ওদেহ রাইশার খুনি নয়

রাইশা ঢাকার একটি বেসরকারি হাইস্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ে। রাইশার স্কুল ড্রেসটি রংচটা হয়েগেছে। এজন্য স্কুলে তাকে অনেক কথা শুনতে হয়। তার বাবা ছিল না। মা কোন রকমে একটি চাকরি করে সংসার চালায়। মেয়েকে যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য কষ্ট হলেও তাকে ঐ স্কুলে ভর্তি করান। স্কুল কমিটির চিঠি ও রাইশার আবদারে তার জন্য স্কুল ড্রেসের কাপড় নেয়া হয়। হারহামশাই যে ট্রেলার্সে তারা কাপড় দেয় সেই ট্রেলার্সেই কাপড় সেলাই করতে দিল। কাপড় ডেলিভারির জন্য রশিদে ফোন নাম্বার দিতে হয়। সেখানে রাইশা তার নিজের নাম্বারটি দিল। ঐ ট্রেলার্সে নতুন এসেছে দিনাজপুরের ছেলে ওহেদ। সে ঐ ট্রেলার্সে দর্জির কাজ করতো। রশিদের সেই মোবাইল নাম্বারটি ওদেহ যত্ন করে মনে রাখে। প্রায় ঐ নাম্বারে ফোন দিয়ে বিরক্ত করতো। এভাবে রাইশাকে অনেক বিরক্ত করতো। এক পর্যায়ে তার মা ঐ সিমটি পরিবর্তন করে, সাথে সাথে  ঐ ট্রেলার্সে ওহেদের নামে অভিযোগ করে। অভিযোগ করার পরপরেই, ট্রেলার্স কর্তিপক্ষ ওহেদকে চাকরি থেকে বহিঃস্কার করে। এতে ওহেদ  আরো রেগে যায়। এর পর থেকে রাইশার স্কুলের সামনে দাড়িয়ে থাকতো। ওহেদ বিভিন্নভাবে রাইশাকে উতক্ত করতো। কিন্তু রাইশা তাকে পাত্তাই দিতো না। এভাবে চলতে থাকলে
রাইশা আবার বাসায় এসে তার মাকে সে কথা বলে। এর পর রাইশা আর স্কুলে যায় না। তার মাও স্কুলে যেতে জোর করে না। পাছে কিছু হলে কেন উপায় থাকবে না। আর এদিকে কয়েকদিন রাইশাকে আসতে না দেখে অনেক দূরে চলে যায়। এভাবে কয়েক দিন স্কুলে না যাওয়ার কারনে আবার স্কুল কমিটি থেকে চিঠি আসে রাইশার মায়ের কাছে। তাছাড়া রাইশার বন্ধুরা প্রায় এসে তাকে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু সে যায় না। চিঠি পাওয়ায় পর রাইশার মা জবাবে রাইশার স্কুলে না যাওয়ার ব্যাপারে বলে। স্কুল কমিটি তখন বলে রাইশাকে স্কুলে পাঠান। ব্যাপারটি আমরা দেখব। আশ্বাস্ত হয়ে পরেরদিন থেকে মেয়েকে স্কুলে পাঠান। রাইশা
সে দিন ভয়ে ভয়ে স্কুলে যায়। ঐ দিন আর ওহেদকে আর দেখা যায় না। এভাবে কয়েক দিন যাওয়ার পর রাইশা স্বাভাবিক হয়ে যায়। স্কুল কমিটি বা তার মাকে সে বিষয়ে রাইশা কিছু বলে নি। এমনকি কমিটি বা তার মা কেউই ওহেদর বিষয়ে কিছু বলে নি। তারও বেশ কিছুদিন পর কেউ একজন রাইশাকে স্কুলের পথে আটক করে। দু'জনের মধ্যে কথা কটা কাটির এক পর্যায়ে ছেলেটির কাছে থাকা চাকু দিয়ে আঘাত করে। এতে রাইশা গুরুতর আঘাত পায় এবং মাটিতে লুটিয়ে পরে। সেটা দেখে ছেলেটি পালিয়ে যায়। রাইশাকে এলাকাবাসি উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় ও তার বাসায় খবর দেয়। কয়েক দিন হাসপাতালে থাকার পর রাইশার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে রাইশার মা সন্দেহমূলক ওহেদের নামে মামলা করে, ও ওহেদ যে রাইশাকে বিরক্ত করতো সেটা গণমাধ্যমে প্রকাশ করে। ওহেদ ঢাকার বাইরে থাকার পরও বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারে। কিন্তু মেয়েটির নাম যে রাইশা তা সে তখন পর্যন্ত জানতোনা! নিজের ফেসবুকে রাইশার ছবি সহ খবর দেখার পর নিশ্চিত হয়, তার নাম রাইশা ছিল। এও জানতে পারে রাইশার মা যে ওহেদের নামে মামলা করেছে সে সেই ওহেদ। ওহেদ মানুষের সাথে পরামর্শ পালিয়ে তার ভগ্নিপতির বাড়ীতে যায়। এদিকে মামলা করার কারনে পরলিশ হন্য হয়ে ওহেদকে খুজতে থাকে। পালাতক থাকার কারনে সবাই ধরেই নেয়, রাইশাকে ওহেদেই খুন করেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ পরিবেশন করে। এতে ওহেদ বিপাকে পরে যায়। আবার সে মানুষের পরামর্শে গাঁ ঢাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে ওহেদ দিনাজপুরে তটার ভগ্নিপতির বাড়ীতে যায়। সেখানে লোকজন দেখতে পেলে। মূহুত্বের মধ্যে সে খবর ছড়িয়ে পরে। সে খবরের রেশ ধরেই পুলিশ তার ভগ্নিপতির বাড়ীতে তল্লাশি করে। ওহেদ কে না পেয়ে তার বোন ও ভগ্নিপতিকে আটক করে। সে খবর শুনা মাত্র ওহেদ অন্যত্র চলে যায়। এবার সে পাশের জেলা নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় আত্বগোপন করে। সেটাও পুলিশ টেরপেয়ে যায়। সন্ধায় পুলিশ সেখানেও অভিযান চালায়। অভিযান ব্যর্থ হলে, এলাকাবাসিকে ওহেদের ছবি দেখিয়ে বলে, যেখানে দেখবেন তাকে আটক করে পুলিশকে খবর দিবেন। সেখান থেকে পুলিশ চলে আসে। এর পরের দিন সকালে ওহেদ নাস্তা করার জন্য হোটেলে যায়, ঠিক সেই সময় মাছ ব্যবসায়ী দুলু দোকান খুলতে যায়। গিয়ে ওহেদকে সন্দেহ হয়। কিন্তু প্রথমে দুলু ভেবেছিল কোন বাস যাত্রি হবে হয়তো।
এরপর দেখাহয় অটোচালক ডালুর, ওহেদ ও ডালু এনিয়ে আলোচনা করছে। এরই মধ্যে একটি বাস এসে থামলেও ওহেদ বাসটিতে উঠেনা। আবার তাদের মধ্যে সন্দেহ বেড়ে যায় এবার কৌশলে দুলু ও ডালু বাজার থেকে হাফ কিলোমিটার মটোর সাইকেলে করে গিয়ে আটক করে। নানা প্রশ্নের মাঝে স্বিকার করে যে সেই ওহেদ! এ কথা বলার পরপরেই ওহেদ বলে দু'দিন কিছু খাইনি। ওহেদ ও ডালু তাকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে কিছু খাবর দিতে অর্ডার করে। আর এই ফাকে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়েই পুলিশ ডোমারে ছুটে যায় ও ওহেদকে উদ্ধার করে। উদ্ধার করে নীলফামারী নিয়ে আসে। এরপর বিকেলেই ওহেদকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন ওহেদকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড নেয়ার পর ওহেদের উপর প্রচুর নির্যাতন করা হয়। কিন্তু স্বিকার করেনা যে, সে রাইশাকে খুন করেছে। সে জানায় রাইশা স্কুলে আসা বন্ধ করলে সে নারায়ণগঞ্জে চলে আসে আর রাইশার ব্যাপারে এর পর থেকে কিছু জানে না........

★লেখাটি একটি বাস্তব ঘটনা থেকে নেয়া, তবে কিছু কাহিনী লেখকের নিজের মতো করে লেখা।

আপনার মূল্যবান মতামত প্রদান করুন

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم