Monetize your website traffic with yX Media

আব্বার জানাজায় দাঁড়িয়ে

এমনিতেই আব্বার জানাজা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তার উপর ভাইয়ার আসতে দেড়ী হওয়ায় অবস্থা আরও বেগতিক। ভাইয়া আসার পরেই তড়িঘড়ি করে জানাজায় দাড়িয়ে গেল। ঘটনার আর্কষিকতায় আমি হতভম্ব হয়েগেছি।নিজের বাবার জানাজা হলেও আমি সবার পিছনের কাতারে। যাইহোক আব্বার জানাজায় দাড়িয়ে ভাইয়া কাদো কাদো স্বরে সবার উদ্দেশ্যে বলছে,আমার বাবা আজ পৃথিবীতে নেই,সবার সাথে চলতে ফিরতে কারো মনে যদি কষ্ট দিয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা করে দিবেন,আর কারো কাছে যদি টাকা পয়সা নিয়ে থাকে তাহলে আমাকে জানাবেন যথাসাধ্য দেওয়ার চেষ্টা করব। বাবার শোকে  স্তব্ধ আমি ভাইয়ার কথাগুলো শুনছি আর আর কাঁদছি। আর মনে মনে ভাবছি ভাইয়া এতো ভালো হলো কবে থেকে। বাবা বেঁচে থাকতে ভাইয়া তখন আমাদের কোন খোঁজ খবর নেয়নি। তখন বাবার মৃত্যুর পরে ভাইয়ারে এমন পরিবর্তন আমাকে বিস্মিত করল। জানাজা শেষ করে রাতে বাড়ি ফিরেও ভাইয়ার কথাগুলো আমার কানে ঝনঝন করে বাঁজতে থাকলো। তাই রাতে ভাই আর হাত চেপে ধরে,বললাম ভাইয়া আব্বা তো অনেক ঋণ  মহাজন করে গেছে তুই কি একাই পারবি এসব শোধ করতে। তখন ভাইয়া বলল নিজের বাবাই তো ঋণ মহাজন করে গেছে এসব তো আমাদেরই শোধ করতে হবে এখন তো তোর কোন অবলম্বন নাই তাই আমাকেই শোধ করতে হবে আমি চেষ্টা করবো সব কিছু শোধ করে দিতে তুই কোন চিন্তা করিস না। ভাইয়ার কথায় শোকে স্তব্ধ আমি মনোবল ফিরে পেলাম। কারণ আমি জানি বাবার অনেক ঋণ মহাজন আছে অনেকে বাবার কাছে টাকা পয়সা পাবে। আব্বা অনেকের কাছ থেকে টাকা পয়সা পাবে। আব্বার সব কাজে আমি পাশে ছিলাম তাই আমি জানি কে কত টাকা পাবে আর কে কি কি পাবে। সেদিন সারারাত ধরে চিন্তা করলাম ভাইয়া যদি না থাকতো তাহলে আব্বার সমস্ত ঋণ আমাকেই পরিশোধ করতে হতো। এমনিতেই তখন আমার করার মত কিছুই ছিল না এমনকি নিজের পেটের ভাতটুকু  কামাই করতে পারিনি। 


দুইদিন পর থেকেই অনেকে আসতে লাগলো যারা আব্বার কাছ থেকে টাকা পয়সা পাবে। তারা সবাই আমার কাছে আসতো কারণ তারা শুধু আমাকেই ভালোভাবে চিনতো আমি সবসময় বাবার সাথে থাকার কারণেই তারা আমাকে চিনত। তবে এমন অনেক লোক আছে যারা আব্বার কাছে টাকা পাবে কিন্তু আমাকে এসে কেউ জানায়নি তবে সেটা আমি জানতাম। আমার এমন অনেক লোক ছিল যাদের কাছে আব্বা টাকা পাইতো তাদের দুই একজন ছাড়া আর কেউই এসে বলেনি যে আমার কাছে তোমার আব্বা টাকা পাবে। আমি সবকিছু জানার পরেও কারো কাছ থেকে টাকা চাইনি অনেকেই নিজের ইচ্ছায় দিতে চাইলেও আমি তাদের কাছ থেকে কোন টাকা পয়সাই নেই। 



এভাবে সব পাওনাদারের একটা লিস্ট করতে থাকলাম। আব্বার মৃত্যুর ৪০ দিন পর সেই লিস্টটি ভাইয়ার হাতে ধরিয়ে দিলাম। সেদিন ভাইয়া কোন কিছু না বললেও। আব্বার মৃত্যুর এক বছর পরে। যেদিন আমাকে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে যাওয়া হয়। সেদিনও ভাইয়া আমাকে জানালো সে একটাকাও  দিতে পারবে না। সেই সাথে ভাইয়া আমাকে আরো জানিয়ে দিল আমি আব্বার কোন কিছু খাইনি আব্বা যদি কোনদিন কোন ধার দেনা করে থাকে সেটা শুধু তোদের জন্যই করেছে আর তোরাই শুধু খেয়েছিস আমার জন্য কোন কিছু করেনি আমি এসব কোন কিছুই শোধ করতে পারবো না! এমনটা হবে সেটা আমি আগেই জানতাম। সেদিন শুধুমাত্র সবার চোখে ভালো হওয়ার জন্যই এসব কথা বলেছিল। তবে এতে আমি কোন কিছু মনে করিনি। 
এদিন থেকে ভাইয়ার কাছে কোন কিছু না দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পড়াশোনার মাঝখানে এমন একটা সময় এসেছিল যখন আবার পকেটে দুই বেলা ভাত খাওয়ার টাকা ছিল না। তখন বাধ্য হয়ে ভাইয়ার কাছে দুই কেজি চাউল কিনে চেয়েছিলাম, সেদিনও আমি ব্যর্থ হয়েছিলাম। তবে ভেঙ্গে পরিনি চেষ্টা করেছি আজকে আমি বেঁচে আছি। এর মাঝে একজন শুধু আব্বার কাছে ৫০০ টাকা পেতো। সে কয়েকবার ভাইয়াকে তাগিদ দিলেও ভাইয়া সেই টাকা  দিতে অস্বীকৃতি জানায়।এভাবে কয়েকদিন চলার পরে বাধ্য হয়ে তাকে বলেছি সে ৫০০ টাকা আমি দেবো। এরপর থেকে পাওনাদার আমার কাছে ধন্যা  দিতেই থাকে কিন্তু আমার কাছে সে সময় সেই টাকাটাই ছিল না। যাইহোক অনেক কষ্টের পর আমি সেই টাকাটা পরিশোধ করেছিলাম। এখন পর্যন্ত অন্যান্য পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করতে না পারলেও এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি আব্বার পাওনাদার গুলো পরিশোধ করতে। 
এভাবে হাজার কষ্ট করার পরে একটুখানি শান্তির দেখা পেতে যাচ্ছিলাম। আমার পক্ষ থেকে আমি ভাইয়াকে কখনো ঠকানোর চিন্তাই মাথায় আনিনি। কিন্তু ভাইয়া সব সময় আমাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। আমার সকল কাজে সে সব সময় বাধার সৃষ্টি করেছে। যদিও তার উপকারে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি,কিন্তু সে সব সময় আমাকে অসহযোগিতায় করেছে বারবার। যে ব্যাংক থেকে আমার ব্যবসা দেখিয়ে তাকে লোন পাইয়ে  দিয়েছি,আমার ব্যবসা যখন খারাপ চলছিল তখন সেই ভাইয়াকে সেই ব্যাংকে সুপারিশ করতে বলার পরেও সে আমার  জন্য ভেটো দিয়েছিল! তবে ভাইয়া আর একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম,আমি নষ্ট হই ধ্বংস হই বিফলে যাই আমার সবকিছুই বিলিন হয়ে যাক আমি ফকির হই এ সব বিষয়ে ভাইয়া সাহায্য না চাইলেও সে সব সময় আমার পাশেই ছিল। 

আপনার মূল্যবান মতামত প্রদান করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন
Monetize your website traffic with yX Media