হাফ ভাড়া,জোর যার মুল্লুক তার।

অন্যায় দেখলে কোনভাবেই চুপকরে থাকতে পারিনা।ইদানিং কাজের চাপে হয়তো অনলাইনে অতটা সময়দিতে পারিনা।তবুও অন্যায় দেখলে চুপথাকতে পারিনা,প্রকাশ্যে সম্ভব না হলে গোপনে প্রতিবাদ করি।

শুক্রবার হওয়াতে কাজেরচাপ একটু কম তার উপর বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের খেলা,খেলা দেখছি বটেই,কিন্তু একের পর এক বাংলাদেশী ব্যাটার আউট হওয়াতে খুব একটা মজাপাচ্ছিনা।অনলাইনে খেলা দেখছি,এক পরিচিত ছোট ভাই টেক্সকরছে,কালকে ছাত্রদের আন্দোলন আছে!আমি একটু অবাক হলাম।এখন আবার কিসের আন্দোলন?তাও আবার ছাত্রদের!আমিও একসময় ছাত্রছিলাম,তাই কিসের আন্দোলন জানতে চাইলাম।ছোটভাইটির কাছে জানতে চাইলাম কিসের আন্দোলন?সে জানালো ছাত্রদের হাফ ভাড়া নিয়ে!বাসের হেলপার নাকি কয়েকটি কলেজের ছাত্রদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছে,এমনকি মারধোরের মতো নাকি ঘটনা ঘটেছে।

ছোটবেলা থেকে যে কয়েকটি বিষয়ের উপর আমি বিরক্তছিলাম তারমধ্যে  এই হাফ ভাড়া!!আচ্ছা কোন যুক্তিতে ছাত্রদের কাছে বাসমালিকরা হাফভাড়া নিবেন কেউ বলতে পারেন?

ইদানিংকালে নিত্যপ্রয়োজনীয়দ্রবের লাগামহীনভাবে দাম বেড়েই চলছে।গতোকয়েকদিন আগে তেলেরদাম অনেক বেড়েগিয়েছে।জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবহন খরচটাও বাড়বে সেটাই অবধারিত।আর তার সাথে যারা গণপরিবহন ব্যাবহার করেন তাদের খরচটাও বাড়বে না সেটা অস্বাভাবিক।একারনে বাসমালিক-শ্রমিকরা ভাড়া বাড়িয়েছে।যদিও যৌক্তিক কারনে ভাড়া বাড়ীয়েছেন,সেখানেও মালিক-শ্রমিকরা প্রতারণার আশ্রয়নিয়েছেন।মালিক-শ্রমিকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ীয়েই চলছে,যাতে সাধারণ মানুষদের সীমাহীন কষ্টেদিনপার করছেন। সেটা অবশ্য আলোচ্যবিষয়ন নয়।

হাফ পাশ বা হাফ ভাড়া বিষয়টার যদিও আইনগত কোন ভিত্তিনেই।তবুও বিভিন্নদেশের মতো বাংলাদেশেও হাফ পাশ বা হাফ ভাড়া বিষয়টা চিরাতিয় প্রথাহিসেবে কমবেশী সবাই মেনেনিয়েছে।এই হাফ ভাড়া বিষয়টা হচ্ছে, আইনগত ভিত্তি না থাকলেও হাফ ভাড়া শিক্ষার্থীদের অধিকার। পাকিস্তান শাসনামলে আন্দোলন করেই সেই অধিকার আদায় করেছে শিক্ষার্থীরা।

আমরা বর্তমান সময়ে এমন একটা সমাজে বসবাসকরছি,যেখানে ন্যায়কে অন্যায়,অন্যায়কে ন্যায়,ভালোকে খারাপ,খারাপকে ভালো,বলে নিমেষেই চালিয়েদেয়া যায়।আর এসবের পক্ষে জনসমর্থনের অভাব হয়না।শক্তি আর ক্ষমতা যে কোন কিছুই কতলকরা যায়।

যেখানে স্বাধীনদেশের নাগরিকহয়েও  পরাধীনতা বরণ করতে হয়,যেখানে মানুষের মৌলিক অধীকারের বালাই নাই,সেখানে যার আইনগতকোন ভিত্তিনেই যার,সে হাফ পাশের কি ভিত্তিআছে?হাফ পাশ নিয়ে এখন অনেক বড় বড় কালাম লেখক,গূরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি অনেক কথাই বলছেন,কিন্তু তারাই আবার মানবজীবনের অতিবগুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলোতে নিরব দর্শকের ভূৃমিকা পালন করেন।দেশের সকল সাংবাদিক একহয়ে আজ সরকারের সকল দোষগুলো বাসমালিকদের উপরচাপিয়ে দেয়ার একটা পায়তারা করছে।যেখানে সরকার তেলেরদাম বাড়ীয়ে দিয়েছে,সেখানে বাসমালিক-শ্রমিকরা কি নিজেদের জমিবিক্রিকরে তেলের খরচ তুলবেন?যে সাংবাদিকেরা নিজেদের উপর হওয়া অন্যের বিচার পায়না,তারাই আসছে অন্যের অধিকার পাইয়ে দিতে!

আমি একটা বিষয় কিছুতেই বুঝতে পারছিনা ঠিক কি কারনে,ছাত্রদের হাফ বাসভাড়া নিতে হবে?মানছি যে এতোদিন অনেক বাসমালিকেই ছাত্রদের কাছথেকে হাফভাড়া নিয়েছিলো,আবার অনেক বাসমালিক নেয়নি।সেখানে অনেক অপ্রতিকার ঘটনা ঘটেছে,যেখানে বাসের হেলপার ছাত্রের হাতে মারখেয়েছে,আবার এমনও হয়েছে যে ঘটনাগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীরাও পরিবহনশ্রমিকের হাতে হেনেস্থার শিকার হয়েছে।যা চিরায়িত প্রথা হিসেবে এতোদিন প্রচলিত ছিলো।

ধরে নিলাম ছাত্রদের জন্য হাফ পাশ বিষয়টি অনেক বাসমালিক মানবিক বিষয়হিসেবে নিয়েছে,কারন একজন ছাত্র-ছাত্রীকে প্রতিদিন যাতায়াতকরতে হয়।তার চেয়ে বড় কথাহলো ঐ সব বাসমালিকরা ছিলেন অনেক বড় মনের মানুষ,দেশকে এগিয়ে নেয়ার পিছনে শিক্ষার কোন বিকল্পনেই,তাই দেশকে এগিয়ে নিতে নিজেদের সামর্থ্যানুযায়ী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এতোদিন হাফ পাশ বা হাফ ভাড়া নিয়েছিলো।যাতে দেশটা অনেকদূর এগিয়ে যায়।

কিন্তু এ বাসমালিকদের মহৎ উদ্যোগকের অপব্যবহার করেছে,ছাত্র-ছাত্রী না হয়েও হাতে একটা বই খাতা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রী বনেযায়।কিন্তু দূঃখের বিষয় এই যে স্বাধীনতার ৫০ বছরপরেও বাসমালিকদের আশাপূরন করতে পারিনি।আসংখ্যাজনকভাবে শিক্ষারহার বাড়লেও প্রকৃত শিক্ষার হার বাড়েনি।যেই ছাত্র-ছাত্রীরা এতোদিন হাফ ভাড়াদিয়ে বাসেকরে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশুনাকরে আজ বড় হয়েছে,তারা আজ নিজেদের প্রাইভেট গাড়ীতে করে যাতায়াতকরে।ছাত্র-ছাত্রীথাকাকালিক ঐ সব ছাত্র-ছাত্রীরাই হাফ ভাড়ানিয়ে বাসমালিক-শ্রমিকদের সাথে খারাপ আচরন করেছে।আমিও একসময় ছাত্র ছিলাম আমি দেখেছি গণপরিনহনে যাতায়াতের সময় কেমন ভয়ংকরী হয়ে উঠে।যে কথা বলছিলাম আজ যারা নিজেদের গাড়ীতে যাতায়াত করে তারাও একসময় হাফ ভাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশুনা করেছে।আজ তাদের নিজেদের গাড়ী হয়েছে,আর সেই গাড়ীতে যাতায়াত করতেগিয়ে যদিকোন বাসের সাথে পাল্লাদিতেগিয়ে নিজেই নিজেদের কোন ক্ষতিকরে বসে তাহলেও সেই দোষ ঐ বাসমালিকেরই হয়।এভাবে আর কতোদিন?বাসমালিক-শ্রমিকরা কি সেই সব তথাকথিত ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে সবসময় বন্দিথাকার পরেও,তাদের জন্য হাফ ভাড়া বহাল রাখবে?

তাছাড়া দেশের নামকরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পরছে,অনেক সময় নিজেদের সহপাঠিদের হত্যার মতো জঘন্যতম কাজ করছে।যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উপর অঙ্গুল তুলছে।উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের এমন আচরন এমন হলে, কেমন হয়?

বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ, এখানে চাইলে যে কোন কিছুই করা সম্ভব!ঠিক এ যেন মগের মুল্লুক।(অসমাপ্ত) 
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন