গ্রামের নাম বাউলপুর। সবুজে ঘেরা, নিরীহ মানুষের বসতি। এখানে ভোট এলেই যেন হঠাৎ জেগে ওঠে জনপদ। পাকা রাস্তার প্রতিশ্রুতি, স্কুলের নতুন ভবন, বয়স্ক ভাতা, নারীদের কর্মসংস্থান— এতদিন যাদের খোঁজ কেউ রাখেনি, হঠাৎ যেন তারা হয়ে ওঠে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু।
এই গল্প সেই বাউলপুরেরই এক তরুণ, সাব্বিরকে নিয়ে। সাব্বির পড়াশোনা শেষ করে ফিরেছিল গ্রামে, স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবে। কিন্তু চাকরি মেলেনি। চোখের সামনে দেখেছে কীভাবে নেতাদের হাত ধরে অযোগ্যরা জায়গা করে নেয় স্কুলে, অফিসে।
একদিন গ্রামে এলো এলাকার বড় নেতা, রফিক সাহেব। আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন। সভা বসেছে হাইস্কুল মাঠে। বড় মঞ্চ, লাউডস্পিকার, গাঁয়ে গাঁয়ে পোস্টার। রফিক সাহেব বললেন,
“এই বাউলপুর আমার আত্মার জায়গা। আমি জয়ী হলে প্রথম কাজ—এই গ্রামে কলেজ বানাব। রাস্তাঘাট, পানির ব্যবস্থা, সব ঠিক করব।”
সাব্বির মিছিলের ভিড়ের মধ্যেই দাঁড়িয়ে ছিল। চোখে ছিল প্রশ্ন, মুখে নীরব প্রতিবাদ।
রাতেই তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নেয়—এবার আর ঠকে যাবে না। গঠন করল ‘সচেতন যুব ফোরাম’। কাজ করল গ্রামের মানুষদের সচেতন করতে। বলল, “প্রতিশ্রুতি শুনলেই বিশ্বাস নয়, হিসাব চাইতে হবে। আগের বার যা বলেছিলেন, তার কী হয়েছে?”
রফিক সাহেব বিরক্ত হলেন। একদিন রাতেই সাব্বিরের বাড়িতে কিছু ‘অচেনা লোক’ ঢুকে হুমকি দিয়ে গেল। বলল, “রাজনীতি সব জায়গার খেলা না। তুই যদি থামিস, ভালো। না হলে বিপদ তোরই।”
সাব্বির ভয় পায়নি। বরং গণমাধ্যমে তুলে ধরল ব্যাপারটা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে ঘটনার ভিডিও, ছবি। শহরের পত্রিকায় ছাপা হয়— “নির্বাচনের আগেই হুমকির রাজনীতি!”
চাপে পড়ে রফিক সাহেব এক বিবৃতি দেন, “এই কাজ আমার দলের কেউ করেনি। আমি নিন্দা জানাই।”
কিন্তু মানুষের মনে আর আগের মতো বিশ্বাস ফিরল না। নির্বাচনের দিন দেখা গেল, এক নতুন তরুণ প্রার্থী— যাকে সমর্থন দিয়েছে ‘সচেতন যুব ফোরাম’— সে-ই বিপুল ভোটে জিতে গেছে।
রফিক সাহেব হেরে গেলেন নিজের বানানো প্রতিশ্রুতির মুখোশেই।
সাব্বির সেদিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিল,
“রাজনীতি মানে মানুষকে ব্যবহার নয়, পাশে থাকা। আমাদের লড়াইটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে, শুধুই কোনো দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়।”