জীবনমৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়ে এসে একজন পুরুষ হিসেবে নারীদের পক্ষে কথা বলা কষ্টসাধ্য নয় বরং দূরহ ব্যাপার।অনেকে নারীদের সমানাধিকারের দাবি করেন।তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার নিজের প্রচারের জন্য নারীদের সমানাধিকার দাবি করে।তাদের অনেকের বাড়ীর নারীদের সমানাধিকারতো দূরের কথা প্রাপ্য সম্মানটুকুই পায় না।একটা সময় নারী-পুরুষ সমানাধিকারের দাবিতে সোচ্চার থাকলেও,আস্তে আস্তে সেখান থেকে সরে এসেছি।যখন নিজের বোনেরা ছিল তখন একটা সময় মনে হয়েছিলো আসলেই নারীরা সমানাধিকার প্রাপ্য। একটা ছেলে হয়েও সে সময় যৌতুক বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে খাল কেটে কুমির এনেছি।মনে আছে HE for SHE নিয়েও সে সময় কথা বলেছি।বাংলাদেশে একটা সময় Student বলতে ছাত্র-ছাত্রী বুঝানো হয়েছে। সে সময় বিভিন্ন নারীবাদীরা দাবি করেছিলো, ছাত্রী বলতে মেয়েদের বুঝায়, এতে নারীদের হেয় করা হয়।তাই তাদের শিক্ষার্থী বা ছাত্র নামে ডাকার দাবি করেন। সে সময়েও তাদের পক্ষে আছিলাম।এদের অধিকার আদায় করে দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছি।যে মেয়েটার সাথে একসাথে যৌতুকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন করেছি,সে ঠিকই যৌতুক ছাড়া দশ লাখ টাকার কাবিনের বিয়ে করেছে।এখানেই শেষ নয়, সে যৌতুক ছাড়া বিয়ে করলেও তার ভাইয়ের বিয়েতে ঠিকই যৌতুক নিয়েছে।আমার কয়েক বোনদের যৌতুক ছাড়াই বিয়ে হলেও তারা আবার আমার শ্বশুর বাড়ী থেকে যৌতুকের আশা করে।আর যে বোনদের যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিয়েছি,তারা আমাদের কষ্টটা বুঝলেও তাদের ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ীতে যৌতুকের জন্য চাপ দেয়।মাইরি নারীরা একটা জাতিরে ভাই।একটা বেকার ছেলেকে কেউ মেয়ে দিতে না চাইলেও,একটা ছেলে একটা বেকার মেয়েকে নিয়ে দিব্বি সংসার করতে পারে।অকর্ম ছেলের বিয়ে না হলেও কোন কাজ না জানা মেয়েটাকে কোন একজন পুরুষ তাকে রানী করে নিয়ে আসে।
অনেক নারীরাই যেখানে নিজেদের সমানাধিকার চায় না সেখানে কিছু পুরুষ ও কিছু নারী তাদের সমানাধিকারের দাবি করে।আচ্ছা পুরুষরা যে দাড়িয়ে মুতার স্বাধীনতা ও অধিকার অর্জন করছে সেটা কি নারীরা পারবে?যেখানে সবচেয়ে বড় ধর্ম ইসলামে,পিতার সম্পত্তিতে ছেলেদের চেয়ে কন্যাদের অর্ধেক ভাগের কথা বলা হয়েছে,সেখানে কিভাবে নারীদের সমানাধিকারের কথা বলা হয়?সাখাওয়াত হোসেন ছাড়া যেখানে রোকেয়া, বেগম রোকেয়া হতে পারতেন না,সেখানে সেই তিনিই নারীদের পশ্চাৎপদের জন্য পুরুষদের দায়ী করেছেন!বর্তমানে পুরুষরা যেভাবে নারীদের থেকে নির্যাতিত হচ্ছে সেখানে,বেগম রোকেয়ার, "জাগো গো ভগিনী" পরিবর্তে "জাগো গো ভগ্নিপতি" লেখা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।সময় পেলে হয়তো আমিই লিখে ফেলতাম।
যৌবনকালে যে নারীদের সমঅধিকারের পক্ষে কথা বলেছিলাম সেটা এখনো ভোগাচ্ছে।দু'জনে ইনকাম করলেও সে তার পছন্দানুযায়ী খরচ করতে পারে আমি তা পারি না।সমঅধিকার প্রাপ্য বলেই তাকে রান্নার কাজে সাহায্য করি।কখনো সখনো মাথা হাত পা-ও টিপে দিতে হয়!তার পরেও নিজের মতো খরচ করার স্বাধীনতা অর্জন করতে পারিনি,সে চাকরি করে বলে।বারবার চাকরির খোটা তো আছেই। সে চাকরি করে বলে, নিজেকে অবধারিত ভাবে রান্নায় হাত দিতে হবে, তবে তার টাকায় হাত দেয়া যাবে না!সবসময় একটা ২৫ কেজি চাউলের বস্তা তিন তলা উঠালেও আপনার বেগম ৫ লিটার একটা তেলের বোতল উঠাতে পারবেনা।আপনি অসুস্থ থাকলেও আপনাকেই চাউলের বস্তা উঠাতে হবে,এটাই হয়তো সমঅধিকার!
পৃথিবীতে অনেক পেশা আছে,যা নারীদের দ্বারা সম্ভব বা যুতসই নয়,তবে অনেক ঝুকিপূর্ণ পেশার নারীর অংশগ্রহণ থাকলেও তা খুব নগন্য। বিভিন্ন দেশের সরকার নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করলেও,সে সব খুব একটা কাজে দেয় নি।কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ সরকার নারীদের উন্নয়নে সকল স্তরের শিক্ষায় নারীদের উপবৃত্তির ব্যাবস্তা করেছিল।তার পরেও নারীরা তাদের প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।উদাহরন হিসেবে বলা যায়,কয়েকজন নারী পাইলট হলেই তাদের নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়,যেখানে হাজার হাজার ছেলে পাইলট আছে।পৃথিবীতে এমন অনেক কাজ আছে যা নারীদের ছাড়া প্রায় অসম্ভব আবার এমনও কাজ আছে যা পুরুষদের ছাড়া প্রায় অসম্ভব। নিজের পরিবার ছেড়ে নতুন একটা পরিবারে এসে মানিয়ে নেওয়া,সন্তান জন্মদেয়া একমাত্র নারীরাই পারে। যদিও পৃথিবীতে প্রথম পুরুষ হিসেবে বেনেট গর্ভধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করেছিল।তার পরও সে প্রচারনা পাইলট হওয়া নারীদের চেয়ে খুব কম হয়েছিল।বিভিন্ন পাবলিক পরিক্ষায় নারীর চেয়ে পুরুষরা এগিয়ে থাকলেও,পত্রিকার পাতায় বড় বড় করে মেয়েদের ছবিই সবসময় ছাপা হয়।বর্তমানে আমাদের সমাজে যা চলছে তাতে নারীবাদ নয় নারীবিদ্বেষী হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছে।
বিভিন্ন কারনে স্ত্রী লিঙ্গকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী মনে করি।এরা ভাল শ্বাশুড়ি হইলে,ভালো বউ পায়না।ভালো বউ হইলে ভালো শ্বাশুড়ি পায় না।ভালো ভাবি হইলে, ভালো ননদ পায় না।ভালো ননদ হইলে ভালো ভাবি পায় না।ভাল মা হলে ভালো মেয়ে পায় না,ভালো মেয়ে হলে ভালো মা পায় না।আর ভালো স্বামীতো এরা কোনদিনও পায় না!সে দিন একজন তার ছেলে-মেয়ে নিয়ে গল্প করছে,জানিস জামাই টা মাটির মানুষ মেয়ে যাই বলে জামাই তাই শোনে,আর ছেলেটা হয়েছে বউয়ের গোলাম,বউ যা কয় ছেলে তাই শোনে।
তবে কিছু বিষয় থেকে যায়,যেখানে পুরুষের তুলনায় নারীরা অনেকটা দূর্বল। এই দূর্বল বিষয়গুলোই নারীদের বারবার ভোগায়।প্রাকৃতিকভাবে দূর্বল হওয়ায় নারীরা বারবার নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে।পুরুষদের ছাড়া এরা সংগঠিত হতে না পারলেও বারবার নিজেদের দোষ পুরুষদের উপর চাপিয়ে শান্তি পেতে চায়।যুগযুগ ধরে নারীরা নির্যাতনের স্বীকার হতে হতে তারা, নিজের ভাগ্যে এটাকেই অবধারিতভাবে মেনে নিয়েছে।তা না হলে পাহাড়ের কল্পনা,দিনাজপুরের ইয়াসমিন,তনু,নুসরাত এদের পর আর কোন নারী এমন নির্যাতনের স্বীকার হতো না।পতিত সরকারের সময়ে নারীরা বিভিন্নভাবে সহিংসতার স্বীকার হয়েছে।৭ মার্চে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে নারীদের প্রতি সহিংসতা দেখা গেছে।সে সরকার পতনের পরে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময় এসেও নারীরা রক্ষা পায় নি,বরং আরো উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।প্রকাশ্যে ধুমপান করতে নারীরা আন্দোলন করছে,পোশাক নিয়ে কথা বলায় কাউকে মামলা দিচ্ছে অথয দিনাজপুরে ধর্ষকের মুক্তি,মাগুরায় বোনের বাড়ীতে আট বছরের শিশু ধর্ষন,পোশাক নিয়ে ঢাবি ছাত্রীকে হেনেস্তাঃজামিনে মুক্ত যুবকের ফুল দিয়ে বরণ করলেও এরা চুপ থাকে।তবে যাই হোক, জয় বাংলা বলে নারীদের হেনেস্তা করা হলেও,নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর বা বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলে যেন নারীদের উপর সহিংসতা করা না হয়।