১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর এবারেই সবচেয়ে বড় সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানিরও ক্ষমতা হারিয়েছে দেশটি। মারাত্মক অর্থনৈতিক ও জ্বালানিসংকট তৈরি হয়েছে। হাজারো মানুষ ফিলিং স্টেশনের সামনে কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।কয়েক মাস ধরে রিজার্ভের সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কায় পণ্য আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে। এ সময় সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।প্রতিদিন কয়েকবার করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। মুদ্রা বিনিময় সংকটের কারণে আমদানি বিধিনিষেধ থাকায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভ দমনে পুরোদমে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে তাদের দেওয়া হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা।সেই সাথে শ্রীলঙ্কার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন বলেছে ফেসবুক,মেসেঞ্জার,ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ,ভাইবার,টুইটার,আইএমও, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ও টিকটক বন্ধ থাকবে।,প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তা বহাল থাকবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ ঘোষণার আগে অজ্ঞাতপরিচয়ের বিক্ষোভকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ ঘোষণার পর দেশটির ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান পদত্যাগ করেছেন।কারফিউ ভাঙার অভিযোগে এরই মধ্যে ১০০০জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একটি সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশী সেলিম রায়হান কলম্বোয় অবস্থান করছেন,তিনি বলেন, এখানকার অবস্থা বেশ খারাপ। জ্বালানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। পাম্পগুলোয় তেলের জন্য দীর্ঘ লাইন। দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলো জরুরি সার্জারির কাজ পর্যন্ত করতে পারছে না। এখানকার পত্রপত্রিকায় এসব নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। খাবারের দাম অনেক বেড়ে গেছে এবং সংকটও রয়েছে। শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে ১০ দিনের আমদানি মূল্য পরিশোধের ক্ষমতাও নেই। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে যে ঋণ নিয়েছে, তা পরিশোধেরও সক্ষমতা হারিয়েছে। একে শোচনীয় পরিস্থিতিই বলতে হবে।
সরকার যদিও,২০১৯ সালের ইস্টার সানডের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা ও করোনা মহামারীকে দায়ীকরে নিজেদের দায় এড়াতে চাচ্ছে আসলে বিষয়টা সেটা নয়।শ্রীলঙ্কায় এমন পরিস্থিতি একদিনেই সৃষ্টি হয়নি,এর পিছনে ২০০৫ সালের সরকারের হটকারী সিদ্ধান্তই দায়ী।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকটে শ্রীলঙ্কায় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের দামও হু হু করে বাড়ছে,কাগজের অভাবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারছেনা,বিদূৎ সংকটের জন্য স্বয়ং বিদূৎমন্ত্রী অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ বাসায় করতে বলেছেন,এমনকি সড়কের সব বাতি নিভিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। ফুরিয়ে আসছে এসব পণ্যের মজুত। সরকার বলেছে, দেউলিয়ার হাত থেকে বাচঁতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে । এ ছাড়া ভারত ও চীনের কাছে নতুন করে ঋণ চেয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়ে এগিয়ে এসেছে ভারত। ভারত থেকে ৪০ হাজার টন ডিজেলভর্তি একটি জাহাজ শ্রীলঙ্কার বন্দরে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার জন্য ভারত ঘোষিত ১০০কোটি ডলার ঋণসীমার আওতায় এ সহায়তা দেওয়া হয়। এদিকে দেশটিতে পাঠানোর জন্য আরও একটি জাহাজে ৪০ হাজার টন চাল বোঝাই করতে শুরু করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।