রুটি নিয়ে লুটামি

আজ থেকে কয়েক বছর আগের ঘটনা। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এক মঙ্গা পিরিতো এলাকা, সে সময় বাংলা আশ্বিন - কার্তিক মাসে প্রচুর অভাব থাকতো। একারনে সেখানে একটি প্রবাদ বহুল প্রচারিত আছে,হাতি ঠেলা যায় কিন্তু কার্তিক ঠেলা যায়না। ঠিক সে সময়েরই ঘটনা। কার্তিক মাসে যেহেতু প্রচুর অভাব লেগেথাকে। সেহেতু ঐ মাসে অনেকে।খেয়ে না খেয়ে দিন জাপন করতে হয়। কিন্তু অভাব যখন ঘরে এসে দাড়ায় ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়। অবস্থা। অভাবের কারনে প্রায় প্রতিটি পরিবারে অশান্তি নিত্যদিনের সঙ্গি হয়েই থাকতো। তা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ির মতো চরম পর্যায়ে পৌছে যায়। তেমনি এক কার্তিক মাসে রহমতের মা বাবার সাথে ঝগড়া করে বাপের বাড়ী চলে যায়। এতেকরে রহমতের বাবা খুবেই অসুবিধার পরে। একেতো অভাবি সংসার তার উপর কার্তিক মাস, এমনিতেই কামাই রোজগার নাই তার উপর নিজ হাতেই রান্না করে সন্তানদের খাওয়াতে হয়। তিন বেলাতো ভাত জোটেই না তার উপর কোন কোন বেলা না খেয়েই কাটাতে হয়। কোন কোন দিন একবারের জন্যেও ভাত জোটে না। দিনের বেশিভাগ সময় গমের রুটি না হয় আলু সেদ্ধ খেয়েই দিনপার করতে হয়। সেটাও রহমতের বাবা অনেক কষ্টে জোগার করে বাড়ীতে এনে নিজ হাতে তৌরি করে সন্তানদের মুখে তুলেদেয়। সেদিন ঘরবাড়ী ঠিক করার জন্য রহমতের বাবা কয়েক জন কামলা নেয়। যেহেতু অভাবের সময় ছিল সেহেতু কামলার দাম কিছুটা কমে যায়। সে সময় বেলা গমের রুটি খাওয়ানোর পর দিনের ষেশে আধা কেজি চাউল দিলেই কামলার অভাব হয় না সেদিন রহমতের বাবা দুজন কামলা নেয়, সেই সাথে নিজেও তাদের সহয়তা করে। কামলা দুজন রহমতের বাবার কাছে দুপুর বেলা রুটি খাওয়ার আবদার করে। সেটা রহমতের বাবা না রেখে পারেনি। রহমতকে ত্রিশ টাকা দিয়ে বাজার থেকে আট টাকা দরে তিন কেজি গমের আটা আনতে পাঠালো। কিন্তু সমস্যা হলো রহমতের মাতো বাড়ীতে নেই রুটি বানাবে কে?  রহমতের বাবা যদিও নিজেই বানাতে পরে, এমনকি রুটি বানিয়ে প্রায় সন্তানদের খাওয়ায়। তার পরেও কামলার চোখের সামনে রুটি বানালে ছোট হতে হবে, তাছাড়া তার বাবাতো কামলার সাথে কাজ করছে, এতে করে দু একটা কামলা কমও লাগতে পারে। এর পরেও মালিক সাথে থাকলে কামলারা অনেক কাজ করতে পারে। আটা এনে রহমতের বাবা মহা বিপদে পরলেন,না পরছে নিজে রুটি বানাতে না পরছে কামলাদের না খাওয়াতে, তারা খাওয়ার জন্য বাড়ীতে যাচ্ছে না। এদিকে আবার নিজের সন্তানদেরতো খাওয়াতে হবে।
কিছুদিন আগে রহমতের এক চাচার বিয়ে হয়। কোন উপায় না দেখে লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে রহমতের বাবা তার ঐ চাচিকে রুটি বানাতে বলে। নতুন বউ তাছাড়া বড় ভাসুরের কথা কৈউ কি ফেলাতে পারে। সব ঠিক ঠাক রুটি বানাতে যা কিছু লাগে সব কিছুই রহমত তার চাচিকে দিয়ে আসে। রহমতের চাচি রুটি বানাচ্ছে আর রহমত সেখানে বসে আছে। রহমত সেখানে থাকার কারনে তার চাচি অশস্তি বোধকরে। কিন্তু সেটা রহমতকে বুঝতে দেয় না।
এ কারনেই বারবার রহমতকে চাচি বিভিন্ন ওছিলায় বাইরে পাঠাচ্ছে। অশস্তি চরম পর্যায়ে পৌচ্ছালে এক সময় রান্না ঘরথেকে রহমতকে বাইরে বেরিয়ে যেতে বলে। সেটা রহমতের কাছে ভালমনে হয়নি। রহমত বুঝতে পেরেছে কিছুতো একটা গড়বর আছে। রহমত এটাও বুঝতে পেরেছে, যেহেতু সবারেই অভাব সেহেতু দুপরের খাবারটা রহমতদের রুটি দিয়েই সারতে চায় চাচিদের বাড়ীর সবাই। রহমত এও জানে এক কেজি গমের আটার কমকরে হলেও বারোটা রুটি হয়। রহমত তাই ভাবতে ভাবতে বাইরে বেড়িয়ে আসে। কিন্তু রহমত বাইরে এসে কিছুতেই থাকতে পরেনি। তার মনে সন্দেহোর তীর এসে দানাবাধে। তাই চুপিচুপি রহমত বান্না ঘরের বাইরের এককোনে সাবধানে দাড়িয়েথাকে, ঘটনা কি সেটা দেখার জন্য। কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর প্রতিবেশি এক চাচি আবার সেটা দেখে ফেলা! ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য রহমত আর্মিদের মতো রহমত মাটিতে দুটিয়ে পরে, যাতে ঐ প্রতিবেশি চাচি কিছু বুঝতে না পারে। সেটা যাই হোক রহমত যেটা দেখতে পেল তা ছোট রহমত নিজের ছোট চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনি। রহমত যেটা ধারনা করেছে ঠিক সেটাই হয়েছে। নিজেদের রুটি বানাচ্ছে আর লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ীর সবাইকে এক এক করে চুপি চুপি ডেকে এনে খাওয়াচ্ছে। অথচ এদিকে রহমত ও তার ছোট বোন দুটি খিদার কারনে কি না কি করছে। চাচির কাছে গিয়ে খেতে চাইলে, চাচি বলে বাড়ীতে নিয়েগিয়ে তারপর খাবি, হিসেবের রুটি
কমহলে তোর বাবা সন্দেহ করতে পারে। কখন সব রুটি বানা হবে তারই অপেক্ষায় খাকতে লাগলো। যখন তার চাচি রুটি এনেদিল তখন রহমত এক এক করে সব রুটি হিসাব করলো। রহমত দেখলো, তার মা যে এক কেজি আটার বারোটা রুটি তার চেয়ে তার চাচির রুটি অনেক পাতলা!  এমন কি তিন কেজি আটার মোটে মাত্র চব্বিশটি রুটি তাদের বাড়ীতে দিয়ে গেছে।


1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন