আপনি কোন সাধু বাহাদূর?

আমরা বাঙ্গালী কথায় কথায় অন্যের ভুল ধরি,কিন্তু নিজের ভুলগুলো চোঁখেই দেখতে পাইনা।অন্যের সামান্য দোষ গুলো অনেক বড় করে দেখি,কিন্তু নিজের গুরুতর দোষ গুলোকে সামান্য মনেকরি।আমাদের দোষের কারনেই অন্যরা যে দোষ করছে সেটা আমরা চিন্তাও করিনা।

কথায় কথায় আমরা সরকারকে দোষারোপ করি।সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে সরকারের দোষ,রডের বদলে বাঁশ সরকারের দোষ,চেয়ারম্যান মেম্বার টাকার বিনিময়ে সরকারি সহয়তা বিতরন করছে সরকারের দোষ,দিন দিন বেকারত্বের হার বাড়ছে সরকারের দোষ।

কথায় কথায় শুধু সরকারের দোষগুলোই খুজি,কিন্তু এর জন্যে যে আমরা নিজেরাই দোষি সেটা কখনো আমাদের চিন্তায় আসেনা।এ সবের জন্য আমরা নিজেরাই প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী।


সয়াবিন তেলের দামটা কি সরকার বাড়িয়েছে?বিশ্বের তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে এর প্রভাব বাংলাদেশেও পরছে ঠিকই।কিন্তু যতোটা দাম বাংলাদেশে বেড়েছে ঠিক ততোটা নয়,বাংলাদেশ সরকারও এতোটা দাম বাড়ায় নি।আপনি যদি বুঝে থাকেন তাহলে ভালো।আর যদি না বুঝে থাকেন তাহলে এখন দেখুন
 কি ভাবে সয়াবিন তেলের দামটা কমলো!এবার কিন্তু ঠিকই সরকার দামটা কমিয়েছে।সিন্ডিকেটরা তেলের দামটা বাড়িয়ে দিয়েছিলো।আর দিবেই না বা কেন?যেমনি শুনছেন সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে ওমনি আপনি তেল কেনা বাড়িয়ে দিয়েছেন।মাসে আপনার ৫ লিটার সয়াবিন তেল লাগে,আর আপনি কিনছেন ১৫ লিটার মনে ভবিষ্যতের জন্য আপনি স্টক করছেন।এমনিতেই তেলের পরিমান কম,সেটা আপনি জানেন তবুও স্টক করছে।আপনার সাধ্য ১৫ লিটার স্টক করছেন।আর যারা ব্যবসায়ী তারা কি পরিমান স্টক করবে বলুন?ব্যবসায়ীরা জানে বাজারে তেলের চাহিদা কেমন।কিন্তু আপনার আমার স্টক করার কারনে চাহিদা দ্বিগুন হয়েছে।তারা দাম বাড়াবে না কেন বলুন?আপনি সে যায়গায় থাকলে কি করতেন?

বিগত কয়েক বছর থেকে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় রডের বদলে বাঁশের ব্যবহার লক্ষকরা যাচ্ছে!এর ফলে সরকারের সমালোচনা বহুগুনে বেড়ে গেছে।আসলে কি সরকার রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করছে?সরকার তো শুধু খরচের টাকাটা দিচ্ছে।দরপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন কনষ্ট্রাকশন ফার্মের কাছে বিভিন্ন কাজ দেয়াহয়।এ হিসেবে রডের বদলে যদি বাঁশের ব্যবহার করে তাহলে সেটা করছে সেই সব কনষ্ট্রাকশন ফার্ম।কিন্তু সমালোচনা ঠিকই করা  হচ্ছে সরকারের।


এখন প্রশ্ন আসতে পারে কনষ্ট্রাকশন ফার্মগুলো কেন রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করছে?আমি বলবো সেটাও আপনার আমার কারনে!কি ভাবে দেখুন-আপনার এলাকায় যদি কোন সরকারি স্থাপনা হচ্ছে তাহলে দেখতে পাবেন,আপনার এলাকার সুশিল সমাজ,গুন্ডা-পান্ডা,রাজনৈতিক নেতা এমনকি পাতি নেতা থেকে শুরু করে সবাই বিভিন্ন ভাবে ভিন্ন ভিন্ন পন্থানুসরণ করে সেই সব কনষ্ট্রাকশন ফার্মের কাছে চাঁদা দাবি করছে,চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে,অনেক সময় কাজ করাও বন্ধ করে দিচ্ছে।নিরুপায় হয়ে কনষ্ট্রাকশন ফার্মগুলো কথিত এলাকাবাসীর দাবি পূরন করছে।এলাকার কুকুরো যদি চাঁদা দাবি করে তাহলে সেট দিতেও কনষ্ট্রাকশন ফার্মগুলো বাদ্ধ হচ্ছে।কনষ্ট্রাকশন ফার্মগুলো যে চাঁদা দিচ্ছে তা কি তাদের বাবার জমি বিক্রিকরে এনে দিচ্ছে?তারা ব্যবসা করতে আসছে তারা কি লজ করবে?এলাকাবাসীকে যে তারা চাঁদা দিচ্ছে সে সব কোথা থেকে আসে?সে সব সরকারি বাজেটেরই অংশ। এই চাঁদা দিতে দিতে বাজেটের অনেক অংশ চলে যায়।কাজ কোন টাকা দিয়ে করবে?বাদ্ধহয়ে তারা রড,সিমেন্ট বালুর পরিমান কমিয়ে দিচ্ছে।না চাইলেও রডের বদলে বাঁশ দিয়ে দায়সারা ভাবে কজ শেষ করতে হচ্ছে আমার হিন সার্থের কারনে এলাকায় স্থাপনাগুলো নড়বড়ে হচ্ছে।সে সব স্থাপনার স্থায়ীত্ব ও নিরাপত্তা সব সময় হুমকিতে থাকে।স্থাপনাগুলোতে বসবাসকারী সকলের জীবন ঝুকিতে থাকে।সেই ভবনগুলি ধসেপরে,আপনার পরিবারে কেউ আহত বা নিহত হলে,সব দোষ যাচ্ছে সরকারের ঘাড়ে।কনষ্ট্রাকশন ফার্মগুলোর কাছথেকে চাঁদা নেয়া বন্ধ করে দিন,রডের বদলে বাঁশের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে।

বাড়ীর পাশে রাস্তার জন্য ইট বিছানো আছে,রাতের অন্ধকরে লোকচক্ষুর আড়ালে সেই ইট দিয়ে বাড়ী করবেন।দুই দিনে রাস্তার সোলিং কার্পেট উঠে যাবে,রাস্তায় পানি জমে গর্তহবে সেই গর্তে আবার এক্সিডেন্ট হবে।আর রাস্তার কাজ ভালো না হলে সরকারকে দোষারোপ করবেন।তা কি করে হয়?

ইদানিং কালে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠছে।তারা নাকি টাকার বিনিময়ে সরকারি বিভিন্ন সহযোগিতা বিতরন করছে।ধনি-গরিব বিচার বিশ্লেষণ না করে যাদের কাছে টাকা নিচ্ছে তাদের কাছে সরকারি সহয়তা বিক্রি করছে।অভিযোগ গুলো পুরোপুরিভাবে সত্য না হলেও আংশিক সত্য,যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বাররা, বিভিন্ন সরকারি সহয়তা প্রদানে অনিয়ম করছে।যেসব বিষয় বিভিন্ন পত্র,পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে আমরা শুধু সেই সব ঘটনায় জানছি,কিন্তু যে সব বিষয় প্রকাশিত হচ্ছে না সে সব ঘটনা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানছি না।বাস্তবে ইউনিয়ন পরিষদে যেসব অনিয়মগুলো হচ্ছে তার দশ শতাংশ প্রকাশিত হচ্ছে না।এই সেক্টরের অনেক অনিয়ম সম্পর্কে কেউই কিছু জানি না।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের এমন অনিয়মের পিছনে কিন্তু আপনার আমার সবার হাত রয়েছে।মূলকথা হলো ইউনিয়ন পরিষদে অনিয়মের আপনি জড়িত!কি ভাবে জানেন?আপনার হয়তো এখন মনে নেই।নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের চা খেয়েছেন,এমনকি একাধিক প্রার্থীর কাছে ভোটের বিনিময়ে টাকাও নিয়েছে।একদিন চা-বিড়ি না খায়ালে তার বিরুদ্ধে বলেছেন,সে সব কি ভুলে গেছেন?একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কমকরে হলেও ৫০ লক্ষটাকা খরচ হয়!আর মেম্বারদের ৩ লক্ষ!এ টাকাগুলো কোথায় খরচ হয়?সব টাকা আপনার আমার মন জোগাতে খরচ হয়।নির্বচনের দিনগুলিতে চা-বিড়ি তো খানেই,ভোটের আগেরদিন পকেটে গজগজা একটা ৫০০টাকার নোট গুজে না দিলে তো ভোটেই দেন না।শুধু কি একজন প্রার্থীর কাছথেকেই টাকা নেন?যতোজন প্রার্থী আছে সবার কাছেই তো টাকা নেন,ভোটটা যে কাকে দেন আল্লাই মালুম!একজন সচেতন নাগরিকের কাছে ভোট অমূল্য সম্পদ।সেই সম্পদকে আমরা পাচশত বা এক হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছি।


একজন চেয়ারম্যান যে ৫০ লক্ষা টাকা খরচ করে চেয়ারম্যান হলেন,তিনি সেই টাকা কোথায় পেয়েছিলেন?কোথায় পেয়েছিলেন সেটা বড়কথা নয়।যে টাকাটা তিনি ভোটের পিছনে খরচ করেছেন সেটা কি তুলবেন না?শুধু কি টাকাই দিয়ে ছিলো কাউকে কাউকে তো শাড়ী,লুঙ্গী,এমনকি ব্লাউজ পর্যন্তও দিয়েছে।ভোটের সময় আপনি টাকা নিয়েছিলেন বলেই চেয়ারম্যান মেম্বারগণ আপনার কাছে টাকা নিয়ে সরকারি সহয়তা দিচ্ছে।ভোটের সময় যদি আপনি টাকা না নিতেন তাহলে চেয়ারম্যান মেম্বারও সরকারি সহয়তার জন্য আপনার কাছে টাকা নিতো না।টাকা নিয়ে চোঁরদের ভোট দিবেন আর জাস্টিন ট্রুডো মতো সরকার চাইবেন তা তো হবে না ভাই।

"নিজের দোষে বান্দা মরে আল্লাক দেয় দোষ" আমাদের হয়েছে সেই অবস্থা।আমরা নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করছি আর সরকারকে দোষারোপ করছি।তবে সমাজের একজনের সচেতনা কখনেই সেই সমাজের উন্নয়ন ঘটাতে পারে না।সমাজের আধিকাংশ লোক সচেতন হলে সহজে সেই সমাজের উন্নয়ন সম্ভব।এসব অনিয়ম দূর করতে সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই যতেষ্ট।যদিও এখানে সরকারের ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।তথাপি দেশের অনিয়মগুলো বন্ধ করতে সরকার গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করতে পারে।ইতমধ্যে যারা অনিয়ম করেছে তাদেরকে ভবিষ্যৎতে আর কখনো সরকারি কজ না দেয়ার মাধ্যমে অনিয়োমগুলো দূর করা সম্ভব।কিন্তু সরকার সেটা করছে না।অনিয়ম করেও বারবার একই কোম্পানি সরকারি বিভিন্ন কাজ পাচ্ছে।এতে করে তার আরো অনিয়ম করার উৎসাহ পাচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন