কৈফিয়ৎ



ইদানিং বললে ভুলেই হবে,প্রায় বছরখানেক ধরে ব্লগে নতুন কোন প্রকাশনা নাই।যা শুধু পাঠকদের নয় বরং নিজের কাছেই চরম হতাশার।পেট পূজার কর্মে ব্যস্ততার করনে সময়ের অভাবেই হোক বা হাতের ব্লগ লেখার প্রিয় যন্ত্রটা ভাঙ্গার কারনেই হোক এতোদিন ব্লগে নতুন প্রকাশ আসেনি।এরপরও হাতের চুলকানি এ-র জন্য হলেও ডজনখানেক বিষয় নিয়ে লেখার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছি।লেখার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও,প্রকাশ হবে না ভেবে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি বারবার।অনেক চেষ্টা করার পরে-ও,ব্লগ লেখার যন্ত্রটি কিনতে পারছিলাম না।অবশেষে অন্যের সমজাতীয় যন্ত্র দিয়ে হলে-ও ব্লগ লেখার চেষ্টা করছি।আশা করছি ভাষার মাস ফেব্রুয়ারী থেকে নিয়মিতভাবে না হলে-ও অনিয়মিতভাবে লেখার চেষ্টা অব্যহত থাকবে।

লেখালিখির অভ্যাস যেমন নতুন নয়,তেমনি  লেখালেখিতে বাধা হয়ে দাড়ানোর বিষয়টিও নতুন নয়।লেখালেখি করতে গিয়ে বারবার বাধার মুখে পরতে হয়েছে।ছোটবেলায় যেমন কতগুলো কবিতা লিখলেও কোথাও প্রকাশ কর হয়নি।হয়তো বড় হয়ে কোথাও প্রকাশ করবো ভেবে,খাতায় লিখে রাখতাম।কিন্তু যখন বড় হলাম তখন সেই লেখার খাতাটি খুজেই পটাচ্ছিলাম না।তার পরে-ও হাল ছেড়ে দেইনি।আবার নতুন করে চেষ্টা করতে থাকলাম।

স্কুলে থাকা অবস্থায় একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়।সেদিন কতোটা যে খুশি হয়েছিলাম তা হয়তো বলে বুঝাতে পারবো না।এখানে নিয়মিত দু-এক লাইন লিখতাম।

তখন কলেজে পড়ি।তখন প্রথমবারের মত কলেজে দেয়াল পত্রিকা বেড় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।সুযোগটা আমি লুফে নিলাম।তখন কয়েকটি কবিতা জমা দিলাম।আমি ভেবেছিলাম কবিতাগুলো হয়তো সম্পাদকের কাছে মানসম্মত হবে না,তাই একাধিক কবিতা জমা দেয়া,কারন আমি চাইছিলাম না যে কলেজের প্রথম সংখ্যায় আমার লেখা প্রকাশ করা মিস না হয়ে যায়।একজনের একাধিক লেখা প্রকাশের সুযোগ না থাকলেও,অবাক কারার মত বিষয় হলো যে একমাত্র আমারেই তিনটা কবিতা প্রকাশ করা হয়।তবে একটি মাত্র আমার নিজের নামে হলে-ও বাকি দুটি অন্য করো নামে প্রকাশ করা হয়।সম্পাদকদের কাছে আমার কবিতাগুলো এতোটাই ভালো লেগেছিলো যে,নিয়মের বেড়াজালে পরার পরে-ও বাকি দুটি কবিতা অন্য দু'জনের নামে প্রকাশ করে তবেই ছেড়েছেন।এই কথাগুলো কিছুদিন পরে কলেজের দেওয়াল পত্রিকার সম্পাদকদের কাছ থেকে শুনেছিলাম।অন্যের নামে হলে-ও আমার লেখাগুলো প্রকাশ পাওয়াতে আমি খুব খুশি ছিলাম।
এরপর অন্য কোথা-ও লেখার চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে।স্থানীয় একটি পত্রিকায় লেখার জন্য খুব দৌড়াদৌড়ি করি।কারন সে সময় পত্রিকায় লেখা প্রকাশ হওয়া খুব বড় ব্যাপার ছিলো।যদিও সে দৌড়াদৌড়ি কোন কাজেই আসেনি।পত্রিকাওয়ালারা আমাকে সবসময় নিরুৎসাহিত করেছেন।ভয় দেখিয়েছেন।

এর পর এক বন্ধুর কাছথেকে ফেসবুকের কথা শুনে,একাউন্ট খুলে মনের সুখে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংক্ষেপে লিখতে থাকি।কিন্তু এখানে কোন কিছুর কপিরাইট লেখকের নিয়ন্ত্রণে ছিলোনা।কোন কিছু পোষ্ট করলেই নিমেষেই কপি করে অনেকেই নিজের নামে চালিয়ে দেয়।অবাক করা বিষয় হইলো নিজের লেখায় যতগুলো লাইক,কমেন্ট,শেয়ার হতো,কিন্তু কপি হওয়া লেখায় তার চেয়ে-ও অনেক বেশী লাইক,কমেন্ট,শেয়ার হতে থাকে।এরপর থেকে ফেসবুক থেকে মুখ ফিরিয়ে না নিলে-ও।পোষ্টকরা কমিয়ে দেই।


এরপর ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টির পার থেকেই ব্লগ ও ব্লগার প্রচন্ডভাবে আলোচিত হতে থাকে।কৌতূহলী হয়ে ব্লগার ও ব্লগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গিয়ে অনেক কয়েকটি ব্লগ আবিস্কার করি।সে সময় প্রতিটি ব্লগেই আমার ভালো লেগে যায়।কোন কিছু না ভেবে নয় দশটি ব্লগে একাউন্ট খুলে লেখা দিতে থাকি।কিন্তু তড়িঘড়ি করতে গিয়ে মুখ থুবরে পরি।পাবলিক ব্লগে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারিনি।কিছুদিন পর আবারও ধীরগতিতে শুরু করি।এবার কিছুটা সুবিধা করতে পারি।ভালই চলছিলো।সে সময় ব্লগারদের হত্যার মহা উৎসব চলছিলো।আমিও ব্লগে নিয়মিত হতে থাকি।একদিন এক ব্লগ থেকে যুক্ত রাষ্ট্রের একটি বাংলা অনলাইন মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিষয়ে একটি লেখা প্রকাশ করা হয়।এটা যে-দিন আমি জানতে পারি,সেদিন ঢাকায় নিজের বাসায় এক ব্লগারকে হত্যা করা হয়।এটা শুনার পর আমি আতঙ্কিত হয়ে,সেই সংবাদমাধ্যমকে আমার অনুমতি না নিয়ে,আমার লেখা প্রকাশ করায় কৈফিয়ৎ চাই।সেই সাথে আমার লেখাটি তুলে নেয়ার জন্য বলি।দু'দিন পরে তারা আমার লেখাটি তুলেনেয়,অনুমতি না নেয়ার জন্য দূঃখপ্রকাশ করতে-ও ভুল করেনি।আমার আতঙ্কিত হওয়ারও কারন ছিলো।ব্লগ ও ফেসবুকে লেখালিখির কারনে আত্নীয় স্বজন,বন্ধুরা ভালো চোখে দেখেনি।প্রত্যক্ষ না হলে-ও পরোক্ষ ভাবে অনেক হুমকি ধমকি পেয়েছি।আমার উপর নজর রাখার খবর পর্যন্ত-ও শুনেছি।বড়বড় ব্লগাররা দেশ ছেড়ে গেলেও আমার পক্ষে তা সম্ভব ছিলো না।তাই জানের ভয়ে পাবলিক ব্লগগুলোতে লেখা দেয়া ছেড়ে দিলাম।কিন্তু হাতের শুড়সুড়ানির জন্য লেখা ছাড়তে পারিনি।চোরের ভয়ে কি মাটির থালায় ভাত খাব!লেখালেখির চর্যাটা করার জন্য ব্লগার ব্লগে এই ব্লগটা চালু করা।যদিও এর আগে ওয়ার্ড প্রেসে চেষ্টা করে-ও সফল হতে পারিনি।সেই থেকে এই একটাই ব্লগ।এটাই আমার ঠিকানা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন