এমন একটা সময় ছিলো যখন গ্রামে গ্রামে কাজি পেয়ারার গাছ লাগানোর হিড়িক পরেছিলো। ছোট ছোট গাছে ইয়া বড় বড় অনেকগুলো পেয়ারা ধরতো। আমাদের বাড়ীতে অনেক দেড়ীকরে কাজি পেয়ারার গাছ লাগানো হলেও,তার আগে অনেক বার এ পেয়ারা খেয়েছি!বড় চাচা একজন সচেতন শৌখিন অবিজ্ঞ লোক ছিলেন। তাদের বাড়ীতে এমন কোন ফলজ ও ঔষধি গাছ নেই যে ছিলো না।জলপাই ও হরতকি গাছদুটি পাশাপাশি ছিলো,কোনটা হরতকি আর কোনটা জলপাই তখন চিনতাম না। কতবার যে জলপাই মনে করে হরতকি মুখে দিয়ে ওয়াক থু থু করেছি তার হিসেব নেই। তাদের বাড়ীতে প্রথম কাজি পেয়ারা দেখেছি এবং খেয়েছি। তখন ভাবতাম এক একটা পেয়ারা মনেহয় এক কেজি হয় বলে এর নাম কাজি পেয়ারা। জীবনে কত কাজী পেয়ারা খেয়েছি তার হিসেব নেই। অথচ এর উদ্ভাবকের নাম জানা হয়নি, উনি এ পৃথিবী থেকে চলে গেলেন তাও জানিনা। কার কয়টা বাচ্চা হলো,কে কোথায় কাকে কখন কিভাবে বিয়ে করলো,মোট কথা কে কাবার হগু করলো বা পাদ ছাড়লো সে খবরগুলো ফলাও করে প্রচার করলেও, এ বিখ্যাত ব্যক্তির প্রস্থানে কোন মিডিয়ায় আলোচনা নাই। প্রায় সবাই দায়সারা ভাবে শুধু মৃত্যুর খবরটিই প্রচার করেছে।
আমাদের মফিজ এলাকা উত্তরবঙ্গের একটি অবহেলিত জেলা গাইবান্ধার ছেলেটি যে কাজি পেয়ারার জনক তাও জানলাম তার মৃত্যুর পর!
গাইবান্ধার কৃতি সন্তান, বাংলাদেশের প্রখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষি সংগঠক, ন্যাশনাল ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা, পেয়ারার একটি জাত উদ্ভাবন করেন, যা তার নামানুসারে 'কাজী পেয়ারা' নামে নামকরণ করা হয়।কৃষিক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।
ধান ছাড়াও বাংলাদেশের প্রধান দুটি দানাদার ফসল চাষ শুরুর ক্ষেত্রেও কাজী বদরুদ্দোজা নেতৃত্ব দেন। দেশে আধুনিক জাতের গম উদ্ভাবন ও চাষ শুরু করা আর ভুট্টার বাণিজ্যিক আবাদ তার হাত দিয়ে শুরু। ভুট্টা থেকে তেল উদ্ভাবন এবং তা পোলট্রিশিল্পের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার শুরুর ধারণাটিও তার কাছ থেকে আসা। ছত্রাকের গণ 'কাজিবোলেটাস' এর নামকরণও করা তার নাম থেকেই।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের অধীনে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট (বর্তমানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বিএসসি-এজি ডিগ্রি লাভ করেন। ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ছিলেন।
বার্ধক্যজনিত কারণে গত বুধবার ৩০ আগস্ট, ২০২৩
বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাঙালি বরাবরই অকৃতজ্ঞ জাতি,এরা সৃষ্টিকে আঁকড়ে ধরলেও সৃষ্টিকর্তাকে বেমালুম ভুলে যায়। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সৃষ্টি হলেও বর্তমানে লাহোর প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশের কোন আলোচনায় হয় না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদী, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের মতো রাজনীতিবিদরা আজ উপেক্ষিত। এদের রাজনীতি সম্পর্কে আমরা এখন কিছুই জানি না। শাহ আব্দুল করিম, লালন সাঁই, জয়নুল আবেদীন, স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর মতো গুণীজন আজ অবহেলিত। সেখানে কাজি এম বদরুদ্দোজা কিভাবে গৃহীত হয়। আর মৃত্যুতে তেমন কোন প্রচার প্রচারণা নেই মৃত্যু পরবর্তীতেও তার জীবনী নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা এবং সভা সেমিনার লক্ষ্য করা যায়নি।
তবে কাজী পেরায়া উদ্ভাবনে কাজী এম বদরুদ্দোজা সরাসরি হাত না থাকলেও সে কাজি পেয়ারার উদ্ভাবক হিসেবেই এম বদরুদ্দোজার নামের পরিচিতি লাভ করে। জানাযায় ৮০ দশকের একদল বিজ্ঞানী কাজি পেয়ারার উদ্ভাবন করেন। তারা কাজী এম বদরুদ্দোজাকে এতোটাই ভালোবাসতো যে তাদের নতুন উদ্ভাবিত ফলের নামটি তার নামানুসারেই করে।
Bangaly ra hoyto amone
ردحذف