রহিদ তখন অষ্টম, শ্রেণীতে পরে। লেখা-পড়ায় খুব একটা খারাব না, আবার ভালও না। কিন্তু তার একটা খারাব অভ্যাসছিল, গান বাজনা শুনতে শুনতে পড়া-লেখা করা। এ কারনেই রহিদ কিছু কিছু করে টাকা জমিয়ে টেন ব্রান্ডের একটা রেডিও কিনে নেয়।
রেডিও কেনার পর সারাদিন গান বাজনা শুনে আর পড়ার টেবিলে পরে থাকে, তার মনে হতে থাকে বইয়ের সাথে না জানি কতো দিনের প্রেম! যেখানে আগে পড়াশুনার কথা বল্লেই যেকোন অযুহাতে পড়াশুনা না করলেই বাচে। এতেকরে তার মা মনেকরে রহিদ সারাদিন শুধু গানেই শুনে আর পড়ার টেবিলে শুধু শুধু বসে থাকে, কাজের কাজ কিচ্ছু হয়না। এনিয়ে মা-ছেলের মাঝে প্রায় ঝগড়া লেগেই থাকে। রহিদ তার মা কে যতোই বোঝাতে চায়, গান-বাজনা শুনতে শুনতে পড়াশুনা করতে ভাললাগে আর এতে করে তার পড়াশুনা খুবভাল মনে থাকে। যতোবারেই মা কে একথা বোঝাতে যায় ততোবারেই রহিদ ব্যার্থ হয়। তার মা কিছুতেই তা বুঝতে চেষ্টা করেনা। বরং উল্টা বলে এটাতোর পড়াশুনা না করার একটা বাহানা মত্র,পড়াশুনাতো কিচ্ছুই হয়না শুধু পড়ার টেবিলে বসে থাকা ছাড়া। এভাবে চলতে থাকলে রহিদের মা বিভিন্ন জনের কাছে সে কথা বলে বেড়ায়। সবাই রহিদের মাকে পরামর্শ দেয় এটা তার একটা বাহানা, গান- বাজনা শুনতে শুনতে কেউ কি পড়াশুনা করেছে? তা কি কোনদিন কেউ শুনেছেন? আর সেই পড়াশুনা কি কারও কোনদিন মনে থাকে বা থাকার কথা? রহিদের কাছথেকে তার রেডিওটা কোন ভাবে কেরে নেয়ারও পরামর্শ দেয় এলাকাবাসি। এই সব কথাবার্তা শুনে রহিদের মা তার কাছথেকে প্রিয় রেডিওটা কেরে নেয় আর তার এক চাচার কাছে দিয়ে আসে।
এতে করে রহিদ মনে প্রচুর আঘাত পায়। আর আবার আগের মতো পড়াশুনার অমনোযোগি হয়ে ওঠে। তার প্রিয় রেডিওটা না থাকার কারনে রহিদ পড়ার টেবিলে বসেথাকে ঠিকই কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। যা পড়ে তার কিছুই মনেথাকে না। এভাবে কিছুদিন চলার পর রহিদের মা ঠিকই বুঝতে পারে, ছেলে ঠিকই বলেছে গান- বাজনা শুনতে শুনতে তার পড়া-লেখা ভালই হয়। পরের দিন রহিদের মা তাকে বলে যায়, তোর তোর রেডিও আনতে যাচ্ছি,মনদিয়ে পড়াশুনা কর আর শোন রেডিও তো এনেদিচ্ছি এবার রেজাল্ট কিন্তু ভালকরা চাই.....
রহিদ অনন্দে অত্বহারা হয়ে তাড়াতারি পড়তে বসে। কিন্তু অনেক্ষন হয়ে যাওয়ার পর যখন সে দেখতে পেল তা মা এখনো অসছে না, তখন স্বভাব সূলভ রহিদ অধৌয্য হয়ে পরে। রহিদ অধৌয্য হওয়ার কারনে কিছুতেই সময় যেতে চাইছে না। সময় কাটানোর জন্য রহিদ একটা পরিকল্পনা করলো। যেহেতু রেডিও আনার জন্য সে নিজে যেতে পারছে না, গেলে হয়তোবা তার মা বিগরে যেতেপারে। এতে করে আজীবনের জন্য হাতছাড়া হয়েযেতে পারে তার প্রাণের প্রিয় রেডিওটা। তাই রহিদ মনেমনে ভাবলো, আমাদের বাড়ীটা
হেটে হেটে বিশ পাক দিলেই মা রেডিওটা নিয়ে আসবে।
এরকম ভাবনা রহিদ প্রায়ই করেছিল, তার ফলাফলও ভালই হয়েছিল। যেমন একদিনের কথা বলা যায়, সে একা বাড়ীতে ছিল বাড়ীতে বাবা মা কেউ ছিলনা, ক্রমেই দিনথেকে রাত হয়ে আসছে তবুও কেউ আসছেনা, অন্ধকার রাত হওয়ার কারনে বাড়ীতে সে একা থাকতেও ভয় পাচ্ছে। সে কারনেই রহিদ বাড়ীর বাইরে রাস্তার ধারে দাড়িয়ে থাকে আর পথে তার বাড়ীর লোকজন আসার অপেক্ষার থাকে।সেদিনও রহিদ এরকম একটা পরিকল্পনা করেছিল, রাস্তা দিয়ে পঞ্চাশটা রিক্সা গেলেই তার বাবা-মা বাড়ীতে আসবে। যেহেতু তার বাবা-মা রিক্সায় বাড়ী ফিরবে সেহেতু রাস্তার বিভিন্ন গাড়ী ঘোরা থকতে সে রিক্সাকে বেছেনিল। সেদিন রহিদ দেখলো উনপঞ্চাশটা রিক্সা যওয়ার পরে পরের রিক্সাটাতে তার বাবা-মা বাড়ী ফিরে আসে।
রদিহ বাড়ীর পিছন দিয়ে হাটাশুরু করলো এক একটা পাক দিচ্ছে আর বাড়ীর পিছন দিকেএকটা ঘরের কোনে হাতেথাকা বাশের কন্চি দিয়ে একটা দাগটেনে দিচ্ছে কতো পাকহলো তা মনে রাখার জন্য। এভাবে করতে করতে, রহিদের এক চাচি এক সময় তা দেখতে পেল। তাতে রহিদ কিছুটা লজ্জিত হলো। তাই সে দাড়িয়ে আছে আর ঐ চাচাদের বাড়ীর দিকে দেখছে। সেখানে তার মা রেডিও আনতেগিয়ে কি কথা বলছে তা সে শুনতে চেষ্টা করে। রহিদ শুনতে পেল তার ঐ চাচা রেডিওটা দিতে রাজি হচ্ছে না! উল্টা তার মা কে কি যেন বুঝাচ্ছে। রহিদকে রেডিও দিলে সে পড়াশুনা একদম করতে পারবে না। তবুও রহিদের মা কিছুই বুঝলনা, তার রেডিওটা চাই। কারন রেডিও আনতে যাওয়ার সময় রহিদ তার মা কে সম্ভাব্য অনেক কিছুই বলেছে যা তার ঐ চাচারা বলতে পারে তা ঠিক ঠিক ঐ কথাগুলোই বলেছে তার চাচা! সেটা দেখে চাচা হতাশ হলো, কারন সেও এই কয়েকদিনে রেডিওর নেশায় আশক্ত হয়ে পরেছে, যে কোন মূল্যে চাচা রেডিওটা রাখতে চায়। সে আরও রহিদের মাকে বুঝায় ভাবি আপনি কোন কারনেই বুঝতে পারছেন না , রহিদকে রেডিও দিলে সে আর কখনো পড়াশুনা করতে পারবেনা, তাই বলি কি, রেডিওটা আমার কাছে থাক বরং এর বদলে এর দাম যা হয় নিয়ে যান কিন্তু রহিদের মা রেডিওটা না নিয়ে ছাড়বেন না, তার রেডিওটা চাই। কারন রহিদ যা বলেছে তার সবেই মিলে যাচ্ছে, সেই সব কথাই বলছে যা রহিদ বলেছিল রেডিও আনতে গেলে চাচা এ সব কিছু বলতে পারে। এতোক্ষন রহিদ দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসব কথা শুনছে, ততোক্ষণে রহিদের চাচি সেখান থেকে সরে গেছে, সেটা দেখে রহিদ আবার তার বিশ পাকের বাকি পাক শুরু করলো। দুই পাক দেয়ার পরে তার ঐ চাচি এসে বল্লো কি করছিসস তুই এখানে? রহিদ কোন কথা না বলে দাড়িয়ে আছে। আসলে সত্যি কথা বল্লে চাচি বিশ্বাস করতে চাইবে না উপ
রন্ত তার মাকে বলে দেয়ার চান্স আছে।
অসমাপ্ত
valo
উত্তরমুছুন