বৈষম্য বলতে প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবকে বুঝে থাকি। পৃথিবীর সবখানে আজ বৈষম্যের বেড়াজালে বন্দি। রাষ্ট্র থেকে সমাজ, সমাজ থেকে পরিবার সকল স্থানে একজন আর একজনের দ্বারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। কিন্তু এই বৈষম্য রাষ্ট্র থেকে নয় বরং নিজ পরিবার থেকেই উঠে আসছে। সমান সুযোগ সুবিধা থাকার পরও এমনকি একই অংশিদার হওয়ার পরও সমান সুবিধা ভোগ করতে না পারাকে বা না দেওয়া হলে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। পারিবারিক বৈষম্যের কথা বলতেই আমরা সাধারনত বুঝে থাকি ছেলে-মেয়েদের বৈষম্য।যেখানে মেয়ে রা সব সময় বৈষম্যের শিকার হয়। কিন্তু সব সময় সেটা হয় না এর কিছু ব্যতিক্রম ও হয়। এমনি একটা পরিবারের কথা আজ তুলে ধরবো, যেখানে নিজ পরিবারের কাছে বৈষম্যের স্বিকার হচ্ছে একটি ছেলে।
আনিছুর রহমানেরা ছিলেন পাচ ভাই। আনিছুর ছাড়া তার বাকি চার ভাই ছিল মোটামুটি শিক্ষিত একভাই
তো শিক্ষক ও ছিলেন। আনিছুরে অক্ষর জ্ঞানও ছিলনা। অক্ষর জ্ঞান না থাকায় সে ভাবতো সে মনেহয় সবসময় তার বড় ভাইদের দ্বারা ঠকে আসছে, সে যতোটা ভাবতো ততোটা ঠিক নয়। কিন্তু ঠকছে ঠিকই। আনিছুরের দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। নিজের অক্ষমতার জন্য আনিছুর প্রতিজ্ঞা করে তার ছেলে মেয়েদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলবে। নিজে যা ঠকেছে ঠকেছে তার ছেলেমেয়েদের ঠকতে দিবে না।
সেভাবেই তার ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করছে। এরই মধ্য বড় ছেলে সামছুল এসএসসি পাস করে সরকারি পলিটেকনিকে পড়ছে। তার ছোট ভাইটি নিজ জেলার একটি ভোকেশনাল স্কুলে পড়ছে। মেয়েটি জেলার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ছে। এখানেই শুরুহয় বৈষম্য!বড় ছেলেকে আনিছুর রহমান প্রতি মাসে প্রায় সাত হাজার টাকা করে পাঠায় অন্যদিকে মেয়েকে প্রতিদিন ৫০টাকা করেদেয়। কিন্তু ছোট ছেলে সুজাকে একটি টাকাও দেয়না। কিন্তু সুজা মানুষের বাড়ীতে কাজ করা ছাড়াও বিভিন্ন কাজ করে নিজের খরচ নিজেই চালায়। এরই মধ্যে সামছুল তার ডিপ্লোমা শেষ করে। আর ছোট ছেলে এইচএসসি পাস করে। কিন্তু টাকার অভাবে তার পড়াশুনা বন্ধহয়ে যায়।পরিবর্তে সে বাজারে একটি দোকান দেয়। আর সামছুল একটি কোম্পানিতে নামমাত্র বেতনে চাকরি করে। সুজা দোকান করে পরিবারের প্রায় সব খরচ চালাতো। সামছুল কোন মাসে দুই হাজার কোন মাসে তারও কম কোন মাসে একটি টাকাও দেয় না। অথচ বিভিন্ন কারন যেমন চাকরির জন্য, আরও পড়াশুনা করার জন্য বিভিন্ন সময় অনেক টাকা নেয়। বৈষম্য এখানেই শেষ নয়। চাকরি করার সুবাদে দিনে প্রায় একাধিক বার ফোন করে খোজ খবর নেয়। কিন্তু সুজার সাথে কর্কশ ব্যবহার করে। সুজার প্রতিদিনে কর্ম তালিকা দেখলে বুঝা যাবে সে কতোটা বৈষম্যের শিকার হয়।
সুজা দোকান করার কারনে সকালে একটু দেড়িতে উঠে,একারনে তার বাবা প্রতিদিন বকাঝকা করে। ঘুমথেকে উঠেই সুজা গরুর জন্য খদ্য তৌরি করে এর পর খেয়েদেয়ে বাইরে যায়, এই বাইরে যাওয়াও তার বাবা-মা সহ্য করতে পারেনা। শুরুহয় অকর্থ গালাগাল। দুপুরে খেতে বসেও দু'চার কথা শুনতে হয়। এর পর আবার দোকান, সেখান থেকে আসে রাত ১২ টার পর। এভাবেই সুজার দিন যায়।
এর পরেও সুজাই হোক বা তার বাবাই হোক বাজার থেকে ভাল-মন্দ কিছু আনলে তা আর খাওয়া হয় না,সামছুলের অপেক্ষায় থাকতে হয়। সুজা এতো কিছু করার পরও ভালটা খেতে পরেনা! মা-বাবা বলে সামছুল বাইরে থাকে ভালো মন্দ খেতে পারেনা তুই(সুজা) তো কতো কিছুই খাস! কিন্তু তারা এটুকু ভাবেনা, আমরা যা খাই তার সবেই সুজা খায়, সুজা কিছু খেলে সেটা বাড়ীতে নিয়ে আসে। কিন্তু সামছুলতো তাদের জন্য কিছু করেনা, সে তো সুজার মতো পরিশ্রম করেনা। সারাদিন সে তো অফিসে বসে থাকে। সুজা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে। সামছুল কোন ভূল করলে সবাই হেসে উড়েদেয়, কিন্তু সুজার সামান্য ভূলে সমস্ত বাড়ী মাথায় নেয়।
এভাবে চলতে চলতে সামছুল পড়াশুনা শেষ করে। একটি মানসম্মত চাকরি পায়। চাকরি পাওয়ার পর কয়েক মাস বাড়ীতে টাকা পাঠায়। কিন্তু তার পর আর পাঠায় না। এই ফাকে সামছুল বিয়ে করে বউ নিয়ে বাইরে থাকে। শুধু বছরে দুই ঈদে বাড়ী আসে। আর সুজা এখনো সেই দোকানটাই করছে। ছোট বোনটাকে যে বিয়ে দিতে হবে তার কোন ধারেই ধারেনা সামছুল। এদিকে তার বাবা-মা কষ্ট করে সামছুলকে মানুষ করার কথা ভাবে আর চোঁখের জল ফেলে। তারা অনুশোচনায় ভোগে সামছুলের পিছনে নিজের জমি বেচে খরচ করে সুজা ও তার বোনকে ঠকিয়েছে এই কথা সুজার কাছে বলে আর ক্ষমা চায়। কিন্তু সুজা হাল ছাড়ার পাত্রনয় বরং সে তারপরও মা-বাবাকে শান্তনা দেয়।
তবুও যখন সামছুল দুই ঈদে বাড়ী আসে তখন তাদের সমাদরের অভাব হয় না। সামছুল তার বউ ছেলেদের নিয়ে এসে সুজারটা খেয়ে যায়। যাওয়ার সময় এটাও বলে যায় আমরা না খাব তা কে খাবে। বাবার সকল জমিতো সেই খাচ্ছে। বোনের বিয়ের কথা বল্লেও সেই একই কথা বলে।
দারুন
ردحذفHum bro
ردحذفT
ردحذفঠিক
ردحذف