ভিন্ন গল্প

কথা ছিলো পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট
করলে
বাবা এ্যানড্রয়েড ফোন
কিনে
দেবে,তাই ছেলেটির আজ
রাতজেগে পড়াশুনা করা,
সারাদিন
বশির ভাইয়ের দোকানের আড্ডা
বাদ দিয়ে ছেলেটি অনেক
পরিশ্রম করে একদিন ভালো
রেজাল্ট করলো।
বাবা ছেলেকে কথা দিয়েছে
পাশ
করলে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে
ফোন
কিনে দিবে তাই বাবা
কয়েকদিন
ধরে খুব সকালে বেরিয়ে পড়েছে
অর্থের সন্ধানে। .
ছেলেটির যেদিন রেজাল্ট
দিলো
সেদিন ছিলো সোমবার, প্রচন্ড
রৌদে বাবা তখন অর্থ উপার্জনে
ব্যস্ত ঠিক সে মুহুর্তে বাবার
ফোনটি বেজে উঠলো। ওপাশ
থেকে থেকে তার বোকা
ছেলেটি এক
পৃথিবী আবেগ জড়ানো কন্ঠে
বললো"
বাবা জানো আমি A+ পেয়েছি।
এ বাক্যটি শোনার পরে বাবার
চোখ
বেয়ে চার ফোটা জল পড়ে
গেলো
পৃথিবীর বুকে,নিজেকে সে
পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ
করলো।
কিন্ত পরমুহুর্তে বাবার মন খারাপ
হয়ে গেলো যে ফোন কেনার
টাকা
তো ম্যানেজ হয়নি।
সন্ধায় যখন চিন্তিত হয়ে বাবা
বাড়ি ফিরলো তখন আবার সে
চারফোটা জ্বল মাটিতে
ফেললো
তার সেদিনের সেই ছন্নছাড়া
ছেলেটির কথা শুনে, ছেলেটির
কথাটি ছিলো এরকম " বাবা
আমার
এখন ফোন কেনার ইচ্ছে নেই
পরে
কিনবো" কি অদ্ভুত ব্যাপার
সেদিনের সেই
বোকা ছেলেটি আজ তার
বাবাকে
বুঝে ফেলেছে।
.
এসব ঘটনার সহস্র স্বাক্ষী সাধারনত
মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির
ছেলেমেয়েরা,
এদের স্বপ্ন থাকে
তবে স্বপ্নের রঙ হয় কালো,এদের
জন্মদিন পালন হয় শুধুমাত্র এক
পাউন্ডের একটা কেক আর কিছু
চানাচুর এর সাথে কয়েকটা কলা
দিয়ে।


 মধ্যবিত্তের
ছেলেমেয়েরা যখন
একসাথে বসে গল্প করে তখন
সেখানে বসে গল্প শুনতে খুব
ভালো
লাগে কারন সেখানে তখন অনেক
স্বপ্ন ওড়ে, থাকে প্রচন্ড
আফসোস,
থাকে স্বপ্ন পুরনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
আর এভাবেই হয়তো
এ্যানড্রয়েড
ফোনরুপি কোন গিফট পাওয়ার
লোভে মধ্যবিত্তের
ছেলেমেয়েরা
দিনেদিনে এগিয়ে চলে,আর
যারা
ছেলেটির মতো বাবাকে বুঝতে
পারে তারাই একমাত্র সফল হয় আর
যারা বাবার গলার উপরে পাড়া
দিয়ে বাবার কষ্ট না বুঝে
নিজের
আব্দার মেটায় তারা সত্যিই ঝরে
পড়ে,বিশ্বাস না হলে আপনার
আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে
দেখুন।
স্যালুট সকল বাবাদের কে যারা
যাদের ঘামের ফোটা দিয়ে
একেকটা মানুষ তৈরি
করে,একেকটা
বাংলাদেশ তৈরি করে।
. আমি জানি এ লেখাটি আপনি
যখন
পড়বেন তখন আপনার সামনে শুধুমাত্র
একজন মানুষেরই চেহারা ভাসবে
তিনি হচ্ছেন আর কেউনা আপনার
বাবা, হতে পারে সে মৃত হতে
পারে জীবিত "তখনি একবার
বলুননা বাবা আমি
তোমাকে অনেক
ভালোবাসি।
গল্পটা ঠিক এরকম হতে পারতো। কিন্তু না গল্পটা ছিল ভিন্ন টাইপের!
কথাছিল পরীক্ষায় পাস করলে (সেই সময়)৩০০০ টাকা দিয়ে নোকিয়া ফোন কিনে দিবেন মা।
তাই ছেলেটি দিনরাত একাকার করে পড়াশুনা করতে থাকে। পরীক্ষার মাঝেই তাকে বাবা বাড়ীথেকে বেরকরেদেয়!
বাবার কাজে সাহায্য না করারার কারনে।
তবুও সে মানুষের বাড়ীতে থেকে পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার ভারা ছিল না।
তাই ৮ কিলোমিটার পায়ে হেটে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে।
শেষে সেই কাংক্ষিত দিন এসে গেল।
আজকে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট! ছেলেটি মন মরা হয়ে বসে আছে। সবাই যখন পেয়েছে তখনও সে রেজাল্ট পায়নি। বাদ্ধ হয়ে স্কুলে গেল,
তার ইংরেজি শিক্ষক তাকে দেখে বল্লো তুই কেন এসেছিশ, তুই তো পাস করতেই পারবি না। পাস করিস নি বাড়ী চলে যা!! সেই শিক্ষকের কথা ছেলেটির বিশ্বাস হলো না। তই প্রধাণ শিক্ষকের রুমে ঢুকে গেল। সেই সাথে।সেই শিক্ষকও। সেই ইংরেজী শিক্ষক গনিত শিক্ষককে ছেলেটির আগেই বল্লো দেখ তো, এ ছেলেটি কয়টা বিষয়ে ফেল করেছে! সাথে সাথে গনিত শিক্ষক বলে কি বলছেন? সে তো পাস করেছে। তখন ইংরেজি শিক্ষক ছেলেটিকে বল্লো দেখছিস কি যা বাড়ী যা তুই পাস করেছিস। অবেগে ছেলেটি রুম থেকে বেড়ি গেল। পথে একজন জিঙ্গেস করলো কত পয়েন্ট পেয়েছিস? ছেলেটি কোন উত্তর দিতে পারেনি! কারন সে জানেনা সে কতো পয়েন্ট পেয়েছে?  তাই আবার প্রধান শিক্ষকের রুমে গেল। আবার সেই ইংরেজী শিক্ষক তাকে বল্লো আবার তুই এসেছিস কেন?ছেলেটি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল আমার পয়েন্ট কতো? আবারও গনিত শিক্ষক উত্তর দিল ভালই পেয়েছিস, 4 পয়েন্ট! যা কিনা স্কুলের মধ্যে ৮ নম্বর রেজাল্ট! ইংরেজী শিক্ষক সেটা শুনে থ হয়ে দাড়িয়ে আছে, আবার শুনলো কতো 4? সাথে সাথে ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরলো! ছেলেটি সেই অনন্দে আবার বাড়ী আসছে। আবার তার মনে সন্দেহ হলো আসলেই সে কি     A পেয়েছে? নাকি তাকে ভূল বলা হয়েছে?  আসলে সে তো A আশা করেনি?  তাই আবার সে স্কুলে গেল। এবার একটু সাহস করে গনিত শিক্ষককে আবার ভাল করে দেখতে বল্লো। এবার গনিত শিক্ষক বুঝতে পারলো, তাই তাকে রেজাল্ট শিট দেখিয়ে বল্লো দেখ তুই  A  মানে 4.00 পেয়েছিস।
এবার ছেলেটি বাড়ী এসে তার মাকে বল্লো, মা আনন্দে কেদে ফেল্লো।
কথা যখন দিয়েছে তখন ফোন কিনে দিতেই হবে।
রেজাল্টের এক মাস পরে, অনেক কষ্ট করে মা ৩০০০ টাকা জোগার করলো আর বল্লো চল তোকে ফোন কিনে দেই। তখন ছেলেটি বল্লো না মা আমরা তো ভাল ফোন চিনি না, আমাকে টাকাটা দাও। তার বেমাতা এক ভাই ছিল, যে কিনা একটি সরকরী বাহিনীতে চাকরি করে। মাকে বোঝালো তাকে দিলে সে একটা ভাল ফোন কিনে দিবে। ছেলেটির মাও বুঝতে পেরে টাকাটা দিয়ে দিল।
সাথে সাথে ছেলেটি তার ভাইকে টাকা দিয়ে দিল।
টাকা দেয়ার পরেই শুরুহয় টালবাহানা, তার ভাইটি বলে তোর জন্য ঢাকা থেকে ভাল ফোন কিনে দেব। এভাবে ছয় মাস পার হয়ে যায় কিন্তু ফোন আর আসে না। খুব চাপদিলে বলে, বিদেশ থেকে তোর জন্য ফোন আসছে। সরল মনের ছেলেটি সে কথা বিশ্বাস করে। কিন্তু এভাবে দুই বছর চলে যায় কিন্তু ফোন আর আসে না। এর মধ্যেই ফোন বিষয় নিয়ে ছেলেটির মা তাকে বাড়ী থেকে বেরকরে দেয়। সেদিন থেকে ছেলেটি আর কোন দিন তার ভাইকে ফোনের কথা বলেনি, আজ ৯ বছর হলো তবুও ছেলেটি তার ভাইয়ের কাছ থেকে ফোন পায় নি!

6 تعليقات

আপনার মূল্যবান মতামত প্রদান করুন

  1. গল্প ভিন্ন হলেও দারুন লেখা বলা যায়

    ردحذف
    الردود
    1. আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,আপনার মূল্যবান মতামত প্রদানের জন্য

      حذف
  2. খুব ভালো লাগলো, মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম না নিলে আমরা বুঝতেই পারতাম না

    ردحذف
    الردود
    1. ধন্যবাদ ব্লগার ভাই,আপনার ব্লগটি ঘুরে এলাম ভাল লাগলো।
      ভাল থাকবেন সবসময়

      حذف
    2. ধন্যবাদ ব্লগার ভাই,আপনার ব্লগটি ঘুরে এলাম ভাল লাগলো।

      حذف
إرسال تعليق
أحدث أقدم