সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ চাই না

আমার মত  সদ্য পড়াশুনা শেষকরা  অনেক ছাত্র-ছাত্রী ভাই বোনেরা, অনেক দিন ধরেই কথা বলে চলেছেন। কখনো সমাবেশ, কখনো মানববন্ধন, কখনো অবস্থান ধর্মঘট করে তাঁরা সদাশয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কয়েক বছর ধরেই তাঁদের জমায়েত কখনো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, কখন শাহবাগ মোড়ে।১০ মার্চ তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে বাংলামোটর এলাকায় পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন। আন্দোলনরত মেয়েদের নির্যাতিত হওয়ার দৃশ্য আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি।যা কোনভাবেই কাম্যনয়।২৪ মার্চ আবার নতুন করে কোথাও কথাও আন্দোলন শুরু হয়।




বর্তমান বিধি অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে তা ৩২। অর্থাৎ সাধারণ ক্ষেত্রে বয়স ৩০ বছর পার হলে আর কেউ সরকারি চাকরির জন্য দরখাস্ত করতে পারবেন না। তাঁকে দৌড়াতে হবে বেসরকারি চাকরি, ব্যবসা বা অন্য কোনো উপায়ে রুটিরুজি জোগাড়ের দিকে।
এই তরুণেরা চান, বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩০–এর জায়গায় ৩৫ করা হোক। কারণ, সেশনজটের বেড়া ডিঙিয়ে তাঁদের স্নাতক/স্নাতকোত্তর শেষ করতেই বয়স ২৭ বা ২৮ হয়ে যায়। তাই চাকরিতে প্রবেশের প্রস্তুতি নিতে নিতেই বয়স ৩০-এর কাছাকাছি এসে পড়ে।
  
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা ৩৫ করার দাবি যৌক্তিক মনেহলেও এ দাবি একটি আত্মঘাতী দাবি!আমার কাছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি আত্মঘাতী ছাড়া আর কিছুই না?



এবার
আমার সপেক্ষে কিছু যুক্তি তুলে ধরি,আমার এক বড় ভাই আছেন যিনি বয়সসীমার শেষের আগের বছরে সরকারি চাকরি পেয়েছেন।যদিও তার ইচ্ছা ছিল সরকারি চাকরি পাওয়ার ৫ বছর পর বিয়ে করবে,কিন্তু বয়সের ভারে পরিবারের জোড়াজুরিতে চাকরির পরের বছরেই বিয়ে করেছেন।আমার এক চাচা আছেন যিনি কিনা সরকারি চাকরি না পাওয়ার হতাশায় এখন পর্যন্ত বিয়েই করেন নি।আমার পরিচিত এক শিক্ষক আছেন যিনি কিনা সদ্য রেজিষ্টার প্রাইমারী থেকে সরকারি প্রাইমারী হওয়া স্কুলের শিক্ষক,তিনিও সরকারি চাকরির দোহাই দিয়ে বিয়েই করেন নি।তবে তার চাকরি সরকারি হয়েছে, তবে তা চাকরি হতে অব্যাহতির ৬ মাস আগে।এখন কি তার বিয়ে করা সমিচিন?আমার কয়েক বছর আগে স্নাতক শেষ করা এক ভাই সরকারি চাকরি না পেয়ে,৩৫ বছর বয়সে নিজের অমতে পরিবারের কারনে বিয়ে করেছে।কিছুদিন পর জানেতে পারি, ঐ ভাই নাকি শাররীকভাবে অক্ষম তাই সেই ভাবি তাকে ছেড়ে চলে গেছে।সে দিন এরকম এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হল,তিনি ও সরকারি চাকরির আশায় বসে আছেন, কথায় কথায় জানতে চাইলাম ভাই বিয়ে কবে করছেন?জবাবে তিনি যা বল্লেন তা শুনে চোখঁ কপালে উঠার মত তিনি বল্লেন,বিয়ে করার মত তার নাকি কোন ফিলিংসেই নাই!সেদিন একজন গল্প করছে,তিনিও স্নাতকোত্তর সমাপ্ত করেছেন এবং সরকারি চাকরির পিছনে ছুটছেন।কিন্তু ব্যাটে বলে হচ্ছে না।উপায় না দেখে নিজের খরচ নিজে চালার জন্য টিউশনি করছেন।সেই সুবাদে টিউশনি করতে তিনি তার বাবার বন্ধুর বড় মেয়ে যে কিনা অষ্টম শ্রেণীতে পরে,তাকে পড়াতে হবে।ছাত্রীকে পড়াতে গিয়ে এক সময় আলাপ হয় ছাত্রীর মায়ের সাথে।এক সময় দৈর্ঘ্যশ্বাস ফেলে ছাত্রীর মা আক্ষেপ করে টিউটরকে বলে,দেখ বাবা তোমার আঙ্কেল বুড় বয়সে এসে বিয়ে করেছে, সে কারনেই তোমার বাবার বন্ধু হয়েও তার মেয়ে কেবল ক্লাস এইটে পরে অথচ তুমি কবেই পড়াশুনা শেষকরে ফেলেছো।কবে যে আমাদের মেয়ে বড় হবে!তার আগেই মনেহয় আমার মেয়ে পিতৃহারা আর আমি স্বামীহারা হয়ে যাব।



এবার নিজের কথায় আসি,ইচ্ছা আছে,সরকারি চাকরি করার কিন্তু সেটা যদি একান্তই না হয়।সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স শেষ হলেই,কোন একটা কম্পানিতে ঢুকে পরবো।ব্যবসা তো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।এর পরের বছরেই বিয়ে করে ঘরসংসার করতে হবে।এ কথা শুধু আমার নয়,এ কথা লক্ষ লক্ষ চাকরি প্রার্থীর।অথ্যাৎ বিয়ে করতে সময় নিচ্ছি ৩২ বছর।যখানে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বলেছে ২৫-৩০ বয়সের মধ্য বিয়ে করা উত্তম,সেখানে ৩২ বছর সময় নিচ্ছি।আর যদি সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করাহয়।তখন শুধু আমি না আমার মত সবারই পরিকল্পনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তন হবে।যেহেতু সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স আছে,সেহেতু ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত চেষ্টা করি।তারপর না হয় কোন একটা কম্পানিতে ঢুকে পরে বিয়েথা করা যাবে।অর্থাৎ সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করা হলে,একজন ছেলের বিয়ে করতে সময় লাগবে ৩৭-৪০ বছর?এই বয়সে এসে অনেকের সংসার করার মত মানসিকতা থাকেনা হয়তো ঐ বড় ভাইয়ের মত কোন ফিলিংসেই আসবেনা,হয়তো বিয়ে করার পর বুঝা যাবে সে শাররীকভাবে অক্ষম,তাই স্ত্রী চলে যাবে,নতুবা ঐ ছাত্রীর মায়ের মত আশংকা থেকেই যাবে।জরিপ করলে হয়তো দেখা যাবে,বাংলাদেশে অল্প বয়সে মেয়েরা বিধবা হচ্ছে,অনেক সন্তান নাবালোক থাকতেই পিতা হারাচ্ছেন।সেখানে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করলে এই সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বাড়তেই থাকবে।৫০-১০০ বছর গিয়ে তা মহামারী আকার ধারন করবে।তাই আমার কাছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি করা আত্মঘাতী দাবি ছাড়া আর কিছুই না।যা দেশ,পরিবার,সংসার,সমাজের জন্য অভিশাপ বয়ে আনবে।তাই আমি চাইনা সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করা হইক।



তাছাড়া সরকারি চাকরি যে করতেই হবে বা পেতেই হবে তার কোন মানে আছে?একটা সরকারের হাতে গোনা কয়েকটা লোকলাগে, সেখানে সকলের সরকারি আশাকরাটাও বোকামি ছাড়া কিছুই না।অনেক সুযোগ সুবিধা আর আরাম আয়েশের জন্য সরকারি চাকরি দরকার।কিন্তু কেউ বলতে পারেন কতজন সরকারি চাকরিজীবী,দেশ,সমাজের কল্যাণে কাজ করছেন বা তিনি নিজেই উন্নতির শীর্ষে অবস্থান করছেন?এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী,বেসরকারি চাকরিজীবীরাই সবচেয়ে বেশী এগিয়ে।তাই বলতে চাই দৃষ্টিভঙ্গি বদলান,জীবনটা এমনিতেই বদলে যাবে।


4 تعليقات

আপনার মূল্যবান মতামত প্রদান করুন

  1. নতুন পাগলের আমদানি

    ردحذف
  2. টিক বলেছেন ভাই, জারা ভাল তারা ৩০ এর আগে পাবে, আর জারা ভাল না টারা ৪০ এও পাবেনা চাকুরি .....

    ردحذف
    الردود
    1. ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামত প্রদানের জন্য।পারলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

      حذف
إرسال تعليق
أحدث أقدم