দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য

দোনালা বন্দুকের সম্মুখে দাড়িয়ে আছি,ভয়ে পা দুটো থরথর করে কাঁপছে,প্যান্টের ফাঁক দিয়ে পা বেয়ে উত্তপ্ত তরল পদার্থ বেরিয়ে পড়ছে!তর্জনির এ্যাক টানে এই তরতাজ দেহটি নিশ্চিত নিথর হয়ে পড়বে জেনেও এই আজগুবি কাল্পনিক তথ্যটি আমার মুখ দিয়ে বের হবে না।
 লড হ্যালিফক্সে সেই কবেই বলে গেছেন "দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিতাজ্য"অথবা "১০০ মূর্খ বন্ধুর চেয়ে,একজন শিক্ষিত শত্রু ভালো" আরো কত প্রবাদ।দুর্জনের স্বভাব-ধর্ম অন্যের ক্ষতি করা। তাই কোনো শিক্ষিত লোক যদি চরিত্রহীন হন, তবে অবশ্যই তার সঙ্গ পরিহার করা উচিত। কারণ, তার কাছ থেকে উপকার পাওয়ার চেয়ে বরং ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।জ্ঞান মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সাহায্য করে। তবে বিদ্বান হলেই যে মানুষ চরিত্রবান হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর কোনো চরিত্রহীন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তাকে এড়িয়ে চলা উচিত।শুধু মানুষের ঘরে জন্মগ্রহণ করলেই মানবিক গুণসম্পন্ন হয় না জন্মের পরে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। বিদ্যা মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সহায়তা করে। এজন্য মানুষ জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করে বিদ্যার্জন করে। বিদ্বান ব্যক্তি সর্বত্রই সম্মানের পাত্র। সকলেই তাঁকে মান্য করে। তাই বিদ্যা মূল্যবান এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু চরিত্র তার চেয়েও মূল্যবান। চরিত্র মানুষের সাধনার ফল। সাধনার জন্য প্রয়োজন তপস্যা; যা মানুষের প্রবৃত্তিকে প্রখর করে, বুদ্ধিকে শানিত করে, আচরণকে মার্জিত করে, হৃদয়কে প্রশস্ত করে, মনকে দৃঢ় করে, শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী করে। চরিত্রই মানুষের মনুষ্যত্বের রক্ষাকবচ। সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা বিদ্বান হলেও চরিত্রহীন। এসব চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তি দুর্জন ব্যক্তি হিসেবে সমাজে পরিচিতি লাভ করে। সমাজের সকলেই তাকে পরিত্যাগ করে।শিক্ষিত লোক মাত্রই যদি চরিত্রবান হত,তাহলে বাংলাদেশ আজ দুর্নীতির শীর্ষে অবস্থান করতে পারত না।

আজ যাকে নিয়ে লিখছি সে একাধারে আমার আত্মীয়,গুরুজন,শিক্ষক ও এলাকার একজন সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব।এমন কি তিনি একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতাও বটে ।তিনি আমার কলেজের শিক্ষক হলও তার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার মত দুর্ভাগ্য আমার হয়নি!

১৪ই আগস্ট বাংলাদেশ তথা প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মৃত্যু বরণ করেন।যে কিনা বাংলাদেশে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন,যুদ্ধাপরাধী,মানবতা বিরোধী অপরাধী ছিলেন।আমরা যাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবেই চিনি।মনে আছে সেই ২০১৩ সালের ৩ মার্চ সেই বিভীষিকাময় ভোররাতের কথা। এর দুই দিন আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত।
এরপর চাঁদের ছবির সঙ্গে সাঈদীর ছবি মিলিয়ে সুপার এডিট করে ‘বাঁশের কেল্লা’ ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়। এতে সহিংসতা আরম্ভ হয়। ওই দিনই সারা দেশে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়। পরদিন শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে নিহত হয় ৩ জন ও শনিবার ৬ জন।

পরদিন রবিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকে জামায়াত। এর আগের রাতে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে,ফোন দিয়ে সাঈদীর মুখ চাঁদে দেখা গেছে বলে প্রচার করা হয়। গভীর রাতে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে বলা হয়, ‘চাঁদের গায়ে সাঈদীর মুখ দেখা যাচ্ছে। তার মানে, তিনি ইমানদার লোক। তাকে বাঁচানো সবার ইমানি দায়িত্ব।’

গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে ভোররাতে চাঁদে সাইদীকে দেখতে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মান্ধ  মানুষ। মোবাইল ফোনে একে-অপরকে বলেন চাঁদে সাঈদীকে দেখতে।অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গভীর রাতে ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে তোলা হয়। চাঁদ ও সাঈদীকে নিয়ে গুজব তাদের মধ্যে তৈরি করে এক ধরনের হেলুসিনেশন।

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চক্রটি শুরু করে ভয়ংকর তাণ্ডব। চলে গানপাউডার ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগ, বোমা-ককটেল বিস্ফোরণ, লুটপাট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ। হামলা চালানো হয় থানাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে। সবচেয়ে বিভীষিকাময় অবস্থা সৃষ্টি হয় বগুড়ায়। সেখানে পাঁচটি থানা ও ছয়টি পুলিশ ফাঁড়িতে একযোগে হামলা করা হয়। কয়েকটি ফাঁড়ি পুড়িয়ে দেয় ধর্মান্ধ  উন্মত্ত মানুষগুলো।



 সে সময় আমি বিশ্বাস না করলেও,আমার মত অনেকেই সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার বিষয়টি বিশ্বাস করে।কিন্তু সে সময় বিশ্বাস করলেও এখন অধুনিক যুগে এসে অনেকেই তা বিশ্বাস করতে চায় না।তবে সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার বিষয়টি এখনো যারা বিশ্বাস করেন তাদের সংখ্যাটি কিন্তু কম নয়।যেমন আমার সে শিক্ষক ১৫ ই আগস্ট তার ফেসবুক পোষ্টে বলেছেন,তার এই পোস্টটি দেখার পর থেকেই তার প্রতি একটা ঘৃণা ভাব চলে আসে।যে কিনা একটি রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য হাসিল করতে এমন কান্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য করতে পারে।এ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী কে হত্যা চেস্টাও করেছে। মোটকথা  সে এমন কোন কাজ নেই যা করতে পারে না।


এমন দায়িত্ব ও কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য দেয়ার পরেও সে আমার গুরুজন ও শিক্ষা গুরু হতেই পারে না,সে যত বড় শিক্ষকেই হোক না কেন,যত বড় বিদ্বানেই হোক যত সম্মানী ব্যক্তি হোক  তাকে আমার পরিত্যাগ করা উচিত। তাই আমি বলতে চাই "দুর্জন  শিক্ষক হলেও পরিতাজ্য"। 

এসব প্রতিশোধ পরায়ণ ধর্মান্ধ মানুষ ধর্মকে পুজি করে,ধর্মপ্রিয় মানুষজনকে বারবার প্রতারিত করছে,।এসব গুজব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিরা সাঈদীর মৃত্যুর পর গুজব ছড়ানো বন্ধ করেনি।বরং সাঈদীর মৃত্যুর পর আরো বেশি করে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। সাঈদীর মৃত্যুর পরপরই নাকি ভূমিকম্প অনুভূতি হয় যা নাকি আল্লাহর কোন নিদর্শন।যদিও সেদিন আমি ভূমিকম্প হওয়ার খবর পাইনি। তারাই প্রচার করছে যে,পৃথিবীর শুধুমাত্র ৫ জন ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে কাবা ঘরে প্রবেশ করতে পারে তার মধ্যে সাঈদী একজন!বিষয়টা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য তাই ইন্টারনেট ঘাটলেই জানতে পারবেন। তারা সাঈদীর  কাবা ঘর থেকে বের হওয়ার একটি ভুয়া ছবি ও প্রচার করে। বাস্তবে সেটা সাঈদী ছিল না। তারা আরো গুজব ছড়ায় যে পৃথিবীর ইতিহাসে কাবায় শুধুমাত্র চারজন ব্যক্তির গায়েবানা জানাজার হয়েছে,সাঈদী তাদের মধ্যে একজন। তবে বাস্তব বিষয়টি হল সেদিন কাবা ঘরে জানাজার হয়েছিল ঠিক হই কিন্তু সাঈদীর নয় অন্য কারো। এসব ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করেই ব্যবসা করে আসছে। এদের এখনই রুখতে হবে এদের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ করতে হবে, করতে হবে প্রতিরোধ। এখনো সুযোগ আছে সাধু সাবধান। 
আসুন এবার জেনে নেই দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর আর কত ভাবে কি কি উপায়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে।শুধুমাত্র বিএনপি-জামাত-শিবির বা সাইদী ভক্তরাই যে গুজব ছড়িয়েছে তা কিন্তু নয়।তাকে নিয়ে অনান্য দলীয় লোকজনও গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করেছে।




















একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন