ব্যর্থ রাষ্ট্র

জনগণের জান মালের নিরাপত্তা বিধান  করার রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম কাজ। মানুষের জানমালয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত  করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিগুলোর  সঠিক ব্যবহার  রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব।আর এসব রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো পালন করার দায়িত্ব যাদের দেওয়া হয় তার নাম সরকার। একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর দেশের জনগণ রাষ্ট্রের সমস্ত কর্মকান্ডগুলো পরিচালনার জন্য একদল লোক বেছে নেয়  যার নাম সরকার। এই সরকার রাষ্ট্রের হয়ে  সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। রাষ্ট্র যখন তার উপর অর্পিত  দায়িত্বগুলো একে একে পালন করতে ব্যর্থ হয় তখন  সে রাষ্ট্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত  হয়ে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। 
বর্তমানে বাংলাদেশের যে অবস্থা,ব্যক্তিগত অভিমত  হিসেবে আমার কাছে বাংলাদেশটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিণত হচ্ছে।যদিও সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও আস্থা আছে, তারপরও কিছু কিছু বিষয় দৃষ্টিকুট অযৌক্তিক হওয়ায় রাষ্ট্রেরপ্রতি বিরূপ মনোভাব  তৈরির অন্যতম কারণ।

অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আবির্ভাব হলেও ক্রমে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক হয়ে পড়ছে। নির্বাচন আসলেই সাম্প্রদায়িকতা বিষবাষ্পের মত রকেট গতিতে সমগ্র বাংলাদেশের ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলমান। এ সময়ে এসেও বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সহিংসতা কমেনি বরং দিন দিন হয়তো বৃদ্ধি পাচ্ছে।যদিও পূর্বে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন তথাকথিত নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে, আর এসব নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা কম ছিল। হতে পারে সহিংসতা না হতে হতে এমন পর্যায়ে চলে গেছে একটু সহিংসতা  হলেই সেটাকে বড় মনে হয়।আজ ৭ ই জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন পূর্ব কয়টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কোন সহিংসতা ঘটেনি। তবে এই যে দুই একটি ঘটনা ঘটছে তা সবারমতো আমার মনেও গভীরভাবে দাগ কেটে গেছে। 
পূর্বের কয়েকটি নির্বাচনে তেমন কোনো প্রতিদ্বিতা ছাড়াই বাংলাদেশের নির্বাচন হয়ে আসছে। বলা যায় এককভাবে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে।  এসব নির্বাচনে বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের বারবার অনুরোধের পরেও এই সাজানো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ না করেই, সংবিধানের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। আর বরাবরের মতোই বিএনপি এই হঠকারিতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। স্বভাবতই এ দুলে দু দলের মধ্যে সব সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ লেগেই থাকে।কোন পক্ষেই কোনো পক্ষকে ছাড় দিতে চায় না।এইদিকে আওয়ামী লীগ জান প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে  নির্বাচনী টাকে গ্রহণযোগ্য এবং সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করার,অপরদিকে বিএনপি এবং সম্মাননা রাজনৈতিক দলগুলো চাচ্ছে যেকোন ভাবে নির্বাচনটাকে বানচাল করা। নিজ নিজ অবস্থান থেকে দু দলই চেষ্টা করছি নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার।তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হিং কোন কাজ নেই যে তারা করছে না,এমনকি মানুষ হত্যার মতো কাজও তারা করতে পিছুপা হচ্ছে না।( যদিও এসব সহিংসতা কারা করছে তা দিয়ে এখনো অনিশ্চিত)।  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেই আওয়ামী লীগ কিছুটা সহনশীল হলেও তফসিল ঘোষণার পরেই বিএনপি আরো বেশি সহিংস হয়ে ওঠে। তবে বিএনপি এবার দেশের আর কোথাও সহিংসতা ঘটাতে না পারলেও বাংলাদেশ রেলওয়ের উপর প্রচন্ড মাত্রায় সহিংসতা করছে।রেল লাইন অচল  করে দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন বগিতে অগ্নি সংযোগ করার ঘটনাও ঘটেছে। এর আগে  মতিঝিলে ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা এবং সর্বশেষ পাঁচ ই জানুয়ারি ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস এ  অগ্নি সংযোগের ঘটনা অন্যতম।নির্বাচনের তফসিল  ঘোষণার পরপরই নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে রাষ্ট্র একুশ জোড়া  ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে।যে বিএনপিকে তোয়াক্কা না করে এককভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে রাষ্ট্র সেখানে কেন বিএনপির ভয়ে ২১ জোড়া ট্রেন বন্ধ করতে হবে?রাষ্ট্র থেকে বিএনপি কি তবে এত শক্তিশালী?জনগনের জান মালের নিরাপত্তা বিধান করা যেখানে রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। সেখানে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যমকে নিরাপত্তাহীনতায় বন্ধ করতে হয়।তখন কি সে রাষ্ট্রকে সফল রাষ্ট্র বলা যায়?


বিশ্বাস করেন যেদিন গোপিবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়া হলো, আর যখন জানতে পারলাম এক লোক বের হতে পারলেও বের হয়নি ভিতরে তার বউ বাচ্চা আগুনে পুড়ে মারা গেছে। হাজার চেষ্টা করেও তাকে বাইরে বের করা যায়নি, সে শুধু বারবারই বলেছে ভিতরেও বউ বাচ্চা মারা গেছে আমি বেঁচে থেকে কি করব?!সেই রাতে ছটপট করেছি পরের দিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের কাজ থাকার পরেও এক মুহূর্তের জন্য দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি। আচ্ছা মানুষ এতটা নৃশংস হয় কিভাবে?এজন্যই কি দেশটা স্বাধীন করা হয়েছিল? 
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন