আওয়ামীলীগঃ খালকেটে কুমির আনছে

রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলার আগ্রহ সবসময় সবারই থাকে।আমিও এর ব্যতিক্রম নই।তাই,গত কয়েক বছরের পর্যালোচনা থেকেই আজ দু'কলম লিখতে বসা।ইদানিং আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু কর্মকান্ড দেখে সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি আওয়ামীলীগ নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছে।নবম সংসদ নির্বচনের আগে যখন মহাজোট গঠণ করে এরশাদের জাতীয় পার্টির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে তখন থেকেই।এর আগের সাধারণ নির্বাচনের সময় একটা অন্যরকম নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করেছিল,তখন প্রায় সব আসনেই ত্রিমূখি নির্বাচনি প্রতিযোগিতা হয়েছিল।কিন্তু মহাজোট গঠণ করে সেখানে নির্বাচনি আমেজকে শুধু ধ্বংসেই করাহয়নি, আওয়ামীলীগ নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছে।সে সময়ে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার করনে অনেক জাতীয় পার্টির নেতা আওয়ামীলীগের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায়,এদিকে আওয়ামীলীগও উদারতার পরিচয় দিয়ে তাদের কাছে টেনেনিয়ে বুকে জরিয়ে ধরে।নির্বাচনে জয়লাভ করে মহাজোট সরকার গঠণ করে।সেই থেকে আওয়ামীলীগের সাথে জাতীয় পার্টির ঘনিষ্ঠতা আরও বৃদ্ধিপায়।এর দু'এক বছর পরেই আওয়ামীলীগের মূল দলের সাথে জাতীয় পার্টির অনেক নেতা সংপৃক্ত হয়,এমনকি কিছু জাতীয় পার্টির নেতা,আওয়ামীলীগ নেতা রুপে পূর্ণজন্মগ্রহণ করেন।সেই থেকে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামীলীগ মিলে একাকার হয়ে দেশ পরিচালনা করছে।আওয়ামীলীগ সেটা বুঝতে পেরেছে যখন বিএনপির কিছু নেতা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কমিটিতে স্থান পায় তখন।তাই সে সময় "কাউয়া লীগ" নামের উদ্ভব হয়।যা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান।কিন্তু আমার আশংঙ্কা হচ্ছে আবার যখন রাজনৈতিক দ্বন্দ শুরু হলে জাতীয় পার্টি বা অন্য দলের সাবেক নেতারা যারা আওয়ামীলীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছিল তারা তখন আওয়ামীলীগের পক্ষে থাকবে তো?
এভাবে অন্য দলীয় নেতার আওয়ামীলীগে অন্তভূক্তি চলতে থাকলে সাধারণভাবে আওয়ামীলীগের সহযোগি অন্যান্য সংগঠনেও এ অন্তভূক্ত চলতে থাকবে।এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ ছাত্রলীগের ১৯ তম জাতীয় সম্মেলনে,ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটিতে অন্তভূক্তি করার অভিযোগ।এখন কথা হচ্ছে যখন রাজনৈতিক দ্বন্দ সৃষ্টিহবে তখন এসব ছাত্রনেতা আওয়ামীলীগের পক্ষে না বিপক্ষে অবস্থান নিবে? সেটাই দেখার বিষয়।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামীলীগ সরকার রাজনৈতিক নিয়োগের জন্য সমালোচিত হতে থাকে।প্রশাসন সহ বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থির নিয়োগ লাভের মাধ্যমে রাজনৈতিক নিয়োগের হিড়িক পরে যায়।কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচন,২০১৪ এর ৫ ই জানুয়ারী নির্বাচনের পর,আওয়ামীলীগ কিছুটা উদারতার পরিচয় দেয়।এরফলে অন্য দলের বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পান।তবে ২০১৭-১৮ তে এসে মহাজোট তথা আওয়ামীলীগ সরকার মোটামুটি ভাবে আওয়ামী রাজনৈতিক নিয়োগ বন্ধকরে দেয়।এর ফলে অন্যদলীয় প্রার্থিদের রুদ্ধ দরজা খুলে যায়।আর এদিকে বাড়তে থাকে নিয়োগ বানিজ্য!নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমে দল-মত বিচার না করে এমনকি শিবির কর্মিদেরও সরকারি চাকরিতে সুযোগ দিচ্ছে।সামনের নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগের হয়তো এমন ইউর্টান পরিবর্তন।নয়তো আওয়ামীলীগ মনেকরছে,তাদের দলীয় কর্মিদের চাকরি দিলে হয়তো তাদের পিছনে দালালি করার লোক আর পাওয়া যাবেনা। নয়তো তারা নির্বাচনি খরচ যোগার করতে নিয়োগ বানিজ্যের অশ্রয় নিচ্ছেন।এখানে একটা কথা অবশ্যই বলতে হয়,যারা আওয়ামীলীগ চাকরি প্রর্থি তারাও কিন্তু নিয়োগ পেতে টাকা দিতে চাইছে,কিন্তু যারা নিয়োগ বানিজ্য করছে তাদের দাবির চাইতে কম।এরও অবশ্য একটা কারন আছে,যারা আওয়ামীলীগ করে তাদের দাবি হচ্ছে,আমরা তো আওয়ামীলীগ করি,আমরা কেন এতোটাকা দিয়ে চাকরি নিতে যাবো? অপর পক্ষে অন্যদলের সমর্থকরা মনে করছে,এ সরকারের আমলেতো সরকারি চাকরি না হওয়াটাই স্বাভাবিক,তাই যত টাকাই লাগুক চাকরি নিতেই হবে।তাই তো একটা চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির জন্য তারা ২০লক্ষ পর্যন্ত দিতেও প্রস্তুত।সেখানে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থি ৫ লক্ষ দিতেও চাইছেনা। আর যারা নিয়োগ বানিজ্য করে তাদের মূল উদ্দেশ্যই হলো বানিজ্য করা,যেখানে তাদের বানিজ্য হবে স্বাভাবতই তারা সেখানেই থাকবেন।সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ কনেষ্টবল সহ বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে অন্যদলীয়,এমন কি শিবিরের অনেক নেতা সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছেন,অথচ দেখেছি এরাই বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধীরর ফাঁসির পর দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে।অথচ এরাই আজ বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য।এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোন সভাস্থলে যদি ঐ সব পুলিচ সদস্যের দায়িত্ব দেয়াহয়।আর যদি ২১ সে অগাষ্টের মত বোমা হামলা হয় তখন ঐ পুলিশ সদস্যের ভূমিকা কি হবে?সেটাই দেখার আপেক্ষায় রইলাম।যদি হয়তো বা যুদ্ধাপরাধী সাইদীকে ঐ সব পুলিশ সদস্যের হেফাজতে দেয়াহয়,তখন তারা সাইদীকে দেশছেড়ে পালাতে সাহায্য করবেনাতো?এদের যদি রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়াহয় তারা,জাফর ইকবালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যের মতো মোবাইলে ব্যস্ত না থাকবে তার নিশ্চয়তা কে দিবে?আওয়ামীলীগের সাথে বিভিন্ন দলের সংঘর্সে এসব সদস্যের দাড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা।আওয়ামীলীগের এমন নিয়োগ বানিজ্যের কারনেই,নাসির নগড়,রংপূর,রামু এমনকি বিভিন্ন বিদেশী নাগরিক ও ব্লগার হত্যা এবং নিরহ ধর্মজাজকে খুন হতে হয়েছে।আর সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নিয়োগ বানিজ্যের সুবিধাভুগি কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারির অলসতার কারনেই গুলশান হলি আর্টজেন ঘটনার সূত্রপাত।এরাই একসময় আওয়ামীলীগকে গ্রাস করে ফেলবে।নিয়োগ বিনিজ্যের ফলে নিয়োগ বঞ্চিত আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থিরা দাড়ীয়ে দাড়ীয়ে দেখা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা।

2 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন