বাবার সম্পত্তি কেউ প্রতারণা করে লিখে নিলে আপনার করণীয় কী?

বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি যদি কেউ প্রতারণা করে লিখে নেয়, তাহলে কী করবেন? সম্পত্তি কি আদৌ ফেরত পাওয়া সম্ভব? এই প্রশ্ন অনেকেই করেন।— এই ধরনের প্রতারণা হলে আইনি দিক থেকে কী কী করণীয় রয়েছে এবং কোন পথে আপনি এগোতে পারেন।

বাবার সম্পত্তি কি ইচ্ছামতো কেউ নিতে পারে?
ইচ্ছামত নিতে পারে না, তবে বিভিন্ন কৌশলে অনেকে লিখে নেয় কাউকে ঠকাতে না হয় স্বার্থ হাসিল করতে।ইদানীং এই বিষয়গুলো অহরহ ঘটছে।আমার ছোট মামা যেমন, নানির কাছথেকে কৌশলে জমি লিখে নেয়,যখন নানির কিছু করার ছিলো না। পরে অবশ্য সালিশের মাধ্যমে ছোট মামা জমি ফিরত দিয়েছে।ছোট চাচাও দাদার কাছথেকে জমি লিখে নিয়েছিল,দাদা যখন অসুস্থ ছিলেন। 

প্রথমেই বুঝে নিতে হবে—জীবিত অবস্থায় বাবা তার সম্পত্তির মালিক। সেই সম্পত্তি তিনি যাকে ইচ্ছা দান, বিক্রি বা হেবা করতে পারেন। আইনত এতে কারো আপত্তির সুযোগ নেই। কিন্তু সমস্যা তখনই হয়, যখন বাবাকে ভয় দেখিয়ে, ফুসলিয়ে বা অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণামূলকভাবে দলিল তৈরি করা হয়।

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতারণার প্রমাণ দিলে দলিল বাতিল করা সম্ভব?

আইনজীবীরা বলছেন, যদি প্রমাণ করা যায় যে,

  1. বাবা ছিলেন অসুস্থ, স্বাক্ষর করতে অক্ষম, অথচ দলিলে টিপসই নেওয়া হয়েছে।

  2. বাবা ছিলেন শিক্ষিত, সবসময় স্বাক্ষর করতেন, কিন্তু সংশ্লিষ্ট দলিলে শুধু টিপসই রয়েছে, কোনো স্বাক্ষর নেই।

  3. বাবা ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন বা চিকিৎসাধীন, তখন তার কাছ থেকে জোর করে দলিল করানো হয়েছে।

  4. বাবা জীবিত, কিন্তু বলছেন যে প্রতারণা করে দলিল করানো হয়েছে—এমন প্রেক্ষিতে তিনিই সরাসরি মামলা করতে পারেন।

এই সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জাল দলিল বাতিলের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ অনুযায়ী বিজ্ঞ আদালতে মামলা করতে হবে। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩–এ এই ধরণের প্রতারণার প্রতিকার পাওয়া যাবে না।

কী ধরনের প্রমাণ লাগবে?

☞ বাবার পূর্বের দলিলে করা স্বাক্ষরের নকল

☞ চকরির নথিপত্রে তার স্বাক্ষর 

☞ স্কুল-কলেজ বা ব্যাংকের কাগজে তার স্বাক্ষর

☞ ইউনিয়ন পরিষদের সনদ বা প্রমাণপত্র

☞হাসপাতালের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র (যদি অসুস্থ ছিলেন)

☞সাক্ষ্যদাতা ব্যক্তি বা প্রতিবেশীর বক্তব্য

এসব যথাযথভাবে উপস্থাপন করে আপনি আদালতে গিয়ে দলিল বাতিলের মামলা করতে পারবেন।

কিন্তু যদি দলিল সঠিক নিয়মে হয়?

যদি দেখা যায়—বাবা সুস্থ থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় দলিলে স্বাক্ষর করেছেন, দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে সঠিকভাবে, তাহলে সেই দলিল বাতিল করার সুযোগ নেই। প্রতারণা হোক বা পারিবারিক চাপ—যদি বৈধভাবে স্বাক্ষর এবং রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকে, তাহলে আদালত সেই দলিলকে বৈধই ধরে নেবে।

শেষ কথা

বাবার সম্পত্তি নিয়ে প্রতারণা হলে হতাশ না হয়ে আইনি পথ অবলম্বন করুন। সঠিক প্রমাণ এবং তথ্য উপস্থাপন করতে পারলে দলিল বাতিল করাও সম্ভব। তবে ভুল পথে মামলা করলে সময়, অর্থ ও শ্রম—সবই বিফলে যেতে পারে।

আইনি পরামর্শের জন্য অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

আপনার মূল্যবান মতামত প্রদান করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

 বিজ্ঞাপন 



https://rkmri.co/ST55TMpTEIM0/