সিন্ডিকেট

ইদানিং কালে সিন্ডিকেট বহুল প্রচারিত শব্দ।সারা পৃথিবীতে কমবেশি সবাই সিন্ডিকেট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আমার কাছে সিন্ডিকেট হলো কোন প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে কাউকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে কৃত্রিমভাবে কোন কিছুর সংকট তৈরি করা।সিন্ডিকেট যে মানুষ,সমাজ,রাষ্ট্র,ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য কতোটা মারাত্মক হুমকির, তা আমার চেয়ে কোটি কোটি বেশি জ্ঞানীগুণী মানুষরা অনেক আগে থকেই জোরালোভাবে বলে আসছেন।পৃথিবীর এমন কোন বিষয় নেই যেখানে সিন্ডিকেট নেই।টয়লেট পরিস্কার থেকে রাষ্ট্রের ক্ষমতাতেও সিন্ডিকেটের জয়জয়কার। শুধুমাত্র চাল,ডাল,লবন,কি়ংবা শেয়ারবাজার সিন্ডিকেট নয়।পৃথিবীতে যতোগুলো বিষয় আছে তার সবেই সিন্ডিকেটে আবদ্ধ। যদি বলি ৫ই অগাস্ট হাসিনা সরকারের পতন ও ইউনুস সরকারের গঠন কিছু সিন্ডিকেটের কারসাজি, তাহলে বোধ-হয় ভূল হবে না।খুব বড় বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে না,আপনি যেখানে অবস্থান করছেন সেটা নিয়ে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন।পরিবারকে যেমন রাষ্ট্র বিবেচনা করলে সরকার হবে বাবা-মা মন্ত্রী এমপি বড় ভাইরা আর সাধারনত ছোটরা সাধারন সদস্য বা জনগণ। বাবা-মায়ের কথাই এখানে চুড়ান্ত।মাঝে মাঝে ছোটখাটো বিষয়ে বিপ্লবের মাধ্যমে বাবা-মা কে রাজি করা গেলেও প্রায় সময়ে তা হয় না।সিন্ডিকেট সম্পর্কে জানতে হলে এর ব্যাপকতা সম্পর্কে জানতে হবে।নিজের অবস্থা থেকে এর ব্যাপকতা সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝা যায়।খুব ছোট বিষয় থেকে সিন্ডিকেটের ভয়াবহতার সম্পর্কে জানুন।



আমি যে এলাকায় থাকি সেখানে বাসা-বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ ছিলো।এতে গ্যাস কর্তাদের কিছুটা উপরি ইনকাম হতো।ইনকাম না হলে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করার অভিযান পরিচালনা করা হতো।সাধারনত দুই ঈদের আগে বেশী অভিযান করা হতো। প্রায় তিন বছর আগে অবৈধ গ্যাস সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়।দু-এক মাস কোন কোন বাড়ীওয়ালা বাসাভাড়া কম নিলেও অধিকাংশই বাসাভাড়া কমায়নি।যারা বাসাভাড়া কম নিয়েছিলো তারও সিন্ডিকেটের কারনে আর কম নিতে চায় না।এদিকে গ্যাস সংযোগ থাকার সময় বিদ্যুৎ বিল বাসা মালিক দিলেও,গ্যাস বিচ্ছিন্নের পর ভারাটিয়াদের বিদ্যুৎ ব্যাবহার বেড়ে যায়।বাড়ীওয়ালারা কিছুটা বাসা ভাড়া কমিয়ে বিদ্যুৎ বিল ভাড়াটিয়াদের ঘারে দিয়ে দেয়।৬ টাকা ইউনিট হলেও কেউ কেউ ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত নেয়।কয়েকমাস পরে সবাই ১০ টাকা করে।সরকার পতনের পর আবার অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। গ্যাস সংযোগ পাওয়ার সাথে সাথে অটোমেটিক ভাবে বাসা ভাড়া বেড়ে যায়, কিন্তু বিদ্যুৎ বিলটা ভাড়াটিয়া দের ঘারেই থেকে যায়।কিছু কিছু বাড়ীওয়ালা ভাড়া কমাতে চাইলেও এলাকাবাসীর সিন্ডিকেটে আটকে যায়।

ইন্টারনেট এখন মানুষের মৌলিক চাহিদার অংশ। যেখানে থাকি সেখানে কয়েকটি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাদ্ধতামূলক আমাকে নিদিষ্ট একটিই বেছে নিতে হবে।যদিও এরথেকে ভালো সার্ভিস দেয়, সিন্ডিকেটের কারনে আমাকে সেটায় নিতে হবে, যদিও মাসের প্রায় অর্ধেক দিনেই নেট সমস্যা থাকে তার পরেও।অভিযোগ করারও কোন উপায় নাই। 

সে দিন ঘরের কিছু ফার্নিচার নেয়ার জন্য শোরুমে গেলাম,কয়েকটা শোরুমে দেখলাম দাম কিছুটা কম রাখলেও পারতো,কিন্তু সবাই প্রায় কাছাকাছি দাম চায়।যাইহোক দাম বেশী হলেও নিয়ে নিলাম, কিছু করার নাই।কিন্তু জিনিসটা বাসায় নিয়ে আসা নিয়ে বাধ সাধলো! বাসায় ফার্নিচার পৌচ্ছে দেওয়ার জন্য ঐ শোরুমে নিজস্ব ভ্যানগাড়ী আছে।যদিও ভাড়া হয় চারশো টাকা কিন্তু ঐ ভ্যানওয়ালা আটশো টাকা চেয়ে বসে।অন্য একটি ভ্যান ঠিক করতে গেলে, ঐ ভ্যানওয়ালা বলে ঐ শোরুমে তো নিজস্ব ভ্যান আছে। তিনিও হয়তো বিষয়টা বুঝতে পারলেন,আর পারবেন না বা কেন তিনিও তো পাশের শোরুমে নিজস্ব ভ্যান ওয়ালা।তিনি সরাসরি বললেন ভ্যাড়ায় বনিবনা হয়নি তাই না, আমিও বললাম। তিনি বললেন আমি এই পাশের শোরুমে গাড়ী ওয়ালা আমি যেতে পারবো না, যদিও আমি কম ভাড়ায় নিয়ে যেতে পারি।পরে আমাদের মধ্যে ঝামেলা হবে।বিষয়টা খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বল্লেন।আর আমাকে পরামর্শ দিলেন চলতি কোন ভ্যানগাড়ী ঠিক করতে।কারন তিনি জানালেন এখানের কেউই যাবে না আর গেলেও সবাই একই ভাড়া দাবি করবে।তার পরেও এই লোকটার মনে হয় যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো,কৌশলে ঐ ভ্যানওয়ালার কাছে জানতে চাইলো যাওয়া যাবে কি না।সেও কৌশলে না বলে দিলো।সব কিছু জানা ও বুঝার পরেও নিজেকে চুপ থাকতে হয়েছে।অনেক চেষ্টার পর ঠিকই একটা ভ্যান ঐ চারশো টাকায় ঠিক হয়েছে।কিন্তু আসার সময় ঐ শোরুমে কর্মচারীরা ভ্যান চালককে কূট কৌশলে জানিয়ে দিলো তাদের ভ্যানওয়ালা আটশো টাকা ভাড়া চেয়েছে! আধাঘন্টা রাস্তা একঘন্টা লাগিয়ে আমার কাছে ঠিকই ছয়শত টাকা আদায় করে নিল! 

সিন্ডিকেট শুধু বাড়ীওয়ালা,নেট ওয়ালা বা ভ্যানওয়ালা নয়,জীবনের প্রতিটা পরতে পরতে বিদ্যমান।এদের হাত অনেক শক্ত এদের ভাঙ্গা আসলেই কঠিন না দুরূহ বটেই।আমরা সামাজিক জীব নয় বরং সিন্ডিকেট জীব হয়ে গেছি।বাড়ীর পাশের দুধ ওয়ালা যতই খারাপ দুধ ই দেউক না কেন আপনাকে তার কাছ থকেই দুধ নিতে হবে,নইলে দুধ খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে।অগাস্ট আন্দোলনের আগে যেখানে সিন্ডিকেট ভাঙ্গার কথা বলা হয়েছিল,সেখানে ৫ ই অগাস্ট পরে মন্দির-মাজার ভাঙ্গা হচ্ছে। অর্থাৎ মাজার-মন্দির ভাঙ্গার চাইতে কঠিন হলো সিন্ডিকেট ভাঙ্গা।



1 মন্তব্যসমূহ

আপনার মূল্যবান মতামত প্রদান করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন