কিছু মানুষ ভুল করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল

ছাত্র শিবিরের সংবাদ মাধ্যম ছাত্র সংবাদে আহমেদ আফগানী নামের একজন লেখক বলেছেন,"সে সময়ের অনেক মুসলিম না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলো। এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিলো।"

আমি তার এই লেখাকে প্রত্যাখ্যান করছি।

কিন্তু তিনি একজন লেখক তার লেখার দায় তার আছে।এই লেখার জন্য তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন।তবে তিনি দৃঢ় ভাবে তার লেখা সংশোধন করতে অস্বীকার করেছেন।এখনো তার বক্তব্যে অনর আছেন। একজন লেখক গবেষক হিসেবে এটা তার ভালো দিক।আমাদের তার পাশে থাকা দরকার।

তবে আমি মনে করি, আহমেদ আফগানী একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কাজ করেছেন।নিদিষ্ট করে তিনি ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অতিরিক্ত ও অতিরঞ্জিত কথা বলার চেষ্টা করেছেন।
সে সময় যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তারা সবাই বুকে বাংলাদেশ নাম ধারণ করেই যুদ্ধ করেছিলেন।তারা অন্য কোন ম্যান্ডেট নিয়ে নয় বরং অখণ্ড বাংলার জন্য জীবন বাজি ধরেছিলেন। বাংলার হিন্দু-মুসলিম,বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষজন মিলে এই বাংলা স্বাধীন করেছে।
তবে স্বাধীনতা পরবর্তীতে এসে অনেকে কাঙ্খিত স্বাধীনতা না পেয়ে হতাশ হয়ে পরেন।তাদের কাছে স্বাধীনতার সংজ্ঞাই পরিবর্তন হয়েছে স্বীকার করতেই হবে।
স্বাধীনতার এতো বছর পরেও বাংলাদেশ প্রকৃত স্বাধীন হতে পারেনি।যারাই রাষ্ট্রের ক্ষমতায় এসেছেন তারাই দেশের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন।এসব দেখতে দেখতে আমি নিজেও বিরক্ত,এতোটাই বিরক্ত যে, বাংলাদেশে যদি আবার যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে আমি সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবো না!এরকম অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা প্রকৃত স্বাধীনতা না পেয়ে আক্ষেপ করে বলতেই পারে,"সে সময় তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাই ভুল ছিলো,তারা না বুঝে সে সময় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন"।আহমেদ আফগানী কিছু "মানুষের" যায়গায় কিছু 'মুসলিম' বলে চালিয়ে দিয়েছেন।বিষটা একটু ক্লিয়ার করি,২৪ এর স্বাধীনতার পর অনেকেই বলছে 'আগেই ভাল ছিলাম'।অনেকে আবার বলছে, আসিফ, নাহিদ,হাসনাত,সার্ভিস আলমরা এক সময় ভুল স্বীকার করবে।এর কারন হলো, যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে হাসিনার পতন ঘটানো হলো।সে বৈষম্য এখনো বিদ্যমান।মেডিকেল ভর্তিতে কোটা বহাল থাকাটা একটা ঠিকঠাক উদাহরণ। এদিকে যারা জীবন দিলো পঙ্গুত্ববরণ করলো তারা কি পেল?তবে এখন করা এসব বলছে?যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত ছিলো তাদের কেউ কি এসব বলতে পারে?তাহলে আন্দাজ করুন কারা বলছে, আগেই ভালো ছিলাম,২৪ এর আন্দোলন ভুল ছিল।আজ যারা এসব বলছে তারা এবং আর যারা বলছে সে সময় না বুঝে মুক্তিযুদ্ধ জড়িয়ে পরেছিল তারা একই মানুষ।
এই বিষয়টি নিয়ে একটি টেলিভিশন টক শো তে শিবিরের বক্তব্য শুনেছি,যেখানে এই বিষয়টিকে তিনি ছোট্ট বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছন,এর জন্য তিনি ক্ষমা চায়নি বরং কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।তিনি আরো বলেন,তারা স্বাধীন মত প্রকাশে বিশ্বাসী,তাই তারা তা প্রকাশ করছে।তবে ভবিষ্যতে এসব বিষয় নিয়ে সতর্ক থাকার ইংগিত দিয়েছেন।শিবির যখন স্বাধীন মত প্রকাশে বিশ্বাসী, তখন কিছুদিন আগে,লেখক,ব্লগার,প্রকাশক,মসজিদের ইমাম,মাজারের খাদেম,হিন্দু পুরোহিত হত্যা নিয়ে তাদের অবস্থান পরিস্কার করতে অনুরোধ করছি।সেই সাথে স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য যারা হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বা হচ্ছেন তাদের বিষয়ে কিছু বলতে।
তবে এই লেখাটি যখন লিখছি ঠিক তখনি খবর আসলো, ছাত্র সংবাদের ডিসেম্বর সংখ্যার সকল অনলাইন ও প্রিন্ট কপি প্রত্যাহার করা হয়েছে।এজন্য শিবিরকে সাদুবাদ জানাই।তবুও একটা কথা থেকেই যায়,শিবির কি তাদের অতীত বা বর্তমান চরিত্র বদলাতে পারবে?মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ থেকে কি শিবির এবার মুক্তিযুদ্ধ পক্ষে হতে পারবে?



বিঃদ্রাঃ লেখাটি যেহেতু কষ্ট করে লিখেই ফেলেছি,তাই ছাত্র সংবাদের সকল অনলাইন ও প্রিন্ট কপি প্রত্যাহার করার পরেও প্রকাশ করছি, এ জন্য সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা চাইছি।(বিষয়টি কেউ ভিন্ন ভাবে প্রচার করবেন না)।

1 মন্তব্যসমূহ

আপনার মূল্যবান মতামত প্রদান করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন