সব পিতা-মাতাই চায় নিজের সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করতে।সবাই চায় তার সন্তান সমাজে যেন মাথা উচুকরে বাচেঁ।কোন কোন পরিবার তার সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করতে পারলেও,অনেক পরিবারেই তাদের সন্তানদের মানুষ করতে পারেনা।তার পরেও চেষ্টার কোন ত্রুটি করেনা।অনেক সময় টাকা-অর্থকরি না থাকলে যতই চেষ্টা থাকুক না কেন ছেলে-মেয়েদের মানুষকরা মুশকিল হয়েপরে।তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম ঘটে,অনেক টাকা-পয়সাওয়ালা মানুষের সন্তানেরা মানুষ হতে পারেনা,আবার অনেক গরিব গরিব ঘরের ছেলে-মেয়েরা এই সমাজে মাথা উচুকরে বাচেঁ।এতকিছুর পরেও গরিব পিতা-মাতারাও কিন্তু সন্তান মানুষ করার ইচ্ছা বা আশা ছেড়েদেয় না।
তেমনি একটি গরিব পরিবারের সন্তান মিলন,তৈয়ব আলী ও লিলি বেগমের ঘর উজ্জল করে মিলন যেদিন আসে,সে দিন সহ দুদিন আগে থেকেই তাদের ঘরে কোন খাবার দাবার নাই।এরই মাঝে তৈয়ব আলী- লিলি বেগমের প্রথম সন্তানের জন্ম।এর পরেও মিলনের পিতা-মাতা তাকে মানুষ করতে চেষ্টাকরে গেছে।শতকষ্ট হলেও মিলনকে স্কুলে ভর্তি করাসহ,স্কুলের সকল খরচাপাতি চালিয়ে আসছিল।মিলনকে মানুষ করতে লিলি বেগম মানুষের বাড়ীতে ঝির কাজ শুরু করে।
এভাবে চলতে থাকলে মিলনও স্কুলে মোটামুটি ভালোছাত্র হয়ে উঠে।সেটা দেখে তৈয়ব আলী ও লিলি বেগমের গর্বেবুক ভরে যায়,ও সন্তানের ভালোর জন্য আরও কঠর পরিশ্রম করেতে থাকে।মিলন ষখন ক্লাস সিক্সে পড়ে তখন তার বাবা তৈয়ব আলী যেখানে কাজ করত,সেটা কোন এক কারনে বন্ধহয়ে যায়।এতে তৈয়ব আলী বেকার হয়েপরে।স্ত্রী লিলি বেগমের পক্ষে সংসার চালা সাথে ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগার করা কষ্টসাধ্য হয়ে পরে।মিলনও সেটা বুঝতে পারে।টাকা পয়সাওয়ালা মানুষের সন্তানেরা হয়তো ততোটা বুঝতে পারেনা,যতটা না অভাব-অনটনের মধ্য থাকা গরিব পরিবারের সন্তানেরা বুঝতে পারে।
মিলন ছোট-খটো কাজের একটা সন্ধান করে,কিন্তু সব গরিব ঘরের সন্তানের মত মিলনও ব্যর্থহয়।কাজ
আমজাদ অনেক চিন্তা-ভাবনা করে মিলনকে তার সাথে কাজ করার প্রস্তাব দিল।আমজাদ মিলনকে বলেছে,সকালে স্কুলে যাবি স্কুল থেকে বিকালে এসে তুই মোর সাথে মুরগি জবাই করার সময় মুরগি ধরবি,এর পর দা,ছুড়ির রক্ত পরিস্কার ও কাস্টমার গোস্ত নিলে তা পলিথিনে ভরেদিবি,পারবি না?মিলন এদিক সেদিক কোন চিন্তা না করেই রাজি হয়েগেল।সেদিন থেকেই মিলন তা জ্যাঠার সাথে বয়লার মুরগির মাংসের দোকানে কাজ করতে ধরে।মিলন পড়াশুনা জানায় আমজাদেরও কিছুটা সুবিধা হয়।কেউ কেউ বাকি নিলে তা সাথে সাথে খাতায় লিখে রাখে,এতে করে ভুলে যাবার কোন সুযোগ থাকেনা।
মিলন যেদিন থেকে আমজাদকে সহযোগিতা করতে হাত লাগিয়েছে,সেদিন থেকেই মিলনকে প্রতিদিন পঞ্চাশটাকা করে দেয়া হত।তাতে লিলি বেগমের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।আশ্চর্য হলেও সত্য মিলন যেদিন থেকে জ্যঠো আমজাদের সাথে যোগদিয়েছে,তার পরের দিন থেকেই আমজাদের ব্যবসা আরও বাড়তে থাকে।দিন দিন ব্যবসা উন্নতি হতে থাকলে আমজাদ তার ভাইপোকে প্রতিদিন পঞ্চাশটাকার পরিবর্তে একশতটাকা করে দিয়েথাকে।এভাবে চলতে থাকলে স্কুলে মিলন খুব খারাব ছাত্রে পরিনত হয়।এর পরথেকেই মিলন স্কুলে যাওয়াই বন্ধকরে দেয়।মিলন ও লিলি বেগমের আয় রোজগারে তৈয়ব আলীর সংসার মোটামুটি ভাবে চলতে থাকে।এরই মধ্যে তৈয়ব-লিলির পরিবারে একটি মেয়ে শিশুর জন্মহয়।
স্কুলের শিক্ষক একদিন মিলনের বাবাকে ডেকে মিলনের ব্যাপারে খোজ-খবর নেয়।মিলনের স্কুলে না যওয়ার ব্যাপারে তাকে অবহিত করাহয়।তৈয়ব আলী সবসময় হেয়ালি মানুষ ছিল।সে মিলনের ঐ শিক্ষককে জানাল,মিলনকে মানুষের মত মানুষ করতেহবে তাই তাকে আর স্কুলে পাঠাইনা!গরিব ঘরের সন্তানদের পড়াশুনা করে কি হবে?তার চেয়ে মিলনকে বড় সন্ত্রাসী বানাবো!?এজন্য তাকে প্রথমে বয়লার মুরগির গোস্তের দোকানে কাজে লাগিয়েছি।যাতে রক্ত,অস্ত্র,ছুড়ি দেখতে দেখতে সে অভ্যস্ত হয়েপরে।খুন-খারাবির সময় রক্ত দেখে যেন সে ঘাবরে না যায়।এলাকার কেউ মিলনের ব্যাপারে বল্লেই তৈয়ব সবাইকে একই কথাই বলে,সে তার সন্তানকে প্রতিবারই সন্ত্রাসী বানানোর কথা বলে।
মিলন ও লিলর রোজগারের ফলে সংসার ভালোই চলছিল।কিন্তু হঠাৎ আমজাদের গোস্তের দোকানও বন্ধহয়ে যায়।এতেকরে মিলন আবারও বেকার হয়েপরে।আগেইতো স্কুল ছেড়ে দিয়েছে তাই আবার স্কুল যাওয়া শুরু করতেও পারেনা।বেকার ফলে আবারও সংসার অভাবে জর্জরিত হয়েপরে।টেনশনে তখন মিলনের মাথায় আকাশ ভেঙ্গেপরার মত অবস্থা।বেকার থাকতে থাকতে একদিন মিলনের মনেহয় তার বাবাতো তাকে সন্ত্রাসী বানানোর কথা বলেছিল।মিলন তখন সেটাই বেছেনেয়।সে সময় মিলনের অত্যাচারে আসেপাশের এলাকাবাসীরা অতিষ্ঠ হয়েপরে।অল্প কিছুদিনের মধ্যে মিলনের নামে হাজার হাজার অভিযোগ উঠে।চুরি,ডাকতি,ছিনতাই এমন কোন কাজ নাই যা মিলন করতো না।
মিলনের এমন অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে এলাকাবাসী একদিন মিলনের বিচার কারার জন্য সালিশ বসায়।এতে মিলনকে সংশোধনের জন্য কোন একটা কাজের মধ্যেরাখার সিদ্ধান্ত নেয়াহয়।সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক মিলনের বাবাকে একটা হোটেল ব্যবসা খোলার পরামর্শ দেয়াহয়।তৈয়ব আলী একাজে অবিজ্ঞ হয়ায়,এই।সিদ্ধান্ত নেয়াহয়।হোটেলের সাথে জড়িত হওয়ার পরথেকে মিলন মানুষের ক্ষতিকরা থেকে বিরত থাকে।
হোটেল ব্যবসা করার পরথেকল লিলি বেগমও মানুষের বাড়ী বাড়ীগিয়ে কাজকরা বন্ধকরে দেয়।মিলন,লিলি,তৈয়ব সবাই হোটেলের কাজে ষোগদেয়।কিন্তু প্রায় তার বাবা-মায়ের সথে ঝগড়া লেগেই থাকতো।অনেক সময় মিলন তার মায়ের গায়েহত পর্যন্ত তুলতো।সে সব বাইরে প্রকাশনা করে বুকে পাথরবেধে সহ্যকরে লিলি-তৈয়ব।সেটাও একসময় চরম মাত্রায় পৌচ্ছে যায়
কথায় কথায় লিলিকে মারধর করে মিলন।সেটাও একসময় তৈয়ব পর্যন্ত চলেযায়।কোন কিছু হলেই বাবা-মায়ের গায়ে হাত তুলে মিলন।
শাররিক শক্তি জোড়ে মিলন তার বাবার চেয়ে শক্তি শালী হওয়ায়,বরাবরই ছেলের হাতে মারখায়,মারখেতে খেতে তৈয়ব এতটাই অতিষ্ঠ হয়েপরে যে মিলন একটু রাগ হলেই তৈয়ব আলী মিলন থেকে পালিয়ে যায়।এসে মিলনের সাহস আরও বেড়ে যায়।
এমনি একদিন তৈয়ব-লিলিকে লাঠিদিয়ে মারার সময় হোটেলে থাকা লোকজন মিলনকেধরে কিছু কিল ঘুষিদেয়।কিন্তু তখন তার বাবা-মারাই এগিয়ে এসে তাকে রক্ষাকরে।আর যারা মিলনকে কিলঘুষি দিয়েছিল তাদের সবার নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করে।এমন ঘটনার পরথেকে মিলন আরও বেশী উশৃঙ্খল হয়েউঠে।তখন একটু কথা কাটাকাটি হলেই হাতের কাছে যা পায় তা দিয়েই আঘাত করে।ঐ ঘটনার পরথেকে মিলন যদি তার বাবা-মাকে মেরেও ফেলে তাহলেও কেউ আর এগিয়ে আসবেনা অবস্থা।
ভাল বলেছেন, লিখতে থাকুন
উত্তরমুছুনদোয়া করবেন
মুছুন