গতকয়েকদিন থেকে বাংলাদেশ আবার সহিংস হয়ে উঠছে বিভিন্ন ইস্যুতে। যার শুরু সুপ্রিম কোর্টের সামনেথেকে থেমিস দেবীর ভাস্কর্য বা মূর্তি অপসারন নিয়ে। মূলত ঘটনা তারও আগে শুরু হয়েছিল যখন এই ভাস্কর্য সুপ্রিম কোর্টের সামনে বসানো হয়েছিল তখন থেকেই। হেফাজতে ইসলাম সহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। তদেরদাবি ছিল বাইতুল মোকারম থেকে যেন সে মূর্তি দেখা না যায়, অনেকে আবার ঈদের নামাজের সময় একে কাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখারও পরামর্শ দেন।
এর কিছুদিন পর কাওমি মাদ্রাসার দওরায় হাদিসকে মার্স্টাস সমমান করার দিন হেফজতে ইসলামের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন সুপ্রিম কোর্টে সামনে ভাস্কর্য তারও পছন্দ নয়। এবং এনিয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির সাথে কথা বলবেন।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর ও প্রধান বিচারপতির পরামর্শে ২৬ মে ২০১৭ তারিখ মধ্যরাতে ভাস্কর্য অপসারনের কাজ শুরুহয়। এতে অন্যানদের মধ্যে ভাস্কর্য শিল্পি মৃনাল কান্তি উপস্থিত থেকে অপসারন কাজ তদারকি করেন, যাতে করে ভাস্কর্যের কোন ক্ষতি না হয়। এ সময় তিনি আবেগ তাড়িত হয়ে কান্না ধরেরাখতে পারেননি। তিনি জানান, এ রকম কান্না আর কোনদিন তিনি কাদেননি। হওয়ারেই কথা একজন শিল্পির কাছে তার সৃষ্টি নিজের সন্তানের মতো, তার সৃষ্টি ধ্বংস মানে তার সন্তানের মৃত্যুর সমতুল্য। এ সময় তিনি আরও ছোট একটি তথ্যদেন, শিল্পি মৃনাল কান্তি জানান, এটা থেমিস দেবীর মূর্তি নয় এটা একটি বাঙ্গালী নারীর মূর্তি!!! বড় পরিতাপের বিষয় এটা নিয়ে কেউ কোন কথা বলেনি। যে মূর্তি নিয়ে বেশকয়েক মাসথেকে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, তখন না বলে ঠিক অপসারনের দিন অন্তিম সময়ে তিনি বল্লেন এটা বাঙ্গালী নারীর মূর্তি!!!
তা যাইহোক, গভির রাতে মূর্তি অপসারনের কথা দেশের প্রায়ই সবাই মূহুত্বের মধ্যেই জেনে যায়। মূর্তি অপসারনের কথা জানতে পেরেই হেফাজত ইসলামের নেতা আহম্মেদ সফি সরকারকে অভিনন্দন জানান। পাশাপাশি ঐ রাতেই কিছু সংগঠন মূর্তি অপসারনের প্রতিবাদ করে। অপসারনের রাতেই জানাযায়, সুপ্রিম কোর্টের সামনেথেকে সরিয়ে এনেক্স ভবনে পূনঃস্থাপন করা হবে। অনেকে অনেক ভাবে বুঝাচ্ছে, এই ভাস্কর্য অপসারনের মধ্যদিয়ে সাম্প্রদায়ীক বাংলাদেশ সৃষ্টির পায়তারা করাহচ্ছে, যা ছিল ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার বিরোধী। এরমধ্যদিয়ে বাংলাদেশের সকল ভাস্কর্য অপসারনের দাবি উঠতে পারে, এমন কি কিছু কিছু যয়গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি অপসাননের দারি উঠেছিল। এনিয়ে পরেরদিন আওয়ামিলীগ সাধারন সম্পাদক ও সড়ক ও সেতু মন্ত্রী কাদের বলেন, এ ভাস্কর্যের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনমিল নেই তাই অন্যান ভাস্কর্য অপসারনের কোন প্রশ্নেই উঠেনা। ভাস্কর্য অপসারন নিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করা দরকার। এক কথায় বলতে চাই বাংলাদেশের ৯০%মানুষের মতামত যেহেতু ভাস্কর্য অপসারনের পক্ষে(নট অনলি মুসলিম)।সেহেতু ভাস্কর্য অপসারন করাই যুক্তি সঙ্গত। যেমনটি পূর্বে লালন ছাড়াও বিভিন্ন ভাস্কর্য অপসারন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের আশংঙ্কা উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়, যারা ভাস্কর্য অপসারনের বিরোধিতা করছেন। এটাও ঠিক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন কি মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে ভাস্কর্য আছে। তথাপি এই ভাস্কর্যটি অলাদা মর্যাদা বহন করছিল, যেহেতু বাইতুলমোকার থেকে নামাজের সময় সরাসরি এই ভাস্কর্যদেখা যায়, তাই দেশের অধিকাংশ ধর্মপ্রান মুসলমানরা এর বিরোধীতা করছে, এ কারনেই আমার কাছে ভাস্কর্য অপসারন যোক্তিক মনেহয়েছে।
ভাস্কর্য অপসারনে আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে যা কারও কাম্যছিলনা। ব্যাক্তিগত ভাবে সর্বপ্রথম যে বিষয়ে আমি অবিভূত হয়েছি তা হলো, বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি
, যারা কিনা দেশও জনগনের স্বার্থ বিবেচনা না করে, মূর্তি অপসারনকে তাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কৌশলে তার প্রতিবাদ করেছে!এখানেই থেমেনেই। ভাস্কর্য অপসারনের পক্ষে ও বিপক্ষের দল সবাই নিজনিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার। এনিয়ে অনেক বিতর্ক চলছে। এর বিরুদ্ধে সমাবেশ করে ২০১৩.সালে যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে গড়েওঠা গণজাগরণ মঞ্চ এতে অংশগ্রহণ করেন গনজাগরন মঞ্চের মূখপাত্র ইমরান এইচ সরকরা, সনাতন ছাড়াও অনেকে। সেই সমাবেশ থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নামে বিভিন্ন স্লোগান দেয়াহয়। এর উল্লেখযোগ্য একটি স্লোগান হচ্ছে, ছিঃছিঃ হাসিনা লজ্জায় বাচিঁনা। যার অবিস্কারক ছিলেন সনাতন। এই নিয়ে সরকারি ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইমরান এইচ সরকার ও সনাততন কে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। শুধু অবাঞ্চিত ঘোষণা করেই ক্ষান্ত হয়নি সরকারি ছাত্র সংগঠনটি তরা কুকুরের মতো পেটানো ছাড়াও, ৫০০ পচাঁ ডিম দিয়ে ঢেলার ঘোষনা দেয়। স্বাধীন দেশের স্বাধীন জনগনের আর এক জনগনের উপর এটাই কি চরিত্র হওয়া উচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি বিষয় নজরে রাখবেন, আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, আপনি সমালোচনার উর্ধ্বে নন, আপনাকে সবাই সব সময় ভাল নাও বাসতে পারে। আপনার সকল কর্মকান্ড সবসময় সবার মন জয় নাও করতে পারে। এমনকি যে সবসময় আপনার পাশে ছিল সেও কোন একটি কাজে আপনার উপর খুশি নাও থাকতে পারে।তার অধিকার আছে আপনার বিরুদ্ধে সংগঠিতহয়ে জনমত গঠন করার, আপনার সমালোচনার করার অধিকার তার আছে, এমন কি বিক্ষুব্ধহয়ে আপনার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে পারে। মনে রাখবেন তারা সবসময় আপনার বিরোধী নয় বরং আপনার সহযোগী।মনে রাখবেন মহান সৃষ্টিকর্তাও কিন্তু সমালোচনার উর্ধ্বে নয়, অনেকে বিভিন্ন সময় সৃষ্টিকর্তার সমালোচনা করে বসেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি দেশের সরকার প্রধান, দেশের নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনার হতে। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিককে কেউ হুমকি দিয়ে পারপেতে পারেনা। যেমন পারেনি আপনাকে হত্যাযেষ্টা পরিকল্পনাকরী সাংবাদিক শফিক রেহমান সহ আরও কয়েকজন। আমরা যহা জানি তাহা, আইন সবার জন্য সমান, সে বাদশা বা ফকির হউক না কেন। মাননীয় প্রধামমন্ত্রী আপনিতো সমগ্র দেশের নিরাপত্তার মালিক, আপনিকি আপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব ছাত্রলীগ নামক সংগঠনকে দিয়েছেন? যারা কিনা বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডে জরিত।
এদিকে হেফাজতে ইসলাম শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোর্কারমে সমাবেশ করে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়েছে। এমন কি হাড্ডি গোস্ত খুলে নিতে চেয়েছে। গত ৩০ জুন নিউজ টুয়েন্টিফোর টেলিভিশনের টকশো ‘জনতন্ত্র গণতন্ত্র’ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনের ভাস্কর্য বিতর্ক নিয়ে ওই টকশোতে নাকি সুলতানা কামাল বলেছিলেন, ‘দেশে মূর্তি না থাকলে মসজিদও থাকতে দেয়া হবেনা’। এই বক্তব্যের প্রতিবাদে শুক্রবার প্রতিবাদ সমবেশে হেফাজত ইসলাম সুলতানা কামালের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
নিউজ টুয়েন্টিফোর টেলিভিশনের টকশো ‘জনতন্ত্র গণতন্ত্র’ এ সুলতানা কামাল কি সত্যি এ কথা বলেছিলেন? ইউটিউভে আপলোড করা ওই টকশোর ভিডিওটি পাঠকদের জন্য আবারও দেওয়া হল।
এ কথোপকথন থেকে বুঝাযার ধর্ম ব্যবসায়ীরা কতো শুক্ষভাবে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের একজন সুলতানা কামালকে ধর্ম বিরোধী বানিয়ে দেয়। আসলে আমি যখন দূর্বল হই তখন, তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে শ্রেষ্ট হই অবস্থা। যদিও ব্যাক্তিগত ভাবে সুলতানা কামালকে আমার বেশ একটা পছন্দ না। তথাপি তারসাথে মিথ্যার করাহবে আর আমি হাততালি দেব, এটা আমি করতে পারিনা সেটা আমার সাথে যায়না।
সবেই অহাম্মক
ردحذف