নীলসাগর ভ্রমণের তিক্ততা

নীলফামারী জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান "নীলসাগর" বা বিন্না দিঘী।সেই নীলসাগর থেকে কয়েক মিটার দূরেই নানার বাড়ী হওয়ায়,ছোট বেলা থেকেই নীলসাগরের সাথে পরিচয়।এমন একটা সময় ছিল,নানার বাড়ী গেলেই নীলসাগরে গোসল করা চাই-ই চাই।এখনকার মতো এতো লোক দেখানো নিরাপত্তা তো ছিলোই না,ছিলো না কোন প্রবেশ মূল্য!অনেক বছর হয় নানার বাড়ী আর যাওয়া হয়ে উঠেনা।আর নীলসাগরেও আর গোসল করা হয় না।

এ কয়েক বছরে বাংলাদেশের অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে।সব কিছুতে ডিজিটালাইজেশনের ছোয়া লেগেছে।সে সময় ইন্টারনেট ফেসবুক না থাকায়,অনেক মানুষ অনেক কিছু সম্পর্কে জানতো না।নীলসাগর নিয়েও মানুষজন তেমন কিছু জানতো না।এরোই মাঝে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম ছাড়াও নীলফামারীর স্থানীয় অনলাইন মিডিয়াগুলো নীলসাগর নিয়ে চোখ ধাধানো প্রতিবেদন প্রচার করে যাচ্ছে।যা নীলসাগরের পরিচিতি বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে তা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই।সে সব প্রতিবেদন দেখে নতুনরা তো আগ্রহী হবেনই পুরাতনদের আবার নতুন করে নীলসাগর ভ্রমণের ইচ্ছা জাগবেই।শুধু স্থানীয় বাসিন্দারা বা জেলার বাসিন্দারা নয়,আশেপাশের জেলা ছাড়াও সারা দেশের মানুষজনও আসে এই নীলসাগর দেখতে।দূরদূরান্ত থেকে পিকনিক করতেও লোকজন নীলসাগরে আসে।বৈশাখ মাসে বৈশাখী মেলা ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় এখানে।এখানে মুসলমানদের জন্য একটি মসজিদ এবং পূজা করার স্থান রয়েছে।নীলসাগরকে ঘিরে অনেক অনেক পূজা পার্বণ হয় যার প্রমাণ পাবেন নীলসাগর গেলেই।এবারে ঈদূল ফিতরের ঈদ পরিবারের সাথে কাটানোর জন্য গ্রামের বাড়ীতে যাওয়া।



ভ্রমণের প্রবল আগ্রহ থাকার পরেও কোন এক অদৃশ্য কারনে এখন পর্যন্ত তেমন কোথাও ভ্রমণ করা হয়ে উঠেনি।এমন কি কোথাও ঘুরতে যাওয়া পর্যন্ত হয় না।বিয়ের পরেও সহধর্মিণীকে নিয়ে নিজের এলাকার দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যন্ত দেখা হয়নি।ঈদের পরের দিন ফুফাতো ভাই আমাদের বাড়ীতে বেড়াতে এসে,সেইই পরিকল্পনা করে নীলসাগর বেড়াতে যাবে।জেলায় আর তেমন কোন বিনোদন কন্দ্র না থাকায় যেতে মন না চাইলেও,সহধর্মিণীর কথা ভেবে আর অনলাইনে নীলসাগরের প্রতিবেদন দেখে যেতে রাজি হয়ে যাই।ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আটো রির্জাভ নিয়ে পরিবারের অনান্য সদস্যদের নিয়ে নীলসাগর অভিমূখে রওনা দেই।

এতো উৎসাহ নিয়ে আসার পরেও নীলসাগরে ঢুকার আগেই মনটা খারাপ করে দিল প্রবেশ কাউন্টারে থাকা টিকিট মাস্টারের ব্যবহার!তার ব্যবহার এতোটাই খারাপ যে,নিজের চোখেঁ না দেখলে কারও বিশ্বাস হবার কথা নয়।একটা পর্যটন কেন্দ্রের টিকিট কউন্টারের লোকজনের এমন ব্যবহার দ্বিতীয় বার ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করবে।তাই বিষয়টি যথাযথ কতৃপক্ষের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থাগ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।উল্লেখ্য যে,অনেকের সাথেকথা বলে,টিকিট কাউন্টারের লোকজনের বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের তথ্য পেয়েছি।যাইহোক ঝামেলা এড়িয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম।


 নীলসাগরে প্রবেশ করার পরেই পরিবারের এক নারী সদস্যের টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন পরে,সামনে টয়লেট থাকলেও তালাবদ্ধ ছিলো।তাই বাধ্যহয়ে আবার প্রবেশ গেটের কাছে ফিরে টয়লেট ব্যবহার করে আবার সামনে যেতে হলো।পুরো নিলসাগর ঘূরে দেখেছি পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলেও তার সবকটি বন্ধ ছিলো।


 পর্যটকদের বসার স্থান বৃদ্ধি ছাড়া আর তেমন কোন উন্নয়ন চোখেঁ পরেনি।দর্শনার্থী দের খাওয়ার জন্য কয়েকটি ঘর থাকলেও,সেগুলোর ভিতরে ময়লা অবর্জনাদিয়ে ভর্তি


 !কয়েকবছর আগে ঠিক যেমনটি দেখেছিলাম ঠিক সেরকমেই আছে,পরিচর্যার অভাবে তার থেকেও খারাপ অবস্থা দেখেছি জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রটির।আপনি যদি পরিবেশ বাদী হয়ে থকেন তাহলে নীলসাগর দেখে আপনার ভিতরটা ডুকরে ডুকরে কেদে উঠবে আমি নিশ্চিত।এখানকার মাটি ও গাছগুলো দেখে আপনার মনে হতে পারে,কয়েক হাজার বছর ধরে গাছগুলোর পরিচর্যাকরা হয়না।এমনকি আপনার মনে হতে পারে বৃষ্টি হলেও হয়তো,সে পানি নীলসাগরের পারের মাটিতে পরে না বা পরতে দেয়া হয়না!গাছগুলো দেখবেন অর্ধমৃত ও অসুস্থ জরাজীর্ণ ভাবে কালের শাক্ষীহয়ে দাড়িয়ে আছে।গাছগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন হয়তো কয়েক বছর ধরে তাদের গোড়ায় পানি দেয়া হয় না।বরং বিভিন্ন কারনে গাছের গোড়া থেকে বছরের পর বছর মাটি সরে গিয়ে শিকরগুলো বেড় হতে হতে এমন অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যে,হয়তো হাতের ধাক্কায় নয়তো মূখের ফুঁকে গাছগুলো উপরে পরবে।







শহরের লোকালয় থেকে মানুজন নীলসাগরে বেড়াতে আসে শান্ত পরিবেশে মুক্ত বাতাস পেতে।কিন্তু একি!নীলসাগরের পারে হয়তো কখনোই পানি ছিটানো হয় নি।যার দরুন নতুন করে ঘাস গজানো তো দূরে থাক পুরাতন ঘাসগুলোই মরে গিয়ে,নীলসাগর ধুলাবালি দিয়ে একাকার হয়েছে।যেখানে মুক্ত বাতাস নয় ধুলা বাতাস নিতে হলে নীলসাগরে যেতে হবে।সেখানে কিভাবে আর মুক্ত বাতাস পাওয়া সম্ভব?যতদূর জানি এই নীলফামারীর মতো ছোট শহরে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন ছাড়াও সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থাকার কথা।তবে নীলসাগরের পরিবেশ নিয়ে এদের কারোরেই কোন কথা শুনি নি!হয়তো এদের কারোরেই নীলসাগর দেখার দূর্ভাগ্য হয়নি।শুরুতেই বলেছি,নীলসাগরে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যাবস্থা আছে তার সবেই তালাবদ্ধ থাকলেও সেই টয়লেটের ম্যানহোলগুলো উন্মুক্ত ভাবে পরে আছে!


 ম্যানহোলগুলো পুরাতন হলেও ঢাকনা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কেউ হয়তো কোন দিন মনে করেনি।অথচ খুব সহজেই সেখানে মানুষ হত্যা করে ফেলে রাখলেও রাখতে পারে।তাছাড়া ছোট ছোট বাচ্চাগুলো এর উপরে উঠে দৌড়াদৌড়ি করে,এতেও খুব সহজে শিশু বাচ্চাগুলো পরেগিয়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।



কোথাও বাড়তি সুবিধা নেয়ার জন্য,নিজের পরিচয় দেয়াটা খুব সাচ্ছন্দ্যবোধ করি না।তাই ঢুকার সময়ও কাউন্টারে আমার পরিচয় দেয়াটা খুব প্রয়োজনবোধ করিনি।কিন্তু তার ব্যাবহারে এতোটাই অসন্তুষ্ট ছিলাম যে,তার একটি ছবি নেয়ার দরকার বলে মনে করি।তাই ফুফাতো ভাইটিকে আগেই বলেছিলাম যে,বাহির হবার সময় শার্ট পরা লোকটার একটা ছবি নিতে।কিন্তু বাহির হবার সময় ভাইটি ছবি নিতে ইতস্ত হয়েপরে।এটা দেখে নিজেই ছবি নিতে মোবাইলটা হাতে নেই।কয়েকটা ছবি নিয়েও নেই।কিন্তু টিকিট কাউন্টারে দূ'জন ছবি তুলা দেখে ফেলে(হয়তো ঢুকার সময়ের কথা মনে পরেছে)সাথে সাথে তারা আবার আমার সাথে তর্কে জড়ায়,আর একজন পাসে বসা টুরিস্ট পুলিশটা এবং পাসে বসা পাঞ্জাবী পড়া লোকটি আমার দিকে তেড়ে আসে,আর হাতে থাকা মোবাইলটা কেড়েনিয়ে ছবিগুলো ডিলিট করে দিলেও এই ছবিটা থেকেই যায়।



জানি না,নীলসাগর রক্ষনাবেক্ষণ ও দেখভাল কারা করে?সেটা জানাও খুব প্রয়োজন নয়।কিন্তু যারা এর দেখভাল করে তাদের কাছে আকুল আবেদন,নীলসাগর ভ্রমণকারী পর্যটকদের সাথে যেন ভাল ব্যাবহার করা হয়।তা না হলে দিন দিন নীলসাগর ভ্রমণকারী পর্যটকদের সংখ্যা কমবে কিন্তু বাড়বে না।এভাবে নীলসাগর একদিন ধ্বংস হবে।খবর নিয়ে দেখেছি এবার ঈদের পরের দিনেই এক লক্ষটাকার উপরে প্রবেশমূল্যের টিকিট বিক্রি হয়েছে।এ সংখ্যাটি কিন্তু কম নয়,গড় হিসেবে সে দিন পাচ হাজার মানুষ নীলসাগরে প্রবেশ করেছে।তাই বলবো নীলফামারীর এই অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রর দিকে একটু হলেও সুনজর দিন।নীলসাগরকে আরো দৃষ্টনন্দন করলে হয়তো শুধু ঈদের দিন নয় প্রতিদিনেই হয়তো ঈদের দিনেই হবে।

আপনার মূল্যবান মতামত প্রদান করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন