আজব পৃথিবী!

সত্যি পৃথিবীটা একটা আজব কারখানা! প্রাচিন কালথেকেই যেকোন ঘটনা ঘটারপর এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায়ী করে আসছে। সেটা কোন পক্ষ করুক আর নাই করুক। আর একারনেই প্রকৃত অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকেযায়। আরও বেশী উৎসাহ পায় অপরাধ করার। এভাবে একের পর এক অপরাধ করতেই থাকে অপরাধীরা, অপরদিকে এর দায়নিয়ে অনেক জল ঘোলাহয়।


আসলে আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে নয়, দেখি অন্য হিসেবে! আমরা অপরাধীকে দেখি, বংশ পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয় ও ধর্ম পরিচয় হিসেবে! তাদেরকে মানুষ ও অপরাধী না ভেবে এসব পরিচয়েই মূখ্য হিসেবে দেখাহয়। আর এসব কারনেই অপরাধের মাত্রা দিনদিন বৃদ্ধিপাচ্ছে বলে আমি মনেকরি।


কয়েকটি উদাহরন দিলে বিষয়টা কিছুটা বুঝাযাবে। যেমন আজ ১২ জুন ২০১৬ তে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যে এক বন্দুকধারির হাতে ৫০ জন পুরুষ সমকামি প্রাণহারিয়েছে। যেটা যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫ বছরে সবচেয়ে ভয়াভয় ঘটনা বলে মনেকরা হচ্ছে। যার বিবরন নিচে দেয়া আছে।


এঘটনা যে ঘটিয়েছে তার নাম ওমর মতিন, তাকে অবশ্য পুলিশ ঘটনাস্থলেই মেরে ফেলেছে! এখানে তাকে একজন মানুষ ও অপরাধী হিসেবে দেখাহচ্ছে না, তাকে দেখাহচ্ছে একজন মুসলিম হিসেবে! আর এ থেকে মুসলিমদের সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সড়যন্ত্র করাহচ্ছে। যা কোন ভাবেই কাম্যনয়। এথেকে যারা ঘটনার মূলহোতা তারা আড়ালে চলে যাচ্ছে। মুসলমানেরা হয়ে পরছে সন্ত্রসী! শুধু নামের কারনেই  সারা বিশ্বের মুলিমরা আজ সন্ত্রাসীতে পরিনত হচ্ছে। অথচ ইসলাম কেন কোন ধর্মেই মানুষ হত্যা করার বৈধতা দেয়নি বলে মনে করি। এখানে ওমরকে অপরাধী হিসেবে নয় বরং মুসলিম হিসেবে বেশী পরিচয় দেয়াহচ্ছে। যারফলে বিচার বা তদন্ত প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে বলে মনেহয়।
ছবিঃ ইন্টারনেট।


বাংলাদেশে  কোন মুসলমান যদি হিন্দুদের উপর হামলা বা অন্য কোন কারনে বিরোধ দেখাদের তাহলে সেটাকে সাম্প্রদায়িক হামলা বা বিরোধ বলাহয়। এ বড়কারন হলো বাংলাদেশে হিন্দুরা সংখ্যালষু।এখানে অপরাধিকে অপরাধী হিসেবে নয় ইসলাম ধর্মের মানুষ বলে মনেকরাহয়। এটাকে বলাহয় কট্টর ইসলামপন্থি।এখানে হামলাকারী বা বিরোধীরা মুসলিমদের অনেকের বাহবা পায়, আর হিন্দুদের ছোট জাত বলেমনে করা হয়।
ছবিঃ ইন্টারনেট।

অপরদিকে ভারতে যদি কোন কারনে হিন্দু, মুসলিম বিরোধ দেখাদেয়, তাহলে তাকেও সাম্প্রদায়িক বিরোধ বলে প্রচার করাহয়। এরও কারন হলো ধর্ম ভারতে মুসলিমরা হলো সংখ্যালঘু। এখানে অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে নয় হিন্দু ধর্মের মানুষ বলে মনেকরাহয়। এটাকে অনেকে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বলে মনেকরেন। এখানে হামলাকারী বা বিরোধীরা অনেক হিন্দুদের বাহবা পায়, আর মুসলিমদের ছোটকরে দেখান হয়।


আগের ঘটনাগুলো বাদেই দিলাম, এই একই সময়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের নির্দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সপ্তাহ ব্যাপি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। যদিও এর আগে জঙ্গি তৎপরতায় অনেক মানুষ প্রাণহারিয়েছে।তথাপি ৫ ই জুন চট্রোগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার পরথেকে দেশের নিতীনির্ধারকদের টনক নড়ে যারফলে বর্তমান বিশেষ অভিযান। এতে সাধারন মানুষ সহ বিভিন্ন মামলার আসামীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। যদিও বিভিন্ন মানবাধীকার সংগঠন মনেকরছে এই বিশেষ অভিযানে সাধারন মানুষকে হয়রানি করা হতেপারে বা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও দেশের দুটি প্রধাণ রাজনৈতিক দল আওয়ামিলীগ ও বিএনপি মনেকরছে এটাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করাহচ্ছে! আওয়ামিলীগ ও সরকারের নিতীনির্ধারক একজন বলেছেন, যারা আটকহচ্ছেন তাদের বেশী ভাগই বিএনপি,জামাত-শিবির। এদিকে জামাত-শিবির যেহেতু বিএনপির একটা বড়অংশ। তারা বলছেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে এই বিশেষ অভিযানকে ব্যবহার করে তাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার কৌশল অবলম্বন করাহচ্ছে। এখানে অপরাধীকে মানুষ ও অপরাধী হিসেবে নয়, রাজনৈতিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যার কারনেই কোন অপরাধের সুস্ঠ বিচার হচ্ছেনা। বরং দিনদিন সহিংসতা ও অপরাধ প্রবনতা বেড়েই চলছে।
ছবিঃ ইন্টারনেট। 



ফ্লোরিডার ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ
সমকামীদের নাইট ক্লাব ‘পালস’-এ বন্দুকধারীর হামলাকে গত ৬৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলা বলছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৫০ জন। প্রভাবশালী গণমাধ্যমটির তথ্যমতে ‘নাইন-ইলেভেন’-এর সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে এটাই কোনো হামলায় সর্বোচ্চ প্রাণহানীর ঘটনা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকধারীর হামলায় নিহতের ঘটনা নতুন নয়। আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতায় সেই ১৯৪৯ সাল থেকেই নিয়মিত গোলাগুলির ঘটনা ঘটে আসছে।
১২ জুন, রোববারের ঘটনার আগে সর্বোচ্চ প্রাণহানীর ঘটনাটি ঘটেছিলো ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল। ওই দিন ভার্জিনিয়ায় ২৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীর গুলিতে নিহত হয় ৩২ জন।
এরপরই আসে ‘স্যান্ডিহুক’ হত্যাকাণ্ডের নাম। ২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর কানেক্টিকাট অঙ্গরাজ্যের স্যান্ডিহুক স্কুলে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় অ্যাডাম লাঞ্জা নামের এক বন্দুকধারী। এতে ৫-৬ বছর বয়সী ২০ জন শিক্ষার্থী ছাড়াও মোট ২৭ জন নিহত হয়।
এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরা সংস্থা ‘ম্যাস শুটিং ট্রাকার’ এর তথ্যানুযায়ী ২০১২ সালের স্যান্ডি হুক হত্যাকাণ্ডের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই মোট ১৪২টি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
আর সব মিলিয়ে ২০১৫ সালেই নির্বিচারে গুলি চালানোর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। সে বছর ২৭৪ দিনে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ২৯৪ টি এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে জানায় ওয়াশিংটন পোস্ট।এসব হামলার মধ্যে ৪৫ টি সংঘটিত হয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
এসব ঘটনার জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতাকে দায়ী করা হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বারবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রক্তাক্ত হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের পর মার্কিন গণমাধ্যমের কাছে হোয়াইট হাউস সেক্রেটারি জশ আর্নেস্ট জানান, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ওবামা প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে বিষয়টিকে আইনি ভিত্তি দিতে সাধারণ মার্কিনীদের সমর্থন প্রয়োজন হলেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি।
হত্যাকাণ্ডগুলোর পিছনে জন্য মানসিক অসুস্থতা, অস্ত্রের সহজলভ্যতা এবং ব্যক্তিগত ক্ষোভকে দায়ী করে মার্কিন গণমাধ্যম।
তবে আদর্শিক কারণেও গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান বার্নার্ডিনোতে বন্দুকধারী পাকিস্তানি দম্পতি রিজওয়ান মালিক ও তাশফিন মালিক গুলি চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করে। ওই দম্পতির সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস’র সংশ্লিষ্টতা পায় মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই।

★তথ্য সূত্রঃ সিসিএন ও ইন্টারনেট। 
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন