যে যেভাবে পারে ঠকাচ্ছে পর্ব ১

এক
আমরা বাঙ্গালী,মানুষ ঠকাতে আমরা ওস্তাদ।যে যেভাবে পারি আমরা মানুষকে ঠকাতে খুব পছন্দ করি।মানুষকে ঠকিয়ে আমরা বড়লোক হতে চাই।লোকজনকে ঠকাতে এমন কোন হিন কাজ নেই যা আমরা করতে পারিনা।সে দিন এক দোকানে আলু নিলাম।বাড়ীতে এসে পরের দিন বউয়ের বকা খেলাম।গিন্নি বললো "তোমাকে যে মানুষ এভাবে ঠকায় তুমি একটু চোখঁ কান খোলা রাখতে পারোনা"পরে জানতে পারলাম কালকে যে ৫ কেজি আলু এনেছি তাতে নাকি ১ কেজির উপরে পুরাতন আলু দিয়েছে।কি আর করার বউয়ের কাছে আবার বোকার মতো চুপকরে রইলা।
দুই
বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষের একটা কমন রোগ হলো গ্যাসের সমস্যা।আমরা সারা বছর ভাজা,পোড়া,অস্বাস্থ্যকর,অখাদ্য খেয়ে খেয়ে এ রোগটি বাধিয়েছি।একটা কথা প্রচলিত আছে,বাংলাদেশে রোগির চেয়ে ডাক্তারের সংখ্যা বেশী।এখন আবার দেখা যাচ্ছে যে,রোগের চেয়ে ঔষধের সংখ্যা বেশী।বাংলাদেশে কয়েকশো ওষুধ কোম্পানী আছে।এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া বাকি সবেরই মান প্রায় হযবরল অবস্থা।কোনটা বিক্রিতে লাভ বেশী আবার কোনটায় কম।সাধারনত যে জিনিসটায় লাভ বেশী সেটাই অধিকাংশ দোকানি বিক্রিকরতে চায়।আর যে জিনিসটার দাম বেশী সেটাই মোটামুটি মানের হয়ে থাকে বলে আমরা মনে করি।যাইহোক,আমি রেগুলার গ্যাসের সমস্যার রোগি না।তারপরও রোজা রমজানের মাস হওয়ায় অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য গ্যাসের ওষুধ ব্যবহার করছি।যেহেতু আমি মৌসুমি রোগি তাই আমি গ্যাসের ঔষুধের নাম জানবো না এটাই স্বাভাবিক,তাই একজনের কাছে ভালো গ্যাসের ঔষুধের নাম জানতে চাইলে,সে স্কয়ার কোম্পনির "সেকলো" এর কথা জানালো।তো সেকলোই নিচ্ছিলাম।ইতোমধ্যে দুই পাতা সেকলো ব্যবহার করে ফেলেছি।সে দিন ঔষুধ শেষ হওয়ার আবার ওষুধ আনতে যাই।গিয়ে দেখি প্রায় সব দোকানেই বন্ধ,তারাবির নামাজের সময় হওয়ায় সবাই দোকান বন্ধ রেখে নামাজ পরতে গেছে।আমাকে যেহেতু ঔষুধ নিতেই হবে,সেহেতু এদিক সেদিক আরো ডাক্তারের দোকান খুজতে থাকলাম।একটা দোকান পেয়েও গেলাম।ঐ দোকানে একজন মহিল ঔষুধ বিক্রি করে।ওনার কাছে সেকলো আছে কি না জানতে চাইলাম।ওনি জানালো আছে।আগে যেহেতু দুই পাতা নিয়েছি তাই দাম সম্পর্কে আমি জানি।তাই টাকাটা বেড় করে দিয়ে এক পাতা চাইলাম।ওনি আমাকে একপাতা ধরেও দিলেন।আগের দুইপাতা যে কোন কোম্পানির নিয়েছি সেটা মনেছিলো না।


 কিন্তু এখন যে পাতাটা দিলো সেটার রং আগেরটার চেয়ে ভিন্ন ছিল,তাই বুঝতে পারলাম ওনি হয়তো আমাকে ঠকাচ্ছেন।কোম্পানির নামটা দেখছি,আর জিগ্যেস করছি এটা কোন সেকলো?ওনি বলছেন এটাই সেকলো আমি দেখছি ওটা সেকলো ছিলো না।অনেকক্ষণ ধরে ওনি আমাকে ভুংভাগ বিঝিয়ে "সেকলোজেন" টাই ধরে দিলো মহিলা মানুষ হওয়ার,বোকার মতো "জি হুজুর যাহাপনা"র মতো ওটাই নিয়ে এলাম।সেকলোজেন খেয়ে সেকলো আর এটার মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে পারলাম।
তিন
রমজান মাস সিয়াম সাধোনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাস।সারা বছর কেউ ইবাদত বন্দেগি না করলেও এ মাসে সবাই কিছু না কিছু ইবাদত করে আল্লাহ্ সন্তুষ্টি লাভের আশায়।এ মাসটি মুসলমানদের জন্য সংযমের মাস।এ মাসে সবাই কমবেশী রাগ ক্রোধ কমিয়ে ভালো হবার চেষ্টাকরে।অনেকে দান খয়রাতো করে থাকে।আমি ব্যক্তিগতভাবে ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়া খুব একটা সাচ্ছন্দ্য বোধ করি না।কিন্তু কোন অসহার মানুষ যদি কোন কিছুর বিনিময় কিছু যদি চায়,তাহলে দরকার না হলেও সেটা নিয়ে নেই।
সেদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরছি,রাস্তায় দেখছি অফিসের এক পুরোন কর্মচারী কলা বিক্রি করছে।দেখেই দাড়িয়ে গেলাম,আমাকে দেখে সে সালামও দিলো।কলার প্রয়োজন না হলেও নেয়ার জন্য দাড়িয়ে গেলাম।পরিচিত হওয়ার নিজেই এক ফানা ভালো কলা বেছে নিলম।বিক্রি ভোলোই হচ্ছে একা সে কুলিয়ে উঠতে পারছে না তাই আমিও তাকে কিছু সময় বিক্রিতে সাহায্য করলাম।দু'জন মিলেই সব কলা বিক্রি করা শেষ করলাম।এবার আমার টাকাটা দিয়ে চলে আসছি,তখনি সে তার লুকানো যায়গা থেকে আরো কলা বের করা শুরু করলো।আমি সহ এর আগে যে কলাগুলো নিয়েছি তার থেকে এ কলাগুলো ভালো তবে দাম একই।যদিও এটা তার ব্যবসায়িক কৌশল ছিলো,তার পরেও নিজেকে ঠকিয়ে যাওয়ার দোষে দোষী সাবস্ত করে চলে আসলাম।
চার
বাংলাদেশীদের ঠকানোর জন্য বাংলাদেশীরাই আর একটি নতুন কৌশল অবলম্বন করে।চটকাদার বিজ্ঞাপন দিয়ে এদেশের সাধারন মানুষকে সহজেই ঠকানো যায়।অধিকাংশ বাংলাদেশী শিক্ষিত হলেও সুশিক্ষিত নয়।এরা অন্যের কথায় খুব কান দেয়।মোট কথা এরা লোকের মুখের ভালো ভালো কথা এরা সহজেই বিশ্বাস করে।দেশে হাজার হাজার মিডিয়ার সাথে ফেসবুকের মতো আরো অনেক সামাজিক মাধ্যমের ছড়াছড়ি।আর কিছু চতুর ব্যবসায়ী এসব মিডিয়ার সাধারন দর্শকদের টার্গেট করে লোক ভূলানো চটকাদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে।আর এদের এসব বিজ্ঞাপনের ফাদে পরে বরাবরেই ঠকে যাচ্ছে।তেমনি এক বিজ্ঞাপনের ফাদে আমিও পরেছি।নতুন বিয়ে করার কারনে পুরতন ব্যাচেরল বাসা ছেড়ে ফ্যামেলি বাসায় উঠেছিলাম ২০১৯ সালে।হাতে সে রকম টাকা পয়সাও ছিলনা,তেমন গরমও ছিলনা।এ জন্য ফ্যানের দরকার পরেনি।২০২০ সালের গরমের সময় একটা ফ্যানের খুব প্রয়োজন পরে।অনেক ফ্যানের রংচং বিজ্ঞাপন দেখে "ক্লিক" ফ্যান পছন্দ করি,একটা ফ্যান নিয়েও আসি।ক্লিক ফ্যানটি যখন নেই তখন ৭ বছরের গ্যারেন্টি দিয়েছিল।


 ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্যানটি চলতে চলতে হঠাৎ একদিন বন্ধ হয়ে যায়।সময় না হওয়ার মার্চের ৩ তারিখ ফ্যানটি পরিবর্তনের জন্য,যে দোকানে নিয়েছিলাম সে দোকানে দিয়ে আসি,তারা আমাকে আস্বস্ত করে যে,দুই তিন দিনের মধ্যে আপনি নতুন ফ্যান পেয়ে যাবেন।সেই থেকে আজও দুই তিন দিন শেষ হয়নি।উপরন্তু আমি দুই তিন দিন পর পর ফোন দিয়ে খোজ খবর নেই,কিন্তু তারা বারবারেই জানায় আপনার ফ্যান আসেনি।এদিকে রমজান মাস তার উপর আবার গরম কাল,ঢাকা শহরে শীতের দিনেও ফ্যান ছাড়া থাকা দায়।


 আর আমি বউ নিয়ে ঢাকায় ফ্যান ছাড়া আছি আজ প্রায় দুই মাস!তবুও ফ্যান কোম্পানির সময়ই হয় না।এভাবে বরংবার ঠকানোর ঘটনাগুলো শুধু আমার সাথেই ঘটে।
এরকম লোক ঠকানোর অনেক ঘটনা আমার জানা।তাছাড়া এভাবে আমি নিজেই অনেকবার ঠকে এসেছি।এসব বিষয় নিয়ে বলতে গেলে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যাবে,তাই পর্ব আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।যদি আমার ঠকে যাওয়ার বাস্তব ঘটনা শুনে আপনারা একটু সতর্ক হন,আর আমার মতো না ঠকে,ঠকে যাওয়ার হাতথেকে বাচতে পারেন তবেই আমার সার্থকতা।একটা কথা মনে রাখবেন,অবিজ্ঞতা টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যায়না,অবিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়।আজ এ পর্যন্তই অন্য কোন দিন ২য় পর্ব শেয়ার করবো ইনশাআল্লাহ্।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন