পৃথিবীর হাজারে হাজারে সভ্যতা ও সাম্রাজ্যের ধ্বংস হয়েছে।আধিপত্য বজায় রাখতে বিভিন্নভাবে শক্তি প্রদর্শন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সারা পৃথিবীর কোথাও না কোথাও যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই আছে।সারা পৃথিবীর যুদ্ধবিগ্রহের সম্প্রসারিত চুড়ান্ত রূপ হচ্ছে বিশ্ব যুদ্ধ। পৃথিবীতে ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মূলত পৃথিবীতে যুদ্ধবিগ্রহ কিছুটা স্মিত হয়ে পরে। এর মানে এই নয় যে, সারা পৃথিবীতে যুদ্ধ থেমে গেছে।এমন অনেক সংঘাত আছে যেগুলো শতবছর ধরে চলে আসছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেহেতু সংঘটিত হয়েছে,সেহেতু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন এটাই অনুমিত ছিল। কিন্তু কখন কিভাবে সেটা কারোর জানা নাই। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলমান।
গত কয়েক দশকে বিশ্ব রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। অসংখ্য দেশে সরকার পতন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জনগণের প্রতিবাদ বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিবর্তনের পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করেছে,
গত কয়েক দশকে বিশ্ব রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। অসংখ্য দেশে সরকার পতন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জনগণের প্রতিবাদ বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিবর্তনের পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করেছে,
* অর্থনৈতিক অস্থিরতা: বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, দারিদ্র্য এবং অসমতা সরকার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কারণ।
* রাজনৈতিক দুর্নীতি: সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
* মানবাধিকার লঙ্ঘন: স্বাধীনতা, সমতা এবং ন্যায়বিচারের অভাব জনগণকে রাজপথে নামতে বাধ্য করে।
* সামাজিক অসাম্য: ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে সামাজিক অসাম্য জনগণের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে।
অনেক আগেই শুনেছিলাম বিশ্ব রাজনীতির মোরল আমেরিকা অর্থনৈতিক মন্দাগ্রস্ত হতে চলছে।বর্তমানে ধারাবাহিক দাবানলে আমেরিকা বিপর্যস্ত।
২০২১ সালে প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পালিয়ে গেলে।দ্বিতীয় বারের মতো বিদ্রোহী থেকে তালেবানরা শাসকে পরিনত হয়ে নিজেদের ব্যাখা অনুযায়ী ইসলামী শাসন শুরু করে।যদিও তারা এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি।
সীমাহীন দূর্নীতি আর অনিয়মের প্রতিবাদে ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে ১৩ ই জুলাই ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গুতাবায়া রাজাপাকশে মালদ্বীপে পালিয়ে যায়।
মিয়ানমারে অনেক আগে থকেই অস্থিরতা চলে আসছে।
এদিকে প্রবল গণ-আন্দোলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট নিজ দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।কোটা সংস্কার আন্দোলন এক সময় স্বৈরাচার আন্দোলনে রুপ নিলে হাসিনার পতন অনিবার্য হয়ে পরে।হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে কিছু মানুষের ১৬ বছরের শাসন-শোষণ অতার্চার নির্যাতনের অবসান হয়।
বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ সরকার প্রধান জাস্টিন ট্রুডো অল্প কিছুদনের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কথায় কথায় মানুষ জাস্টিন ট্রুডোকে উদাহরণে তুলে ধরতো।সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে ট্রুডো আইডলে পরিনত হয়ে উঠেছিল।কথায় কথায় মানুষ সৌদির শাসন ও কানাডার শাসক চাইতো।সেই জাস্টিন ট্রুডোকেও বিভিন্ন অভিযোগে ৬ই জানুয়ারী ২০২৫ সালে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।
এদিকে ভারতে সারা বছর কোন না কোন ইস্যুতে আন্দোলন সংগ্রাম চলছে।ভারতেও যে কোন সময় যে কোন কিছু ঘটে যেতে পারে।আর পাকিস্তানের অবস্থা তো আরো খারাপ।স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কোন সরকার তাদের নিজেদের নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেন নি।কোন না কোন ভাবে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।একের পর এক জঙ্গি হামলা একসময় পাকিস্তানের নিত্যদিনের ঘটনা ছিলো।তবে ইমরানকে দেখে মনে হয়েছিল তিনিই হবে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি তার ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন।কিন্তু না তিনিও তা পারেন নি।মাত্র ৩ বছর ৮ মাসেই ইমরান খানের পতন হয়।মূলত সে সব কারনে ইমরান খানের সরকারকে সুরক্ষিত মনে করা হয়েছিল,সেই একই কারনে তার পতন অনিবার্য হয়ে পরে।অবশেষে ১০ই এপ্রিল ২০২২ সালে তুমুল জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পতন হয়।এর পরেই ইমরান খানকে আটক করা হয়।ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন গড়ে উঠে, কিন্তু কোন ভাবেই ইমরানের মুক্তি মিলছে না। ৫ ই অগাস্টে হাসিনা পতনের পর বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উদ্বুদ্ধহয়ে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের আন্দোলন শুরু করে, ইমরান খানের স্ত্রীর বুশরা বিবির নেতৃত্ব আন্দোলনে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়।কিন্তু কোন এক অজানা কারনে এক রাতেই ডি চক ছেড়ে বুশরা বিবি সহ সকল আন্দোলনকারী চলে যায়।যেখানে ইমরান পত্নী তাকে ছাড়া ঘরে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছিলেন।তবে পাকিস্তানে আবারও যেকোন সময় পরিবর্তন হয়ে যতে পারে।
২০২৪ সালের ৮ ই ডিসেম্বর সিরিয়া থেকে বাশার আল আসাদের পালিয়ে যাওয়ায় মাধ্যমে, সিরিয়ায় ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। সেই সাথে ২৪ বছরে বাশার সরকারের অবসান,৪৯ বছরের আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান এবং টানা ৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
এর পর সর্বশেষ ২৮ সে জানুয়ারী দূর্নীতি বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন।
জানি না এরপর আর কোন কোন দেশ এ কাতারে নাম লেখাবে।তবে আগে থেকেই কিছু রাষ্ট্র তাদের কর্তৃক বাড়াতে বা ধরে রাখতে একে আপরের সাথে সবসময় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে থাকে।চিন,রাশিয়া,ইসরায়েল,ফিলিস্তিন,উত্তর কোরিয়ার নাম এদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।মিশর,লিবিয়া,ইয়েমেন এছাড়াও আরবের কয়েকটি দেশ,ভেনেজুয়েলা,হংকং,বেলারুশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে।১৯ সে মে ২০২৪ একটি বিমান দুর্ঘটনায় ইরানের রাষ্ট্রপতি, ইব্রাহীম রাইসি, পররাষ্ট্র মন্ত্রী সহ নয় জন যাত্রীর সবাই নিহত হয়ে।
তবে যে সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান পদত্যাগ বা পালিয়ে গিয়েছেন,তাদের স্থানে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা যে খুব একটা ভাল মানুষ তা কিন্তু বলা যায় না।মুলত বিদ্রোহীদের আন্দোলনের শক্তিতে টেক্কা দিতে না পেরে তারা দেশ থেকে পালিয়ে যায়।অর্থাৎ বলা যায় শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল ঘটাতে তারা সহয়তা করেছে।তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, যারা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন তারাও ধোয়া তুলিস পাতা নয়।তাদের নিজেদের কর্মকান্ডেই ক্ষমতাচ্যুত অনিবার্য হয়ে পরে।
একটা বিষয় উল্লেখ করা জরুরি, ইতিহাস বারবার ফিরে আসে হয় একই রূপে নয়তো ভিন্ন রূপে।বাংলাদেশ ছাড়াও এখনে যে কয়টা দেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে এসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অথবা প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন।অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অতীতেও প্রায় একই সময়ে বা কাছাকাছি সময়ে কিছু না কিছু ঘটনা ঘটেছে।মনে হতে পারে একটি দেশের ঘটনার সাথে আর একটি দেশের ঘটনার লেজুড়বৃত্তি আছে।
তবে যাইহোক, ক্ষমতার পালাবদলে ইতিবাচক নয় তো নেতিবাচক পরিবর্তন তো হবেই। সেই সাথে ক্রমান্বয়ে হয়তো সারা পৃথিবীতে ক্ষমতার পালাবদলে শীগ্রই একটা নতুন পৃথিবীর দেখতে পাবো।সেই নতুন পৃথিবীতে সবাইকে অনতিবিলম্ব আহ্বান করছি।বিশ্ব রাজনীতি ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা সরকারের বিরুদ্ধে আরও সহজে একত্রিত হতে পারছে। তবে সরকার পতনের পর নতুন সরকার গঠন এবং দেশকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।