রশাসনের চোখ রাঙানিকে ভয় পায়নি, অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষ তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে।
📵 সরকারি দমন-পীড়ন ও গুজব
আন্দোলনের অগ্রগতি দেখে সরকার প্রথমে নরম অবস্থান নেয়। কিন্তু দ্রুতই আওয়ামী লীগ সরকার কঠোর হয়।
তখনই শুরু হয় ছাত্রদের উপর হামলা, গুজব, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা—এমনকি সাংবাদিকদের উপরও হামলার খবর আসে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় যেন ছাত্রদের আন্দোলনের চরিত্র নষ্ট করা যায়।
বিশেষভাবে স্মরণীয়: সেই সময় ছাত্রলীগ ও সরকারের বিভিন্ন দালালদের সহিংস ভূমিকা। তাদের হাতে সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, এমনকি সাধারণ নাগরিকও নিগৃহীত হন।
💻 ডিজিটাল যুদ্ধ ও “আমি কই” ট্রেন্ড
আন্দোলন দমাতে সরকার ইন্টারনেট স্লো করে দেয়।
অনেকেই নিখোঁজ হয়ে যায়, অনেককেই রাতের আঁধারে তুলে নেওয়া হয়।
এমন সময়ে ফেসবুক-টুইটারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে একটা বাক্য: "আমি কই?"
ছাত্রদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে হাজারো মানুষ এই বাক্যে সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে দেয়।
🎓 ভবিষ্যতের রাজনীতির ইঙ্গিত
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ছিল ছাত্র রাজনীতির দ্বিতীয় নবজাগরণ।
এটি দেখিয়ে দেয়, ছাত্র সমাজ চুপ করে থাকবে না।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুধু নিরাপদ সড়কের দাবি নয়—এটি ছিল অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব।
🔥 কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তী সময় (২০১৮-২০১৯) – প্রতিরোধ, প্রতিশোধ ও প্রতিচিন্তার কাল
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন শুধু একটি দাবি আদায়ের আন্দোলন ছিল না—এটি ছিল বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে এক বৈপ্লবিক বাঁক। তবে সেই আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফলাফল ও এরপরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ছিল আরও গভীর ও বহুমাত্রিক।
🔥 দমন-পীড়নের ভয়াবহতা
আন্দোলন সফলভাবে সংগঠিত হলেও এর পরিণতিতে সরকার যে রকমের দমন-পীড়ন চালায়, তা ছিল নজিরবিহীন। ছাত্রদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার, এমনকি শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের নিচে জড়ো হওয়া ছাত্রদের ওপর যেভাবে লাঠিচার্জ, গ্রেপ্তার ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
📚 আন্দোলনের ফলাফল
২০১৮ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ঘোষণা দেন—সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা তুলে দেবে। যদিও পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কিছু ব্যাখ্যা দিয়ে পুনর্বিন্যাস করা হয়।
কিন্তু এটি কি আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় ছিল?
না। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে প্রকৃত অর্থে একটি পরিস্কার নীতিমালা দেওয়া হয়নি। বরং ‘কোটা বাতিল’ নাম দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় সুনির্দিষ্ট কিছু ছিল না।
🧠 ছাত্রসমাজে হতাশা
২০১৯ সালে আন্দোলনের নেতারা ধীরে ধীরে নিশ্চুপ হয়ে যেতে থাকেন। কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যান, কেউ দেশ ছাড়েন। ছাত্র সমাজের মধ্যে এক ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন জাগে—
“আমরা কি সত্যিই জিতেছি?”
“নাকি আমাদের প্রতারিত করা হয়েছে?”
এই হতাশার মধ্য দিয়েই পরবর্তী ধাক্কা আসে—ঢাবি ছাত্র ছাত্রীর ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন, বুয়েটের আবরার হত্যার পর ছাত্রবিক্ষোভ, এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সচেতনতা।
২০১৮-১৯ সালের এই সময়কাল ছিল ভবিষ্যতের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতির সময়। কোটা সংস্কার আন্দোলন যেন ছিল এক বীজ, যা সময়ের সাথে রূপ নেয় আরও বৃহৎ আন্দোলনের রূপে—যার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখতে পাই ২০২০-২৫ পর্যন্ত বিভিন্ন দফায়।
🔥 বুয়েট ও আবরার হত্যাকাণ্ড — রাষ্ট্রের মুখোশ উন্মোচন
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর ছাত্রসমাজ যতটা আশাহত ও আঘাতপ্রাপ্ত ছিল, ঠিক ততটাই বিস্ফোরক হয়ে উঠেছিল ২০১৯ সালের আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে। এটি ছিল শুধুমাত্র একটি হত্যা নয় — বরং তা হয়ে উঠেছিল রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও দলীয় দানবীয় রাজনীতির প্রতীক।
📍 আবরার হত্যাকাণ্ড: যে রাতে বুয়েট কেঁপে উঠেছিল
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতা। তাদের অভিযোগ ছিল — আবরার ফেসবুকে ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেছে। শুধু মতপ্রকাশের দায়ে প্রাণ দিতে হয় একজন প্রতিভাবান শিক্ষার্থীকে।
পরদিন সকালেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মরদেহের ছবি, হলের সিসিটিভি ফুটেজ এবং বন্ধুদের বিবরণ ভাইরাল হয়। পুরো জাতি স্তব্ধ হয়ে যায়।
🔥 ছাত্রসমাজের জাগরণ
সেই ঘটনার পর বুয়েট সহ বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়ে ওঠে। ছাত্রছাত্রীরা ‘আমিও আবরার’, ‘হলে হলে আবরার’, ‘সিনিয়র মানেই খুনি নয়’—এমন সব স্লোগানে রাজপথ দখল করে নেয়।
প্রথমবারের মতো ছাত্রসমাজ দলীয় রং ছুঁড়ে ফেলে মানবতা ও নিরাপত্তার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়।
এই আন্দোলনে কেউ আর ছাত্রলীগ-বিএনপি করে কি না তা mattered না।
🏛️ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকায় হতাশা
বুয়েট প্রশাসন প্রথমে এ ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু গণমাধ্যম, শিক্ষার্থীদের লাগাতার বিক্ষোভ এবং দেশের সর্বত্র ক্ষোভের জেরে প্রশাসনকে নতি স্বীকার করতে হয়। ছাত্রলীগের ২৫ জনকে বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়:
> “এই রক্তে রঞ্জিত হলরুম কে তৈরি করেছিল?”
“এতদিন যে সিস্টেম ছাত্রলীগকে রক্ষা করছিল—তা কি ভেঙে পড়বে?”
🔎 রাষ্ট্রীয় চুপচাপ উৎসাহ?
বুয়েটের আন্দোলন ভিন্নধর্মী ছিল। সেখানে ব্যানার ছিল না, মঞ্চ ছিল না, দলীয় পরিচয় ছিল না। রাষ্ট্রীয় দলীয় ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে এটি ছিল এক নীরব বিদ্রোহ।
সরকার চুপ ছিল। আওয়ামী লীগ কিছু নেতারা বলেছিল—“এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।”
কিন্তু আবরার হত্যাই ছিল ২০১৮-২৫ আন্দোলনের আগুনে নতুন বারুদের মতো।
🎯 রাজনীতির জের: ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রশ্নবিদ্ধ
আবরার তার মৃত্যুর আগে ফেসবুকে লিখেছিল—“বাংলাদেশ ভারতের কাছে জল, বন্দর, ট্রানজিট, সব দিয়েছে; কিন্তু ভারত বাংলাদেশকে কী দিয়েছে?”
তার এই বক্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘ভারতঘেঁষা’ নীতির বিরুদ্ধে বড় প্রশ্ন তোলে।
এই পোস্টেই হয়তো তার মৃত্যুদণ্ড লেখা হয়ে গিয়েছিল।
আবরার হত্যা ছিল একটি পরিবর্তনের সূচনা, যা স্পষ্ট করে দিল—
> “ছাত্ররাজনীতির নামে সহিংসতা, জোর-জুলুম আর মানা হবে না।”
ছাত্রসমাজ বুঝতে শুরু করেছিল, রাষ্ট্র ও রাজনীতি এক ধরনের নিঃশব্দ ফ্যাসিবাদের দিকে যাচ্ছে। আর তাদের কণ্ঠরোধ করতে পারবে না কোনো 'হল কমিটি' বা ‘রাজনৈতিক প্রভু’।
🔥 আন্দোলনের নতুন জাগরণ — ধর্ষণ বিরোধী গণবিক্ষোভ ও সাইবার প্রতিরোধ (২০২০-২১)
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যার মতো ঘটনা ছাত্রসমাজকে একের পর এক নাড়া দিয়েছে।
তবে ২০২০ সালে ঘটে এমন একটি ঘটনা, যা সমগ্র বাংলাদেশকেই আলোড়িত করে তোলে — সিলেট এমসি কলেজ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ।
এটি ছিল ছাত্র ও তরুণ সমাজের এক আবেগতাড়িত, বিস্ফোরক ও ডিজিটাল প্রতিরোধের যুগে প্রবেশের ইতিহাস।
📍 পটভূমি: ভয়ংকর সেই দিনগুলো
🔺 এমসি কলেজ, সিলেট (সেপ্টেম্বর ২০২০)
এক দম্পতিকে কলেজ চত্বরে আটকে রেখে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ-সম্পৃক্ত একটি চক্র।
🔺 নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ (অক্টোবর ২০২০)
এক নারীকে বিবস্ত্র করে পিটিয়ে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।
ভিডিও ভাইরাল হতেই দেশজুড়ে শিউরে ওঠে সবাই।
🚨 রাষ্ট্র ও প্রশাসনের নিরবতা
এই ঘটনায় প্রথম দিকে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন অবহেলা করে। ধর্ষণের শিকার নারীদের অভিযোগ নেয়া হয়নি।
শুরুতে ঘটনার গুরুত্ব বুঝেও নীরব থাকে সরকারি দল ও শীর্ষ নেতৃত্ব।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই বিষয়টি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
🧠 সাইবার যুদ্ধে জেগে ওঠে তরুণ সমাজ
ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব — সবখানে তরুণরা একত্রিত হতে থাকে।
হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করে:
#JusticeForMCCollegeRape
#NoakhaliRape
#HangRapists
#BangladeshAgainstRape
হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, খুলনা, জাহাঙ্গীরনগর— সব ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠে।
🔥 শাহবাগে গণজমায়েত ও আন্দোলনের রূপান্তর
শাহবাগ, ঢাকার প্রতিবাদের প্রাণকেন্দ্র আবারও আলোচনায় আসে।
“ধর্ষকের ফাঁসি চাই”, “ধর্ষণ রাজনীতি নয়, জাতির লজ্জা”, “রাষ্ট্র ধর্ষণকে প্রশ্রয় দিচ্ছে”— এমন সব প্ল্যাকার্ডে ভরে যায় রাজধানী।
এই সময় আন্দোলন কোন নির্দিষ্ট দলের ছায়াতলে ছিল না।
বরং এই আন্দোলন ছিল সকল রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে।
🔍 রাষ্ট্রের চাপ ও বিভ্রান্তি
সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনকারীদের অনেককে গ্রেফতার, ভয়ভীতি ও নজরদারির মুখে পড়তে হয়।
সরকারি ঘরানার মিডিয়া আন্দোলনকে ‘সরকার পতনের ষড়যন্ত্র’ বলে চিহ্নিত করে।
তবে এতে আন্দোলন আরো প্রসারিত হয় — অনলাইন এক্টিভিজম বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূল ধারায় প্রবেশ করে।
🎯 দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়।
যদিও অনেকে এটিকে আন্দোলনকে থামাতে সরকারের কৌশল হিসেবে দেখেন।
নারী অধিকার ও সহিংসতা বিরোধী সচেতনতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
তরুণ প্রজন্ম বুঝে ফেলে— তাদের অনলাইন কণ্ঠস্বরও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে বদলে দিতে পারে।
এই বিষয়গুলো আমাদের বুঝিয়ে দেয়
> বাংলাদেশের তরুণরা দলীয় রাজনীতির কাছে নয়, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ায়।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন কেবল অপরাধের প্রতিবাদ নয়, ছিল রাষ্ট্রীয় অপদার্থতা, দলীয় অপসাসনের বিরুদ্ধে এক ধরনের জাতিগত প্রতিরোধ।