আমরা মানুষ এ জন্যেই আমাদের আবেগ অনুভূতি গুলো প্রখর।কিন্তু অন্যের বেলায় সে আবেগ অনুভূতি গুলো ভোতা!আমার বেলায় যেটা আবেগ অনুভূতির যায়গা,সেটা অন্যের কাছে তুমুল হাস্যরসের বিষয়।আমরা এমনই মানুষ যেখানে নিজের কষ্টে কাতর হই,কিন্তু অন্যের একই কষ্ট দেখলে তুমুল হাসিঠাট্টায় মেতে উঠি।
সেদিন রাতের বেলা সাভার থেকে বাসে করে কর্মস্থলে ফিরছি,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ছেলে নামবে(হয়তো সে স্টুডেন্ট হবে)।কোথায় থেকে উঠেছে তা জানি না,কিন্তু যেখান থেকে সে উঠেছে,সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দশ টাকা ভাড়া হয়।কন্ডাক্টর ভাড়া চাইলে ছেলেটা দশ টাকা দিয়ে পাচ টাকা ফিরত চাইলো,তখন কন্ডাক্টর বল্লো ভাড়া তো দশ টাকা।তখনি ছেলেটা আবার ঐ দশ টাকার নোটটা চেয়ে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেমে গেল!বেচারা কন্ডাক্টর নিরুপায় হয়ে ছেলেটার চলে যাওয়া দেখছে আর মিনমিন করে বলছে স্টুডেন্ট হলে বল্লেই হতো।সে ছেলেটি স্টুডেন্ট জানলে হয়তো পাচ টাকাই ভাড়া নিতো।কিছুদিন আগে ছাত্রদের হাফভাড়া নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে।তখনো হাফ ভাড়ার বিরোধীতা করেছি এখনো করি।
যদিও ছেলেটিকে দেখে স্টুডেন্ট মনে করার কোন কারন দেখি না(বই খাতা,আইডেন্টিটি কার্ড)কিছুই ছিলো না,তার উপর রাতের বেলা।তবুও ধরেই নিলাম ছেলেটা স্টুডেন্টেই ছিলো।কিন্তু সে যে,কন্ডাক্টরের সাথে এমন আচরণ করলো সেটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিনা।
সে যখন পাবলিক বাসে যাতায়াত করছে,সেহেতু ধরেই নিলাম সেও কোন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির সন্তান।উচ্চবিত্ত ফ্যামিলির সন্তান হলে সে মনে হয় পাবলিক বাসে যাতায়াত করতো না।আর করলেও হয়তো পাচ টাকা নিয়ে এমনটা করতো না।তার বাবাও হয়তো ঐ কন্ডাক্টরের মতো না হলেও অনুরুপ কোন কাজ করে সংসার চালায় সেই সাথে তারও সন্তানদের লেখা-পড়ার খরচ যোগায়।
আমরা সবচেয়ে বেশী আঘাত পাই পরিবারের যেকোন সদস্যের অপমানে।যদিও সেই অপমানটা যৌক্তিক কারনে হয় থাকে,তবুও অপমানটা সহ্য হয়না।মনেহয় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সব শেষ করে দেই।
ধরেই নিলাম ছেলেটির বাবা একজন রিক্সা চালক,কেউ একজন যদি তার বাবার রিক্সায় উঠে ভাড়া না দিয়ে চলে যায়,আর সেটা যদি সেই ছেলেটা জানতে পারে,তাহলে পরিস্থিতিটা কেমন হবে একবার ভেবে দেখেছেন?আমি হলে হয়তো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারতাম না।আপনি কি পারতেন?
তার উপর একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্টুডেন্টের কাছে এমন আচরণ কেউ প্রত্যাশা করে না।
বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আমাদের কি শিক্ষাদিচ্ছে?না চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্নটা থেকেই যায়।একজন স্টুডেন্ট যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কালিন সময়ে এমন আচরণ করে,তাহলে তার কাছ থেকে জাতি ভবিষ্যতে আর কি আশাকরতে পারে?এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, যার জন্য আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ গোটা শিক্ষাব্যবস্থাটাই দায়ী।
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো নিজেকে জানা এবং জ্ঞান অর্জন করা।আমরা নিজেকে জানছি এমনকি জ্ঞান অর্জন করছি।কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন করছি না।ছোটবেলায় পড়েছিলাম....
"সবার সুখে হাসবো আমি
কাদবো সবার দূখে
নিজের খাবার তুলে দিবো
অনাহারীর মূখে"
কিন্তু বাস্তবে আমরা করছি.....
"সবার দূখে হাসছি মোরা
কাদছি সবার সুখে
নিজের খাবার খাচ্ছি মোরা
অনাহারীর থেকে"
শিক্ষার উদ্দেশ্য নিজের ভালোটা বুঝার জন্য নয়,নিজের সাথে সাথে অন্যের ভালোটা বুঝায় শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য।
"অন্যের জন্য কাদে না যার মন
কে বলে মানুষ সে...
পশু সেই জন"
হায় রে শিক্ষা
উত্তরমুছুন