নারীবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ

সাম্প্রতি পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই নারী সমাজ জেগে উঠেছে।নারীদের এই জাগরন বা উদ্ভব আক্রর্শিক কোন বিষয় নয় বরং পৃথিবী সৃষ্টির কাল থেকেই নারী সমাজতাদের যোগ্যতা ও অবদান রাখছেন।উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,চাপাই নবাবগঞ্জের নাচোলের কৃষক বিদ্রোহে ইলামিত্র নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।কামিনী রায়। 'ইলবাট বিল' আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে।মাতাঙ্গিনী হাজরা ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে মৃত্যুবরণ করেন।চট্টগ্রাম সূর্যসেনের বিপ্লবি দলে যোগ দেয় প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও কল্পনা দত্ত।অসহযোগ আন্দোলনে 'বাসন্তী দেবী'কারাবরণ করেন।মাদার কুরী নামে এক নারী পদার্থ বিজ্ঞানী দু'বার নোবেল বিজয়ী হয়।সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্র প্রতিষ্ঠায় একদশকের আধিক গৃহবন্দি ছিলেন অং সাং সূচী।তবে নারীবাদের উদ্ভব হয় ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে।
"বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,অর্ধেক তার নর"সাম্যের পূজারী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মহান বাণী দ্বারা বুঝাযায় নারীরা কোন অংশে পুরুষ থেকে কাম নয়।


নারীবাদ(Feminism)-
নারী-পুরুষ সম্মিলিত ভাবেই মানবজাজি।সভ্যতার অগ্রগতিতে নারী ও পুরুষ উভয়েরই সমান অবদান রয়েছে।আদি কাল থেকে নারীরা শোষিত হয়ে আসছে। শোষিত হতে হতে এই অবস্থাকে নারীরা স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছে।পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষের ভূমিকা ও অবদান সম্পর্কে যতোটা জানা যায়,নারীর অবদান ও ভূমিকা সম্পর্কে ততোটা জানা যায় না।কেননা পুরুষতন্ত্র তার নিজের অবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই নারীকে সর্বদা অধস্তন করে রাখে।অথচ নারী সুপ্রাচীন কাল থেকেই পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে।নারীবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশে নারীদের সমাজ গঠনে ভূমিকা,তাদের পশ্চাৎপদের কারন,কী ভাবে নারী-পুরুষের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন করে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
জ্ঞানের প্রতিটি শাখার তাত্ত্বিক ভিত্তি থাকে।নারী বিষয়ক অধ্যয়ন ও গবেষণার তাত্ত্বিক ভিত্তি হলো নারীবাদ।ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে নারীবাদের উদ্ভব হয়।নারীর অধিকার তথা নারী মুক্তির আন্দোলনে যারা অবদান রেখেছেন তাদের নারীবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করাহয় এবং নারীর প্রতি বৈষম্য শোষণের বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতনতাকে বলা হয় নারীবাদ।নারীবাদ অবশ্যম্মভাবীরুপে একটি যুগোপোযুগী দর্শন।নারীবাদ হচ্ছে জ্ঞান,চিন্তা ও মতামতের একটি সমষ্টি যা নারীবাদী পন্ডিত,চিন্তাবিদ ও লেখকদের দ্বারা তৈরি।
নারীবাদের অর্থ ও সংজ্ঞাঃ
নারীবাদে কোনও একক তাত্ত্বিক কাঠামো থেকে এর তত্ত্বগত ও ধারণাগত ভিত্তি লাভ করেনি।এ ক্ষেত্রে একক কোনও ব্যক্তিও নেই,যিনি আমাদের সকলের জন্য এবং সকল সময়ের জন্য নারীবাদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।সে কারণে নারীবাদের এমন কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই,যা সকল নারীর জন্য প্রযোজ্য।নারীবাদের যে সংজ্ঞার্থ দেয়া হয়,তা পরিবর্তত হতে পারে।
নারীবাদের ইংরেজী প্রতিশব্দ হচ্ছে 'Feminism'। ইংরেজী ' Feminism'শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ ''Femme'।  থেকে যায় অর্থ (women)  নারী।এই 'Femme' থেকে 'ISM' বা বাদ কথাটি সংযুক্ত হয়ে,Feminism'  বা 'নারীবাদ' এ রুপালাভ করেছে।উনবিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে ফরাসি সমাজতান্তী চার্লস ফুরিয়ার (Charles Fourier) সর্বপ্রথম  'Feminism'  শব্দটি আবিস্কার করেন।তবে ঊনবিশ শতাব্দীর ৮০ দশকে 'ফ্রেঞ্জ উইমেন্স সাফ্রেজ সোসাইটি'। ও প্রতিষ্ঠাতা হুবারটিন অকলার্ট 'নারাবাদ' কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন।তবে বলা যায়,১৮৮০-এর দশকে ফ্রান্সে 'নারীবাদ' শব্দটি ব্যবহার শুরু হয়।
একথায়,নারীবাদ শব্দটি অর্থ হচ্ছে নারী সম্মন্ধনীয় মতবাদ।আবিধানিক অর্থে,নারীবাদ হচ্ছে একটি আন্দোলন,যা কিনা পুরুষের মতো একজন মানুষ হিসেবে নারীর পূর্ণ অধিকার দাবি করে।সুতরাং বলা যায়,নারীবাদ হচ্ছে এমন একটি তাত্ত্বিক কাঠামো ও প্রয়াগিক প্রয়াস,যা নারী সমাজের উপর পুরুষতান্ত্রীক সমাজের বহুমাত্রিক নির্যাতন,এর কারণ,ফলাফল এবং নারী মুক্তির ব্যবস্থাপত্র প্রদান থাকে।


নারীবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ
নারীবাদেরর সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।তবে কোথায়,কখন,কে নারীর প্রতি বৈষম্য এবং নারী-পরুষ সমানাধিকারের প্রশ্ন প্রথম উস্থাপন করেছিলেন,সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।ফরাসি গবেষক,লেখক ও বুদ্ধিজীবি সিমন দ্য বুভোয়ার (Simone de Beauvoir)  এর মতে,যে মহিলা নারীর স্বপক্ষে প্রথম কলম তুলে ধরেছিলেন তার নাম খ্রিষ্টিন ডি পিজান (Christine de Pusan)।১৯৬২ সালে ওলান্দাজ নারী মার্গারেট লকাস রচিত   'Female Orations)' বা নারী ভাষণ বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম 'নারীবাদী সাহিত্য' হিসেবে পরিচিত হয়।সেখানে নারীর পরাধিনতা ও অসম অধিকারের বিষয়টি বিধৃত হয়েছে।এছাড়া নারীবাদের ইতিহাসে প্রথম নারীবাদী হিসেবে যায় নাম পাওয়া যায়,তিনি হলেন সপ্তদশ শতাব্দির ফরাসি নারী পলেইন ডি লাব্যারে।সে সময়েই তিনি লিখেছিলেন,"পুরুষ কর্তৃক নারী সম্পর্কে যা কিছু লেখা হয়েছে,তার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতে হয়।কারন এক্ষেত্রে পুরুষ একই সাথে অভিযুক্ত ও বিচারকের আসনে আসীন"নারীবাদের উদ্ভব হয়েছিল ইউরোপ ও আমেরিকা উদার ও গনতান্ত্রীক সহরাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যদিয়ে।মূলত পাশ্চাত্যের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গনতন্ত্রের মধ্যে নারীবাদের মূল প্রেরোণা নিহিত।নারীবাদী বিভিন্ন আন্দোলন মূলত এসব তত্ত্বকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয়েছে।নারীবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশকে নিম্নোক্ত দু'টি পর্যায়ে বা স্তরে বিভক্ত করে আলোচনা করা হলল-


নারীবাদের উদ্ভবের প্রথম পর্যায়পর্যায়
অষ্টাদশ শতাব্দির ৭০এর দশক থেকে শুরু হয় নারীবাদ উদ্ভবের প্রথম পর্যায়।মূলত ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই আমেরিকায় "স্বাধীণতার ঘোষণাপত্র"প্রণীত হলে এবং ১৭৮৭ সালে মার্কিন সংবিধান গৃহিত হলে,সে সময় থেকে নারীরা সমানাধিকারের দাবি জানাতে থাকেন এরপর ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ'সাম্য,মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্ব (Liberty,Equality and Fraternity) এই মহান বাণী নারীর অধিকারকে সামনে নিয়ে আসে।কেননা এই বাণী কেবল পুরুষদেও ক্ষেত্রেই প্রযজ্য হয়।তাই তখন নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য তথা স্বীয় ভোটাধিকার লাভের জন্য আন্দোলনে যেতে হয় নারীকে।১৭৯০ সালে ফ্রান্সে পুরুষের পাশাপাশি নারী অধিকারের পক্ষে'Declaration of the Rights of Women and the Female Citizen's  গ্রন্থটি রচনা করেন অলিম্প ডি গুৎজ(Olympe De Gouges)।তিনি প্রশ্ন উস্থাপন করেন,"নারীদের যদি ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়ার অধিকার থাকে,তবে পার্লামেন্টে যাওয়ার অধিকার থাকবে না কেন?"তবে সত্যিকারের নারীবাদী কন্ঠ শোনা যায় ইংরেজ লেখিকা মেরী ওলস্টোনক্রাফট(Mary Wollstonecraft)এর যুগান্তকারী গ্রন্থে 'A Vindication of the Rights of Women' প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে।এ গ্রন্থটি নারীবাদী চিন্তার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে।মেরীর পরে নারীর অধিকারের দাবি শিধুমাত্র রচনা- গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি,নারী আন্দোলনে রুপ নেয়।একাধিক নারী সক্রিয় আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং নারীবাদী হিসেবে সক্রিয়ভাবে চিহ্নিত হন।
ঊনবিংশ শতাব্দীর ৩০-এর দশক থেকে নারীবাদী আন্দোলন দানা বাধঁতে থাকে।এ দশকে মার্কিন নারীর দাস প্রথা ও মদ্যপান বিলোপ আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করে।এ সময় নারীর জনসভায় ভাষণ দেয়ার মাধ্যমে নিজেদের অধিকার সম্মন্ধীয় মতাদর্শ প্রচার করতে থাকেন।এর ফলে ১৮৪০ সাল থেকে নারীবাদী চেতনা আরো বিকাশিত হয়।তৎকালীন সময়ে  সকল নারী মার্কিন নারীবাদী  হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
১৮৪৮ ঊনবিংশ শতাব্দির ১৯-২০ জুলাই টলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যানটন ও লুক্রেশিয়া মট এর উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেকা ফলস( Seneca Falls) নামক শহরে নারী অধিকার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।এটি ছিল বিশ্বের প্রথম নারীর অধিকার বিষয়ক সম্মেলন।ঐ সম্মেলনে ২০০ নারী কর্মী যোগদান করেন।এরপর ঊনবিংশ শতাব্দির ৫০ও ৬০ এর দশকে যে দু'জন দার্শনিক নারীর অর্থনৈতিক ও রাকনৈতিক অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন,তাদের মধ্যে জন স্টুয়ার্ট মিল( John Stuart Mill)এবং হ্যারিয়েট টেইলর মিল(Harriet Taylor Mill)বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য
হ্যারিয়েট টেইলার মিল ১৮৫১ সালে তার" Enfranchisenet of Woman" গ্রন্থ প্রকাশ করেন।তিনি ইংরেজ নারীর পূর্ণ আইনগত ও রাজনৈতিক নাগরিকত্বের জন্য সংগ্রাম করেন।১৮৫৮ সালে তার মৃত্যু হলে,তার স্বামী জন স্টুয়ার্ট মিল ১৮৬৫ সালে পার্লমেন্টে নারীর ভোটাধিকারের জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করেন।তিনি তার গ্রন্থে কর্মক্ষেত্রে নারীর মানবাধিকার,শিক্ষা ও সম্পত্তির সমান অংশিদারিত্ব এবং ভোটাধিকারের প্রসঙ্গগুলোকে পূর্ণ সমর্থন দেন।১৮৬০ সালে ৮ মার্চ কারখানার নারী  শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সমর্থন হন।উল্লেখ্য এ আন্দোনের কারনেই ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে।ফ্রান্সে ১৮৭১ সালে শ্রমজীবী জনগণের প্রথম কমিউনিষ্ট সমাজ নির্মাণের মহৎ প্রচেষ্টা'প্যারিকমিউন'এ হাজার হাজার শ্রমজীবী নারীর অংশগ্রহণ নারীবাদকে নতুন মাত্রার উন্নীত করে।নারীবাদ সময়ের সাথে সাথে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।এর মধ্যে নারীর ভোটাধিকারের ব্যাপারটি ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।ঊনবিংশ শতাব্দির শেষের দিক ইংল্যান্ড ও আমেরিকায়' ভোটাধিকার দাবি'নারী আন্দোলনের প্রধান দাবিতে পরিনত হয়।


নারীবাদের বিভিন্ন ধারাঃ
বিশ্ব নারীর আর্থ-সামাজিক সংগ্রামের পাশাপাশি নারীকে রাষ্ট্রের,সমাজের ও ব্যক্তি জীবনের ভারসাম্যমূলক অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তাত্ত্বিক মতবাদ প্রদান করেছেন।নারীবাদী মতবাদগুলো হলোঃ উদারনৈতিক নারীবাদ,র্যাডিকাল নারীবাদ বা আমূল নারীবাদ,মার্কসীয় নারীবাদ,সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ,অস্তিত্ববাদী নারীবাদ,উত্তর আধুনিক নারীবাদ,পরিবেশ নারীবাদ,সংস্কৃতিক নারীবাদ এবং বৈশ্বিক নারীবাদ।
উদার নারীবাদঃ উদার নারীবাদ নারীবাদের সবচেয়ে প্রাচিন মতবাদ যা উদারতাবাদ নামক রাজনৈতিক চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত।এই মতবাদে ব্যাক্তি বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী হিসেবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে আগ্রহী এবং সে তার উদ্দেশ্য সাধনে সক্ষম।উদারনীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সকল প্রকার বাধা দূর করে নারী স্বাধীণভাবে যেন সকল কাজ করতে পারে তার উপযুক্ত ব্যবস্থা করাই উদার নারীবাদের লক্ষ।ফরাসী বিপ্লবের মহান বাণী-সাম্য,মৈত্রী ও স্বাধীণতা দ্বারা এই মতবাদ প্রভাবিত যা নারীর অধিকার দেয়।কেননা সমাজ কাঠামোতে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার জন্য নারী ও পুরুষের সমান অধিকার অর্জন করা প্রয়োজন।উদার নারীবাদের মধ্যে মেরী ওলস্টোন ক্রাফট,জন স্টুয়ার্ট মিল,হ্যারিয়েট টেইলর,বেটি ফ্রিডান,রাজা রামমোহন রায়,ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
মার্কসবাদী নারীবাদঃ মার্কসবাদী মতাদর্শ হলো মার্কসীয় নারীবাদের ভিত্তি,যা ব্যাক্তিমালিকানাভিত্তিক শ্রেণীবিভক্ত সমাজকেই নারাীর পারধীনতার মূল কারণ রুপে চিহ্নিত করে।এই নারীবাদ দেখায় যে, নারীর দাসত্ব সূচিত হয়েছে দাসপ্রথার পূর্বে।মার্কসীয় নারীবা মনে করে যে,আজকে নারীদের যে বন্দিদশা নক্ষণীয় তা একদিনে হয়নি বরং এক ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতার ফসল।সর্বপ্রথম যেদিন পুঁজিবাদের উত্থান হয়েছে তখন থেকেই নারীদের অধস্থনতা শুরু হয়েছে।মার্কসীয় নারীবাদ মনে করে ব্যক্তিগত মালিকানাভিত্তিক সমাজে পরিবার হলো নারীর জন্য এক কারাগার।নারীর।পরাধীনতার মূল কারন নিহিত রয়েছে নারীকে সামাজিক উৎপাদনের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে তাকে ঘরকণ্যার কাজের মধ্যে আবদ্ধ করে সামাজিক,রাজনৈতিক,সবদিক পরাধীন করে রাখার মধ্যে।তাই নারীমুক্তির অত্যাবশ্যকীয় পূর্বশর্ত হলো সবগ্র নারীসমাজকে আবার সামাজিক উৎপাদনের মধ্যে নিয়ে আসা।মার্কসীয় নারীবাদীদের কাছে নারীমুক্তি আন্দোলন পুরুষের বিরুদ্ধে নয়,পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এবং পুরুষতান্ত্রীক পুঁজিবাদী সামাজিক সম্পর্কের বিরুদ্ধে।সমাজের উৎপাদন ক্ষমতা যাদের হাতে কুক্ষিগত স্বাভাবতই তারা অন্য শ্রেণীকে অবদমিত করে নিজের ইচ্ছে অনিযায়ী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।তাই নারী মুক্তির লক্ষ্যে নারীদেরকে সমাজতান্ত্রীক আন্দোলনের সাথে সম্পৃত্ত হতে হবে এবং সর্বহারার বিপ্লবের মাধ্যমে পুঁজিবাদের ভিত্তিমূলল আঘাত করে সুষম সমাজব্যবস্থা তৈরিতে মনোনিবেশ করতে হবে।
আমূল বা র্যাডিক্যাল নারীবাদঃ বিংশ শতাব্দির ৬০-এর দশকে এই নারীবাদী ধারার উদ্ভব ঘটে পাশ্চাত্যে।রেডিক্যাল নারীবাদ নারীর পুনঃউৎপাদন বা প্রজনজমূলক ভূমিকা এবং এর বিস্তৃতস্বরুপ সন্তান লালন-পালন ও সাংসারিক কর্মকান্ডে আবদ্ধ থাকাটাকেই নারীর অধস্তনতার মূল কারন রুপে বিবেচনা করে।বিশ্বাস করে যে উৎপাদন ব্যবস্থা বা সামাজিকাঠামো নয়,নারী ও পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য তাদের শারীরিক বাস্তবতা থেকে উদ্ভব।রেডিক্যাল নারীবাদের মতে মাতৃত্ব দায়গ্রহণ করার দরুন নারীরা পুরুষের অধিনতা স্বিকার করতে বাধ্য হয় র্যাডিক্যাল নারীবাদেও একটি ধারা আবার মনে করে যে নারীকে যৌন সামগ্রী হিসেবে পুরুষ 'যৌন রাজনীতির' মাধ্যমে যে শোষণ চালায় তার আমূল বিলোপ সাধনই নারীমুক্তির মূল কথা।এই সমকামিতে বিশ্বাসী এবং মাতৃতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন লালন করে,যা বর্তমান পরিবারের বিলুপ্তি ঘটবে।এসব কারণে এই ধারাকে অনেক উগ্র নারীবাদ বলে চিহ্নিত করে থাকে।
সমাজতান্ত্রীক নারীবাদঃ র্যাডিকাল এবং মার্কসীয় নারীবাদের এক ধরনের মিলিত রুপ হলো সমাজতান্ত্রীক নারীবাদ।এরা একদিকে সমাজ ও ইতিহাস ব্যাখ্যায় মার্কসবাদী পদ্ধতিকে গ্রহণ করে কিন্তু নারীমুক্তির বিষয়টিকে সর্বহারা বিপ্লবে অন্তর্গত করে একে কম গুরুত্বপূর্ণরুপে বিবেচনা করার বিরোধিতা করে।সামাজিক ও ঐতিহাসিক কাঠামোকে নারী নিপীড়নের মূল কারণস্বরুপ চিহ্নিত করা হয়।সবধরনের অন্যায় অবিচার দূর করার জন্য প্রয়োজন সমাজের সকল স্তরের নারীদের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগীতা।
পরিবেশ নারীবাদঃ পরিবেশ নারীবাদের মূল বক্তব্য হলো নারী ও প্রকৃতি উভয়েই পিতৃতান্ত্রীক কাঠামোর উপর নির্ভর করে অস্তিত্বশীল,যাদের শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই পিতৃতন্ত্র শোষণ করেছে।পরিবেশ নারীবাদীদের মতে পুরুষতন্ত্র তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজেকে ক্ষমতাবান ও আধিপত্যবাদী হিসেবে জাহির করে।ফলে পুরুষ পরিবেশের উপর তারা নানাবিধ আধিপত্যমূলক কর্মকান্ড চালায়।
নারী নির্যাতনঃ-নারী নির্যাতন বা নারীর প্রতি সহিংসতা আজ আর নতুন কোন শব্দ নয়।প্রাত্যাহিক জীনণে এর ভয়াবহ উপস্থিতি আমাদের জাগ্রত করে।দক্ষিন এশিয়ার প্রতি দু'জন নারীর একজন দৈন্দিন জীবনে সহিংসতার শিকার হন।তাই নারী নির্যাতণ বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে বহুল আলোচিত ইস্যু।পরিবার,সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীরা বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার।
নারীনির্যাতনের ধরনঃ নারীনির্যাতনের ধরন সর্বত্র এক নয়।কখনো মনস্তাত্ত্বিক,কখনো শারীরিক,কখনো আবার সামাজিক।ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে নারীনির্যাতনের ধরন পরিবর্তিত হয়।তথাপিও প্রতিটি সমাজেই এক্ষেত্রে কিছু সাধারন বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।নিম্নে নারীনির্যাতনের বিভিন্ন ধরন তুলে ধরা হলো-
(ক) যৌন নির্যাতন(Sexual Violent)
(খ) শারীরিক নির্যাতন(Physical Violence)
(গ) মানসিক নির্যাতন(Psychological Violence)
(ঘ) সামাজিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতন(Socio-Economic Violence)


যৌন নির্যাতনঃ যৌন হয়রানি,ধর্ষণ,পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা,যৌন দাসত্ব সবেই যৌন নির্যাতনের আওতায় পড়ে।সাধারনত যৌন নির্যাতন বলতে নারীর শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গে আঘাত বা আক্রমণ করা থেকে শুরু করে জোর পূর্বক যৌনাচারকে বুঝান হয়।যৌন হয়রানি যৌন নির্যাতনের একটি রুপ।তবে কেউ কেউ নিম্নলিখিত ৩ টি শর্তের মাধ্যমে যৌন হয়রানিকে চিহ্নিত করেছেন।
১।কাজটি অযাচিত,অশোভন আথবা অপমানকর।
২।আচরণরটি গ্রহণ বা বর্জন চাকরিকে প্রভাবিত করে।
৩।আাচরনটি ঐ ব্যক্তির জন্য কর্মক্ষেত্রে একধরনের ভীতিকর,বৈরী ও বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
ধর্ষণ নারীনির্যাতনের একটি জঘন্যতম ধরন।ধর্ষণের ফলে একটি মেয়ের জীবনে সকল কামনা- বাসনার মৃত্যু ঘট এবং জীবন সম্পর্কিত চেতনা হারিয়ে যায়।
শারীরিক নির্যাতনঃ স্ত্রী পেটানো,হত্যা,এডিড নিক্ষেপ,অগ্নীদদ্ধ,গর্ভপাতে বাধ্য করানো এসবেই শারীরিক নির্যাতনের পর্যায়ে পরে।নারীনির্যাতনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারন রুপটি হচ্ছে শারীরিক নির্যাতন।শারীরিক নির্যাতন এমন সব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে,যা নারীর শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর।আমাদের দেশে শারীরিক নির্যাতেনের ক্ষেত্রে স্বামী কৃর্তক স্ত্রী শারীরিকভাবে নির্যাতনের স্বিকার হয়।বউ পেটানো আমাদের সমাজে একটি সাধারন ঘটনা।দরিদ্র পরিবারে এ প্রবণতা বেশি হলেও মধ্যবিত্ত বা ধনী পরিবারে বউ পেটানোর প্রবণতা দেখা যায়।বউ পেটানোর মাধ্যমে স্বামীরা তাদের পুরুষত্ব জাহির করে এবং নারীর উপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং তা ধরে রেখে।যে নারীর সন্তান জন্মদানের ক্ষমাতা নেই বা দেরিতে সন্তান জন্ম হচ্ছে সমাজে তাকে,অপায়া,খারপ,অশুভকর মনে করা হয়।এ অবস্থায় শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ঘৃণ্য নৃশংসতম নারীনির্যাতন হচ্ছে এসিড নিক্ষেপ।বেশিভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যৌতুকের দাবি,প্রেম প্রত্যাখ্যান,পারিবারিক শত্রুতা,ব্যক্তিগত আক্রোশে,জমিজমা নিয়ে বিরোধ ইত্যাদি কারণে এসিড নিক্ষেপ করা হয়।বাংলাদেশে এসিড সন্ত্রাসের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হলেও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা কমছে না,বরং তা বেড়েই চলছে।
মানসিক নির্যাতনঃ মানসিক নির্যাতন নারীর জীবনে শারীরিক নির্যাতনের চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলে।নারীনির্যাতনের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে মানসিক নির্যাতন অন্যতম।মানসিক নির্যাতনের মধ্যে হুমকি প্রদান,বিদ্রুপ,ইভটিজিং,অন্যের সামনে অপমান,ব্লাকমেইলিং,কুৎসা রটনা অন্যতম।মানসিক নির্যাতনের ফলে নারী প্রতিবন্ধী,মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পরে।মানসিক নির্যাতনের প্রকপ এতটাই প্রবল যে,নারীরা বাধ্য হয়ে আত্নহত্যার মত কঠিন পথ বেছে নেয়।নারী মানসিক নির্যাতনের ধরনের মধ্যে স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে কথা বলা,স্ত্রীর অতীত প্রসঙ্গে কথা বলা,স্ত্রীর আত্নীয়- স্বজনের সাথে খারাপ ব্যবহার করা,অপরের স্ত্রীর প্রতি আসক্তি প্রকাশ করা,স্ত্রীর রুপ-সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলা ইত্যাদি।এমনকি নিজের কাছে সন্তান রেখে তালাক দেয়া।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনঃনির্যাতনঃ বিশ্বের অধিকাংশ নারীরাই সামাজিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।এক্ষেত্রে উন্নত বা অনুন্নত দেশভেদে তেমন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না।সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে নির্যাতনের ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য,স্বাস্থসেবা প্রদানে বৈষম্য,নিরক্ষতা,অপুষ্টি,ফতোয়া,বাল্যবিবাহ,নারী ও শিশু পাচার,রাষ্ট্রীয় নির্যাতন,জোরপূর্বক বিয়ে,পর্দাপ্রথা অন্যতম।
পুরুষাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক শোষণ নারীনির্যাতনের অন্যতম একটি ধরন।নারীরা অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল।কেননা সমাজের নিয়মনুযায়ী পুরুষরাই উপার্জন করে থাকে।আর দরিদ্র দেশের নারীরা আরো বেশি দরিদ্র হয়ে পরছে।ফলে তারা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়।নারীনির্যাতনের আর একটি উল্লেখযোগ্য ধরন হচ্ছে ফতোয়া।গ্রামের সালিশে স্থানিয় সমজিদের ইমাম বা মৌলভী কর্তৃক ফতোয়া জারি করা হয়।ফতোয়া শব্দটি এসেছে আরবি ভাষা থেকে,যার আক্ষরিক অর্থ হলো 'আইন বিষয়ক মত'।বর্তমান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটের এক রায়ের মাধ্যমে ফতোয়াকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে নারী আন্দোলন(Feminist Movement in Bangladesh)
একটি রাষ্ট্রের কতটুকু উন্নয়ন সাধিত হয়েছে ত জানা যায় উক্ত রাষ্ট্র বা সমাজব্যবস্থায় নারী- পুরুষেরর জীবনযাত্রার মান,তাদের অবস্থান,অধিকার,অর্জন ও স্বীকৃতিসহ নানাবিধ বিষয় দ্বারা।বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।আধুনিক সমাজকে বলাহয় সুসভ্য সমাজ।সভ্য সমাজে নারী-পুরুষের কোন বৈষম্য বা ভেদাভেদ থাকার কথা নয়।একটি দেশের সমাজ ব্যবস্থায় নারী- পুরুষের সম্পর্কের ধরনেরর উপর নির্ভর করে দেশের অগ্রগতি।তেমনি নারী পুরুষের সম্পর্কের ধরনের মাধ্যমে ফুটে উঠবে বাংলাদেশের সমাজের নারী পুরুষের অবস্থান।
নারী আন্দোলন,১৯৭২-বর্তমানঃ স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদোশের জাতীয় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমশই বৃদ্ধি পেতে থাকে।বিশেষত নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সক্রিয়ভাবে জয়িড়ে পড়েন।স্বাধীনতারপরবর্তী ১৯৭২ সালেরর মূল সংবিধানে নারী-পুরুষেরর সমানাধিকারের কথা বলা থাকায়,নারীর অবস্থানের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে এবং রাজনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।১৯৭৫ সালে 'নারী পুর্নবাসন ও কল্যান ফাউন্ডেশন'গঠিত হয়।১৯৭৬ সালের সরকার 'বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা সংস্থা'(Bangladesh Jatiya Manila SANGSTHA-BJMS)গঠন করে।১৯৮২ সালে নারী উন্নয়ন এজেন্ডা নিয়ে 'মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়' প্রতিষ্ঠা লাভ করে।


বাংলাদেশের নারী ও সমাজঃ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী।যেহেতু বাংলাদেশ গ্রাম প্রধান দেশ সেহেতু অধিকাংশ নারীর বাসই গ্রামে আর গ্রামে বসবাস করার কারনে নারী সামাজিক রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক দিক সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পশ্চাদপদ অবস্থানে রয়েছে এর ফলে নারীর জীবন নিয়ন্ত্রিত হয় পুরুষ দ্বারা এবং এর ফলে সমাজ হয় ভারসাম্যহীন এবং অসমতাপূর্ণ।সাধারণত এদেশের নারীরা গৃহস্থালীর কাজ করে থাকে।গৃহস্থালীর কাজ করা,সন্তান জন্মদান,লালন পালনই তার মূল কাজ বলে সমাজে গন্য করা হয়য়।যেহেতু পুরুষ অর্থের যোগানদাতা তাই তার কর্মক্ষেত্র বাইরে।অন্যদিকে নারীর গৃহস্থলী কাজের কোন আর্থিক মূল্য না থাকায় তা মূলত কাজ বলে গণ্য নয় বিধায় নারীর পরিবারে পুরুষের সমান মর্যাদাবান নন।প্রকৃতপক্ষে অবদান এরুপভাবে উপস্থাপিত হয় যে সমাজে নারী প্রাণস্বরুপ হলেও তা স্বিকার করা হয় না।
প্রশাসনে নারীঃ বর্তমানে নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারটি প্রশাসনের সাথেই বেশি সম্পৃক্ত।অথচ বাংলাদেশে প্রশাসনের র্শীষ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ একেবারেই নগণ্য।যদিও সরকারি কর্মকর্তা বা সিভিল সার্ভিসে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী পুরুষ উভয়কেই একই মানের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় তারপরও নারীরা এ ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার।১৯৭৬ সালে সরকারি চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে যোগ্যতা অনুযায়ি সরকারি সকল পদে ১০ শতাংশ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত করে।২০০০ সালে প্রথম ১ জন নারীকে হাইকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ করা হয়।
প্রকৃত পক্ষেপক্ষে পিতৃতন্ত্র হল পুরুষ কর্তৃত্বের একটি নীতি,যে নীতি তার সামাজিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে নারীকে নিপীড়ন করে।বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীলদেশ,তাই উন্ময়নের চাকার গতি বেগবান করতে নারী ও পুরুষের মধ্য বিরাজমান বৈষম্য দূর করা অত্যাবশক।নারীবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ একটি তাত্ত্বিক বিষয়।যাায় মধ্যে ব্যক্তিগত মতামত ব্যক্ত করার খুব বেশি সুযোগ নেই।নারীর সমাজের অনিবার্য অংশ।সমাজে তাদের স্থান পুরোনের কোন বিকল্প নেই বা এমন ভাবনাও অবাস্তব।অথচ সমাজে সেই অপরিহার্য অর্ধাংশের অধিকার আজ প্রশ্নবিদ্ধ।নারীরাও মানুষ,তারা পুরুষদের থেকে  কোন অংশেই কম নয়।তাদের দক্ষতা,কর্মক্ষমতা ও মেধা দ্বারা তার প্রমান দিয়েই চলছে।পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী।এই নারীকে উন্নয়নে সম্পৃক্ত না করে কোন জাতি উন্নতির ধারের কাছেও পৌছাতে পারে না।প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ও ভাগ্য নির্ধারণী সিদ্ধান্তের পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ তথা পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র ও বিশ্ব পরিমন্ডলের সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ চুড়ান্তভাবেই অত্যাবশক।বর্তমানে নারী জাগরণ ও নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিার অভিযানে বিশ্বব্যাপি গুরুত্বসহকারে বিষয়টি বিবেচিত হচ্ছে।নারারা আজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের সমঅধিকারের দাবিতে সোচ্চার।
♦১৫/০৫/২০১৪ ইং

3 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন